Bajaj Freedom 125 CNG ভারতের বাজারের জন্য ভালো বাইক নয়, রয়েছে এই বড় সমস্যা

আপনি যদি সিএনজি বাইক কিনতে চান, তাহলে আগে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন

Advertisement

Advertisement

কিছুদিন আগেই ভারতের বাজারে বাজাজ কোম্পানিটি নিয়ে এসেছে তাদের নতুন সিএনজি বাইক বাজাজ ফ্রিডম ১২৫। এই সেগমেন্টে ভারতের প্রথম সিএনজি বাইক হল বাজাজ কোম্পানির এই বাইকটি। এর আগে ও কিছু সিএনজি বাইক ভারতের বাজারে এসেছে, তবে বাজাজ কোম্পানির এই ফ্রিডম বাইকটি সব থেকে ভালো মধ্যবিত্তদের বাজেটের বাইক হতে পারে। তবে, এই বাইকের প্রচুর ভালো বিষয় থাকলেও, কিছু খারাপ বিষয়ও কিন্তু রয়েছে এই বাইকে। আজকে আমরা আপনাদের সামনে এই বাইকের দশটি খারাপ বিষয় তুলে ধরব। এরপর আপনারাই বুঝতে পারবেন, আপনার এই বাইকটা কেনা উচিত, নাকি নয়

Advertisement

১. সীমিত রেঞ্জ

বাজাজ কোম্পানি দাবি করেছে এই বাইক চালিয়ে আপনি মোটামুটি ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারবেন, যদি আপনি একবার ফুল ট্যাঙ্ক সিএনজি ভরিয়ে নেন। কিন্তু, ৩০০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার আপনি চলতে পারলেও, সব জায়গায় সিএনজি পাম্প থাকে না। সেই কারণে বারবার ট্যাঙ্ক ফুল করতে আপনার সমস্যায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে যারা একটু গ্রামের দিকে থাকেন তারা সিএনজি পাম্প পাবেন না। শহরের দিকে সিএনজি পাম্প রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আপনার বাড়ির সামনে সিএনজি পাম্প থাকবেই এরকম কোন কথা নেই। ফলে আপনাকে সিএনজি ভরাতে অনেক দূর যেতে হতে পারে। এর ফলে আপনার অতিরিক্ত টাকা খরচ হবে। যেখানে পেট্রোল ভরাতে আপনার একেবারেই কোন পয়সা অতিরিক্ত খরচ হয় না। বাড়ির সামনে এমনকি যে কোন হাইওয়ের ধারেও সহজেই পেট্রোল পাম্প পাওয়া যায়।

Advertisement

২. পাওয়ার ডেলিভারি কম

সিএনজি ইঞ্জিন সাধারণত পেট্রোল ইঞ্জিনের তুলনায় কম পাওয়ার ডেলিভারি করতে পারে। ফলে একই জায়গায় যেখানে আপনি ১২৫ সিসি পেট্রল বাইকে অনেক বেশি পাওয়ার পেয়ে যাবেন, সেখানে আপনি এই বাইকে কিন্তু অনেক কম পাওয়ার পাবেন। ফলে আপনি কতটা তাড়াতাড়ি এই বাইকের মাধ্যমে যেতে পারবেন না।

Advertisement

৩. সিএনজি ট্যাঙ্ক ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা

আমাদের বাড়িতে যেরকম এলপিজি ট্যাঙ্ক থাকে, সেরকমই কিন্তু এখানে সিএনজি ব্যবহার করা হয়েছে। গরমকালে এলপিজি ট্যাঙ্ক ফেটে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। এলপিজি ফেটে গেলে বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটে। একই অবস্থা হয় সিএনজি ট্যাঙ্ক ফেটে গেলেও। যদি কোনভাবে গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার কারণে আপনার সিএনজি ট্যাঙ্ক ফেটে যায়, তাহলে আপনি গুরুতরভাবে আহত হতে পারেন, আবার অনেক ক্ষেত্রে আপনার মৃত্যুও হতে পারে। ফলে সিএনজি বাইক কেনার সময় এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন। এমনিতে সিএনজি ফাটেনা, কিন্তু যদি পরিস্থিতি সেরকম হয় তাহলে কিন্তু সিএনজি বাইক ফাটতে পারে।

৪. খরচ খুব একটা কম হয় না

সিএনজি বাইক ভারতে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে কারণ সিএনজির দাম একটু কম হয় পেট্রোলের তুলনায়। তবে, তুলনা করে দেখতে গেলে যদি আপনি শহরের মধ্যেই চালান তাহলে কিন্তু আপনার খুব একটা বেশি টাকা সেভ হবে না সিএনজি বাইক চালিয়ে। পেট্রোলে যেখানে আপনার এক কিলোমিটার চালালে ১.৩৫ টাকার পেট্রোল খরচ হয়, সেখানেই সিএনজি চালালে আপনি ১ টাকার সিএনজি খরচ করবেন এক কিলোমিটারে। অর্থাৎ আপনার মাত্র ৩৫ পয়সা সাশ্রয় হচ্ছে সিএনজি বাইক চালালে। সাধারণ মানুষ ২৫ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত সারাদিন বাইক চালাতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার খুব একটা বেশি টাকা সাশ্রয় হবে না যদি আপনি সিএনজি বাইক কেনেন। বরং ভালো পারফর্মেন্স আপনি পাবেন পেট্রোল বাইকে।

