“গুণময় হইলেই মানে সব ঠাঁই
গুণহীনে সমাদর কোন খানে নাই”
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামটার মধ্যেই রয়েছে ভগবানের নাম। তিনি সত্যিই আমাদের কাছে ভগবান সমতুল্য।
চলুন আজ আমরা একটু অন্যভাবে বিদ্যাসাগরকে দেখি। সকলে তো বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় পড়ে আমরা বড় হয়েছি। কিন্তু জানেন কি এই বর্ণপরিচয় কোথায় লেখা হয়েছিল? এবং সেই জায়গার একটা ইতিহাস আছে আমরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লেখায় পাই এই জায়গার নাম কর্মা টা।বাঙালির উচ্চারণে এটির নাম কর্মা টা। তবে আসলে এর নাম কর্মা টাঁর।এই জায়গাটি ছিল সাঁওতাল প্রধান। অর্থাৎ কর্মা নামে এক সাঁওতাল মাঝির টাঁর। মানে উঁচু জায়গা যা কখনো ডোবেনা। তাদের সারল্যে মুগ্ধ হয়ে বিদ্যাসাগর বাকি জীবনটা সেখানেই কাটাবেন বলে ঠিক করেন তা অবশ্য হয়নি মাঝে মাঝে তাকে কলকাতায় আসতে হয়। মৃত্যুও হয় তার কলকাতা শহরে।
ভাই শম্ভু চন্দ্র স্মৃতিচারণ করেছেন, তিনি প্রাতঃকাল হইতে 10 ঘটিকা পর্যন্ত সাঁওতাল রোগীদের হোমিওপ্যাথিমতে চিকিৎসা করে দিতেন, এবং পথ্যের জন্য সাগু, বাতাসা নিজে প্রদান করিতেন। অপরাহ্ণে তাদের পর্ণকুটিরে যাইয়া তত্ত্বাবধান করতেন, তারা বলত তুই এসেছিস? তাহাদের কথা অগ্রজের বড় ভালো লাগিতো।
‘আমি দেশাচারের দাস নহি নিজের বা সমাজের মঙ্গলে নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বিবেচিত বোধ হইবে তাহা করিব,লোকের বা কুটুম্বের ভয় কদাচ সংকুচিত হইব না’
এখন এই জায়গাটির রেলস্টেশনের নাম বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতি ও পরিচয় স্টেশনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। হালে বিদ্যাসাগর স্টেশন ভরে উঠেছে ঈশ্বরচন্দ্রের জীবনের নানা পর্যায়ে রঙিন চিত্র দিয়ে । প্লাটফর্মে প্রাচীরের একের পর এক ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে। এই মনীষীকে কোথাও তিনি ছেলেবেলার কোথাও বা এখানকার আদিবাসীদের বন্ধু। একটি ছবিতে রয়েছে বর্ণপরিচয় প্রচ্ছদ।
ছেলে নারায়ণ চন্দ্র সঙ্গে তার মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল না। বিদ্যাসাগর ছেলের সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পিতার মৃত্যুর পরই নারায়ণচন্দ্র এখানে বাড়ি ও সম্পত্তি বিক্রি করে দেন, কলকাতার এক মল্লিক পরিবারের কাছে। তারা বাড়িটি এমনি ফেলে রাখেন। 1938 সালে বিহার প্রবাসী ও প্রতিষ্ঠিত বাঙালি তৈরি করেন বিহার বাঙালি সমিতি। সমিতি সেখানে বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষার জন্য উদ্যোগী হয়ে মল্লিক পরিবারের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে নেয় 24 হাজার টাকায়। সেখানেই বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবী নামাঙ্কিত মেয়েদের স্কুল চালু করেন।
1884 সালে যে বিদ্যাসাগর নারী ও ব্রাহ্মণ নিয়ে এমন রসগ্রাহী বর্ণনা দিয়েছেন, সেনসর কিছু ক্ষেত্রে তার মধ্যে প্রবল ছিল। 1854 সালে কুমারসম্ভব সম্পাদনা করেছেন। হরগৌরীর বিবাহ বর্ণনাকে অশ্লীল বলেছেন বিদ্যাসাগর।হরগৌরী ঘটিত অশ্লীল বর্ণনার কারনেই নাকি বাংলাদেশে পায়নি কুমারসম্ভবের অংশগুলি। এই কুমারসম্ভব সম্পাদন কালে কালিদাসকৃত স্তন শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ বক্ষ ব্যবহার করেন , এত কিছু করে যদিও অশ্লীলতার দায়ে থেকে তিনি রেহাই পাননি।
Written By – শ্রেয়া চ্যাটার্জি