ঢাকের কাঠি পরল বলে
মা আসছে বাপের ঘরে
ছেলেপুলের সঙ্গে নিয়ে
আসছে উমা ঘোটকে চড়ে।
পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের ভেলা কিংবা শিউলি ফুলের গন্ধ ,কাশের বন মায়ের আগমনকে সূচিত করছে। জানান দিচ্ছে বছর ঘুরে মর্ত্যবাসীর অপেক্ষা অবসানের দিন প্রায় চলে এসেছে এবার ঘরের মেয়ে উমাকে বরন করার পালা। দুর্গা কেবলতো অসুরবিনাশিনী নয় তার অভ্যন্তরে ফুটে ওঠে মায়ের মমতা,কোমলতা..। আমাদের মাঝে তিনি মাতৃরূপে বিরাজ করেন ..তিনি সকলের মা। তাইতো এই চার দিন ধনী-দরিদ্র সকল বিভেদ ঘুচে গিয়ে মা হয়ে উঠে সার্বজনীন। তাইতো বলা হয়েছে-
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেন সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমঃ নমহ “
অর্থাৎ তিনি মাতৃরূপে শক্তিরূপে সদা বিরাজমান।
তবে মায়ের আগমন তো অপূর্ণ থেকে যায় যদি মিষ্টিমুখ না হয় কারন বাঙালির শুরু থেকে শেষ সবটাই মিষ্টিমুখ করিয়ে মিষ্টি সম্পর্কের বাঁধনে রেখে। মিষ্টি ছাড়া বাঙালির জীবনে কোন উৎসব পুরোটাই ফাঁকি। অন্যান্য খাবার যদি হয় মন্ত্রী তাহলে মিষ্টি হচ্ছে রাজা।
মায়ের আগমন থেকে বিদায়ের সুর পর্যন্ত চলে মিষ্টিমুখ। পুজো আসলেই প্রথমেই সেই ছবি ধরা দেয় স্মৃতির চিত্রপটে যেখানে পুজোর কিছু পূর্বেই শুরু হয় মা কে ঘরে আনার আহ্বান প্রস্তুতি। বাড়ির অন্দরমহলের সকল শাশুড়ি বৌমা মিলে বানান নানা রকমারি নাড়ু। যেমন নারকেল নাড়ু তালের নাড়ু গুড়ের নাড়ু আবার সঙ্গে থাকে খাস্তা গজা। এরপরই দোড়গোড়ায় উপস্থিত হয় সপ্তমী। দেবী দুর্গাকে বরন করে নিতে হয় বিভিন্ন রকম মিষ্টি দিয়ে তার মধ্যে তো অবশ্যই থাকে রসগোল্লা আর সঙ্গে রকমারি সন্দেশ। এরপর অষ্টমীতে মায়ের ভোগেও থাকে নানা রকম মিষ্টি যেমন সাবেক জলভরা তালশাস সন্দেশ কালা কালাকাদ পায়েস প্রভৃতি।
আর এই করতে করতে চলে আসে দশমী মা ফিরে যাবে আবার তার স্বামীর ঘরে তাই সেদিন প্রত্যেকের মনেই বিষন্নতার ছন্দ। তাই মাকে ভালোবেসে সিঁদুরে রাঙিয়ে দেয় বউরা, আর সঙ্গে মাকে মিষ্টিমুখ করায় কারন বাঙালিরা কখনো যে মাকে বিদায় জানায় না সকলে বলে আসছে বছর আবার হবে।
” প্রতীক্ষা আবার মনে মনে
আবার এসো মা
বছর ঘুরে।। “
এখানেই সমাপ্তি নয় বিজয়া দশমীর রেশ কাটেনা মায়ের গমনে। বিজয়া দশমীতে কুশল বিনিময় বাঙালির অন্যতম অঙ্গ আর সেখানে মিষ্টিমুখ বাঙালির ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য মেনে দশমীর মিষ্টির প্লেটে থাকে রসগোল্লা পান্তুয়া থেকে শুরু করে সীতাভোগ মিহিদানা বা বাড়ি তৈরীর সেই নাড়ু গজা নিমকি ।
একুশ শতকে সময় অনেকটা এগিয়ে গেলেও বাঙালি নিজের অনেক ঐতিহ্যকে ভুলে গেলেও বিজয়ার দিনে বড়দেরকে প্রণাম বা মিষ্টির দোকানে উপচে পড়া ভিড় জানান দেয় বাঙালি আজও ভোলেনি তার সংস্কৃতি তার প্রধান মূল। সেই মনের টানকে আজও অগ্রাহ্য করতে পারেনি বাঙালি।
Written by – দেবস্মিতা ধর