৫. দাম অনেক বেশি

যদি আপনি ১২৫ সিসি সেগমেন্টের কোন পেট্রোল বাইক কেনেন তাহলে সেটার দাম মোটামুটি ১ লক্ষ টাকার নিচেই থাকে। এই দামের মধ্যে আপনি কিন্তু ডিস্ক ব্রেক ভেরিয়েন্ট পেয়ে যান। কিন্তু যদি আপনি এই নতুন সিএনজি বাইকের কথা ভাবেন, তাহলে তার দাম কিন্তু ড্রামব্রেক ভার্সনেই প্রায় এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এই দামের মধ্যে একটু কম ফিচারবিশিষ্ট ১৫০সিসি বাইক আপনি পেয়ে যেতে পারেন। ফলে দামের দিক থেকে সিএনজি অনেকটাই বেশি। ফলে এটা কিন্তু একেবারেই ভ্যালু ফর মানি নয়।

৬. কার্বওয়েট অনেক বেশি

সিএনজি মডেলের গাড়ি হবার কারণে এই বাইকে একটা অতিরিক্ত সিলিন্ডার রয়েছে। সেই কারণে এই বাইকের কার্বওয়েট ১৪৯ কিলোগ্রাম। এর উপর আপনি বসে যদি আপনি বাইক চালান, তাহলে মোটামুটি ২০০ কিলোগ্রাম ধরে নেওয়া যেতে পারে এই বাইকের ওজন। ফলে এই বিষয়টা কিন্তু আপনার এই বাইকের জন্য খুব একটা সহজ বিষয় হবে না। ইঞ্জিনের পারফমেন্স কমে যেতে পারে এর কারণে। সঙ্গেই, এই বাইকে সিট হাইট অনেক বেশি। তাই যাদের উচ্চতা খুব একটা বেশি নয়, তারা খুব একটা সহজে এই বাইক চালাতে পারবেন না।

৬. পারফরমেন্স

এই বাইকটির পারফরম্যান্স কিছুটা হলেও কম হবে ১২৫ সিসির পেট্রোল বাইকের তুলনায়। বাইকের ওজন যত কম হয় তত ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায় বাইকে। যেহেতু এই বাইকের ওজন অনেকটা বেশি, সেই কারণে এই বাইকের পারফরমেন্স কিছুটা হলেও কমের দিকে থাকবে। ফলে সবদিক থেকে আপনার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে যদি আপনি এই বাইকটি কিনে নেন।

৭. সার্ভিসিং এর খরচ অনেক বেশি

সিএনজি ভেরিয়েন্টের গাড়ি হওয়ার কারণে, এই বাইকের সার্ভিসিং করাতে আপনার অনেক সমস্যা হবে। সব জায়গায় এই বাইকের সার্ভিসিং হবে না। যেখানে হবে সার্ভিসিং সেখানেও কিন্তু বেশ ভালো টাকা খরচ হবে আপনার। এই ধরনের বাইকে সার্ভিসিং এর খরচ অনেক বেশি থাকে। তাই সেই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে

৮. ডিজাইন খুব একটা ভালো নয়

যদিও এই বিষয়টা সবার জন্য আলাদা আলাদা হতে পারে। কারো ডিজাইন ভালো লাগতে পারে, আবার কারো ডিজাইন ভালো নাও লাগতে পারে। এই বাইকে বাজাজ একটি রেট্রো ডিজাইন দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ১২৫ সিসি সাধারন বাইকে, খুব একটা রেট্রো ডিজাইন চলে না। তাই যদি আপনার ১২৫ সিসির মডেলের মধ্যে রেট্রো ডিজাইন পছন্দ হয়, তাহলে আপনার জন্য এই বাইক ভালো হতে পারে। নতুবা এই বাইকের ডিজাইন সার্বিকভাবে খুব একটা আকর্ষণীয় নয়।

৯. পার্টস পাওয়ার সমস্যা এবং ওয়ারেন্টি সীমাবদ্ধতা

সিস্টেমের কোন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে সেই যন্ত্রাংশ পাওয়াটা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সাধারণত পেট্রোল পাইক ভারতে বেশি চলে এবং সেই কারণে পেট্রোল বাইকের যন্ত্রাংশ বেশি পাওয়া যায়। সিএনজি বাইক যদি আপনি কেনেন তাহলে সেটার যন্ত্রাংশ পেতে আপনার অসুবিধা হতে পারে। পাশাপাশি, সিএনজি বাইকের কিট ইনস্টল করলে বাইকের কোম্পানি ওয়ারেন্টি সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে। ফলে সেই বিষয়টা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।

১০. রিসেল ভ্যালু কম

যদি ফ্রিডম বাইক বাজাজের একটি সফল বাইক হয় তাহলে কিন্তু আপনি এই বাইকে ভালো রিসেল ভ্যালু পাবেন। কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে, এই বাইকটা খুব একটা বেশি ভারতীয় বাজারে চলবে না। আর যদি সম্ভাবনা সত্যি হয় এবং আপনি এই বাইকটি কিনে নেন, তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে বিক্রি করতে গিয়ে ফেঁসে যাবেন। বাজাজ এর আগেও বহু বাইক লঞ্চ করেছে যেগুলো কিন্তু বিক্রি না হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে বাজাজের ইতিহাসে এরকম রিসেল ভ্যালু কম থাকা বাইক রয়েছে। এই বাইকও যদি জনপ্রিয় না হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আপনার বাইকের রিসেল ভ্যালু অনেক কমে যাবে এবং তখন কিন্তু পুনরায় বিক্রয় করতে গিয়ে আপনাকে পস্তাতে হবে। ফলে যদি আপনার টার্গেট লিস্টে এই বাইকটি থাকে, তাহলে অবশ্যই এই দশটি বিষয় খেয়াল রাখবেন বাইকটি কেনার আগে।

Recent Posts