গত শুক্রবার বিজেপির এক জনসভা থেকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিরোধীদের উদ্দেশ্যে তীব্র আক্রমনাত্মক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন যাদের মা-বাবার ঠিক নেই তারাই মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে সিএএ, এনআরসির বিরোধিতা করছে। শুধু তাই নয় এ দিন এই জনসভা থেকে দিলীপ ঘোষ সমাজের বিশিষ্ট তথা বুদ্ধিজীবীদের একহাত নেন। তিনি তার জনসভা থেকে বিশিষ্টদের কে শয়তান বলে কটাক্ষ করলেন। স্বভাবতই এমন মন্তব্যের জেরে রাজনীতিতে জোর তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। দিলীপ ঘোষ দ্বিতীয়বারের জন্য রাজ্য বিজেপি সভাপতি পদ গ্রহণের দিন ভাষণে বলেন ভবিষ্যতে আরো অনেক মন্তব্য আসবে সেগুলো কে সহ্য করতে হবে। আর তার ঠিক পরেই এমন ঘটনা, বিশেষত বিশিষ্টজনদের কটাক্ষ করার জন্যে বিতর্ক এখন তুঙ্গে পৌঁছেছে।
এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য ভারত বার্তার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিল মাননীয় অভিনেতা বাদশা মৈত্র সঙ্গে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার মূল্যবান মতামত ভারত বার্তাকে জানান।
আজ এক জনসভায় থেকে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন যে যাদের মা-বাবার ঠিক নেই তারা মানুষকে ভুল বুঝাচ্ছে সি এ এ , এনআরসির বিরোধিতা করছে বলে তীব্র আক্রমণ করেন। কি বলবেন আপনি এই বিষয়টিকে নিয়ে ?
বাদশা মৈত্র : কোন ব্যক্তিকে নিয়ে আলাদা করে মন্তব্য করব না। আমি শুধু বলব রাজনীতির ভাষাটা যেভাবে হিংস্রতার পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে এবং রাজনীতির ভাষা যেভাবে শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করছে আমি এর বিরুদ্ধে ।
শুধু তাই নয় উনি বিশিষ্টদের শয়তান বলে কটাক্ষ করেছেন .. ( পুরো শেষ না হতেই )
বাদশা মৈত্র : দেখুন এটাকে নিয়ে আমার আলাদা কোনো বক্তব্য নেই। এখন বিশিষ্ট কে ? আপনিও আমাকে বিশিষ্ট বলতে পারেন। এবার আমি সত্যিই শয়তান হতে পারি ! আবার হতে পারে একজন মানুষ বিশিষ্ট সে সত্যিই শয়তান নয়। বিশিষ্ট এর অনেক ভাগ আছে , আপনার চোখে আমি শয়তান হতেই পারি ! এটাও ঠিক যে বহু বিশিষ্ট মানুষ এই রাজ্যে তাদের বিশিষ্টতা রক্ষা করতে পারেনি। এটা আপনাকে মানতে হবে। যেখান থেকে তারা বিশিষ্ট হয়েছিল , যেখান থেকে মানুষ তাদের ফলো করেছিল তারা এমন ভাবে মানুষকে প্রতারিত করেছে , কিছু মানুষ । তবে তারা বিশিষ্ট সেই অর্থে । ইন জেনারেল বললে , আমি তো আর পলিটিক্সের লোক নই। আমি কোন পলিটিকাল লাইন নিয়ে আলোচনা করতে পারব না। বিশিষ্টতা যারাই আছে তাদের সম্মান রক্ষা করা , এটা পারস্পরিক। বিশিষ্ট শুধু বললে আমি এর বিরুদ্ধে বলতে পারবোনা এই কারণে ,পশ্চিমবঙ্গের নানা বিশিষ্ট লোক এমন এমন কর্মকাণ্ড প্রত্যেকদিন করেছেন। ২০১১ পর থেকে হয়তোবা এর আগেও , এটা তাদের বিশিষ্টতা নষ্ট করেছে। যদি কোন ব্যক্তি নিয়ে কারো সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাহলে বলবেন আমি নির্দিষ্টভাবে বলে দেবো তার সম্পর্কে আমার মতামত। অমর্ত্য সেনকে নিয়ে কোন কথা বলা হলে , যাদের আমি বিশিষ্ট বলে মনে করি সমাজের জন্য । তাদের সম্পর্কে কিছু বলা হলে তাহলে আমায় বলবেন । আমি নির্দিষ্ট করে বলে দেবো তার সম্পর্কে আমার মতামত কি । কিন্তু অনেক মানুষই আছেন যারা কোট আনকোট বিশিষ্ট , তবে তাদের আমার নিজেরই বিশিষ্ট বলে মনে হয় না।
কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে আমি আমার মত প্রকাশ করতেই পারি , আইনের সীমার মধ্যে থেকে আমি প্রতিবাদ মিছিল আন্দোলনকরতে পারি কিন্তু তাই বলে এমন মন্তব্য রাজনীতির ক্ষেত্রে করাটা .. ( পুরো শেষ না হতেই )
বাদশা মৈত্র : না করা উচিত নয়। এক নম্বর , হিংসা কখনো হিংসা থামাতে পারেনা । হিংসা কখনো হিংসার উত্তর হতে পারে না। তাই এই জাতীয় কথা যদি বাড়তে থাকে , এই জাতীয় কথা আমরা অনেকদিন ধরেই শুনছি তাতে হিংসা থামেনি হিংসা বেড়েছে। আপনি বীরভূমের দিকে তাকান , আরো অনেক জায়গায় তাকান যেখানে প্রত্যেক দিনই এই সমস্ত কথা আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি , একদম সরাসরি হিংসাত্মক কথা। হিংসা কমেছে ? কমেনি ! রাজনীতি থেকে এই সংস্কৃতিটাই ত্যাগ করতে হবে দলমত নির্বিশেষে। কোনো পার্টি লাইনে ফেলবেন না , দলমত নির্বিশেষে। যেই পার্টি লাইনে ফেলবেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চারটি এক্সাম্পেল আসবে , যে চারটি এক্সাম্পেল এর কথা আমি যদি না বলি তাহলে আপনি আমাকে বিশিষ্ট বলে মানতে পারবেন না। আমাকে বলতে হবে যেমন চড়াম চরাম ঢাক বাজানো থেকে শুরু করে এবং সরাসরি বোম মারো থেকে সহ আরো অনেক কিছু শুনেছি তো আমরা। একেবারেই শুনেছি এবং সেটা একেবারেই হিংসাত্মক কথা। ফোনে আমার মত হচ্ছে এই রাজনীতি থেকে এই জাতীয় শব্দবন্ধ তুলে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে এর জন্য আইন করা উচিত। হিংসা-প্রতিহিংসার জন্ম দিচ্ছে।
আমরা ভবিষ্যতে এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ কি আশা করতে পারি কারণ বর্তমানে এখন যা পরিস্থিতি সেখান থেকে দাঁড়িয়ে .. ( পুরো শেষ না হতেই)
বাদশা মৈত্র : আমি ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করতে পারি। আমার ভূমিকা আমি যেটা করে থাকি ব্যাক্তিগতভাবে সমালোচনা করতে পারি। স্পষ্ট করে স্পষ্ট কথা বলতে পারি কোনো আড়াল না করেই কিন্তু সেটা নিরপেক্ষ হতে হবে। মানে চরম চরম করে ঢাক বাজানোর নিন্দে একইভাবে করতে হবে ও একইসঙ্গে এর আগেও যদি কেউ এমন কথা বলে থাকে তার নিন্দে করতে হবে এবং এখন যারা এ ধরনের কথা বলছে তাদেরও নিন্দা করতে হবে। তবেই বিশিষ্টদের লোকে বিশিষ্ট বলে মানবে। ওই ক্ষেত্রে আপনি যদি বিচার বিবেচনা করে বলেন তাহলে মানবে না। সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের এখানেই।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ :- প্রীতম দাস ]