ক্রিকেটের ইতিহাসে আধুনিকতম ফরম্যাট হল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল। আর এই আইপিএল বিগত 13 বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে, সেটা বলাই যায়। প্রত্যেক বছর একটি করে দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কখনও একই দল একাধিকবার চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতেছে। কিন্তু প্রথম থেকে আইপিএলের সঙ্গে অন্যতম যে দলটি রয়েছে, সেটি হল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একবারও চ্যাম্পিয়ন খেতাব জেতেনি এই দল।
কিন্তু কেন? কোনও খামতি আছে কি? দলের মধ্যে ভাল ক্রিকেটার বা ভাল বোলার নেই? দলে ভাল কোচ নেই? নাকি দলের মালিকানায় কোনওরকম ম্যানেজমেন্টের অভাব রয়েছে? না, এসব কিছুই নয়। প্রথম থেকেই আইপিএলের অন্যান্য সবকটি দলের মতোই একটা শক্তিশালী দল হয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। কিন্তু তাও চ্যাম্পিয়ন তকমা আজও অধরা রয়ে গিয়েছে।
আইপিএলের প্রথম সংস্করণে আমরা দেখেছিলাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে যুবরাজ সিং-এর অবদান যথেষ্ট গুরুত্ব রাখে। 2011 বিশ্বকাপে যেভাবে দেশকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন সকলের প্রিয় যুবি, তাতে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব প্রথম সংস্করণের দল গঠনের সময় তাকেই দলের অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছিল। দলের মালকিন প্রীতি জিন্টা অনেকটাই ভরসা করেছিলেন যুবরাজের ওপর। সেই ভরসাযর মান রেখেছিলেন অধিনায়ক যুবরাজ। কিন্তু তাও বছরের পর বছর কেটে গিয়েছে, চ্যাম্পিয়ন তকমা অধরাই রয়ে গিয়েছে পাঞ্জাবের কাছে।
সময় এগিয়েছে। আইপিএল এগিয়েছে। অধিনায়কের বদল হয়েছে। বর্তমানে চলতি আইপিএলে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কে এল রাহুল। যিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে দারুণ ফর্মে রয়েছেন। তরুণ ক্রিকেটার মায়াঙ্ক আগারওয়াল রয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের কাছে। তিনিও দারুণ ফর্মে রয়েছেন। এমনকি ছন্দে দেখা যাচ্ছে নিকোলাস পুরানকেও। এছাড়াও অন্যান্য ব্যাটসম্যান এবং বোলাররাও একইভাবে ছন্দে রয়েছে। কিন্তু তাও চ্যাম্পিয়ন হওযা তো দূরে থাক, চলতি আইপিএলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মাটিতে এখনও পর্যন্ত সাতটি ম্যাচ খেলে মাত্র একটি ম্যাচ জিতেছে প্রীতি জিন্টার দল।
10 অক্টোবর কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে যেভাবে অপ্রত্যাশিত হার হল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের, তা দলের আত্মবিশ্বাসকে যে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে, এমনটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এদিনের ম্যাচে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানো পাঞ্জাবের পক্ষে বেশ কঠিন হবে, এমনটা বলাই যায়। সকলে যখন ভেবে ফেলেছিল আবুধাবির বাইশ গজে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারিয়ে বহুপ্রতীক্ষিত জয় পাবে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব, সেই মুহূর্তে শেষ ওভারে সুনীল নারিনের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানদের। অনেক রানের পার্থক্য নয়, মাত্র দুই রানে হেরেছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব এদিন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভাল ক্রিকেটার, ভাল বোলার, ভাল মালিকানা বা ম্যানেজমেন্ট থাকা সত্বেও বারবার কেন চ্যাম্পিয়ন তকমা থেকে বহু কোশ দূরে থাকতে হচ্ছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে? কিসের খামতি রয়েছে? যেটা রয়েছে সেটা কেন বিচার-বিবেচনা বা বিশ্লেষণ করে মেটানো হচ্ছে না? দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে ভারসাম্য বা বোঝাপড়ার কি কোনও অভাব হচ্ছ? নাকি প্ল্যানটা ঠিকমত হচ্ছে না? সমস্যাটা কোথায়? এই প্রশ্নই এখন উঠছে ক্রিকেটমহলে।
কারণ, একেবারে পাতে দেওয়া যাবে না বা অযোগ্য দল হিসেবে কিন্তু কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব নিজেদেরকে তুলে ধরেনি। আইপিএলে প্রথম থেকেই এই দলে যথেষ্ট ভরসাযোগ্য ব্যাটসম্যান দেখা গিয়েছে। তারপরেও প্রত্যেক বছর এই লজ্জাজনক অবস্থা সত্যিই ভাবাচ্ছে ক্রিকেটমহলকে। ম্যানেজমেন্টের বোধ হয় এই বিষয়টা নিয়ে এবার সিরিয়াসলি ভাবার সময় এসে গিয়েছে। একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আশা এটাই যে, আগামী দিনে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব চ্যাম্পিয়ন হবেই।