নিউজপলিটিক্সরাজ্য

নজরে সেই ১ কোটি ভোট, কেন বাম-কংগ্রেসের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শুভেন্দু?

বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) মুখে নিয়মিত বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের প্রশংসা শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু কেন?

Advertisement

নন্দীগ্রামে বাম সরকারের সময়ে জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলন বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। শাসক দলে থাকাকালীন সময়েও বামেদের সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দিতে না দিতেই সেই শুভেন্দু অধিকারীর গলায় এখন বামেদের প্রশংসা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, জ্যোতি বসু, সম্প্রতি প্রোমদ দাশগুপ্ত, বিনয় চৌধুরী, গীতা মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় এবং সুকুমার সেনগুপ্তের মতো বাম নেতাদের নামেও। এমন কি প্রকাশ্যেই বাম সমর্থকদের কাছ থেকে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন শুভেন্দু (Suvendu Adhikari)। কিন্তু কেন হঠাৎ বামেদের প্রশংসায় মুখর হলে কেন তিনি? মুখে বিজেপি নেতা বলেছেন,”আমি কখনও তাদের রাজনীতিত বিরোধী ছিলাম না। আমি বিরোধী ছিলাম লক্ষণ শেঠের মতো হার্মাদদের। ” কেবল তাই নয় ২৫ এ জানুয়ারি তমলুকের সভায় বাম নেতাদের সাথে প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে তার মুখে। এমন কি তিনি বিমান বসুর কৃচ্ছসাধনের দরাজ প্রশংসা ও করেছেন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মরে, শুভেন্দুর আসলে এই বাম-কংগ্রেস প্রীতির পিছনে রয়েছে নিপাট ভোটের অঙ্ক। হিসেব হতে জানা যাচ্ছে, বাংলায় ২০১৬ থেকে ২০১৯ এর মাঝে বাম কংগ্রেসের প্রায় ৩৩% ভোত এসেছে বিজেপিতে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই ভোট ধরে রাখতেই মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু এই সময়কালের মধ্যে বাংলায় তৃণমূলের ভোট বেড়েছে মাত্র ৩%। ফলে বলা চলে যে, বাম-কংগ্রেসের থেকে তৃণমূল বিরোধী সিংহভাগটাই বিজেপির কাছে এসেছে। আর এই হিসেব থেকেই সিপিএম নেতারাও স্বীকার করেছেন যে শাসক শিবির বিরোধী ভোত যাতে আবার বাম এবং কংগ্রেস জোটের দিকে ঝুঁকে না পড়ে , তা নিশ্চিত করতে একের পর এক নেতাদের প্রশংসা করছেন শুভেন্দু অধিকারী। এমনকি বিজেপি ক্ষমতায় আসলে বাংলায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরবে বলেও বাম সমর্থকদের আশ্বস্ত করেছেন বিজেপি নেতা।

সিপিএম নেতা অমিয় পাত্রের বক্তব্য, “শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে হয়তো জোর চর্চা চলছে৷ কিন্তু উনি কী বলছেন তাকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছি না৷ শুভেন্দু অধিকারী এখন অনেক বড় বড় কথা বলছেন, কিন্তু তৃণমূলে থাকার সময় তিনিই বড় বড় পদ আঁকড়ে ছিলেন৷ তাঁর পরিবারের সদস্যরাও একাধিক পদে ছিলেন৷ শুভেন্দু অধিকারী বাম-কংগ্রেস নেতাদের আচমকা প্রশংসা করছেন যাতে বিজেপি-র ঝুলিতে যাওয়া আমাদের ভোট ধরে রাখা যায়৷ কিন্তু ওনার সেই চেষ্টা সফল হবে না৷ কারণ অনেক জেলাতেই বাম মনোভাবাপন্ন মানুষ ফের আমাদের উপরেই আস্থা রাখতে শুরু করেছেন৷” বিজেপি শিবিরে চলে যাওয়া সেই ৩৩% ভোটে ভাগ বসাতে কোনও কসুর করছেন না তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর সেই চেষ্টা সফল হলে ২০২১ এর ভোট অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে তাদের পক্ষেও। ২০১৬ সালের নির্বাচনী ফলাফল হতে বলা চলে, এই রাজ্যে বিজেপি ১০.২ শতাংশ ভোত পেয়েছিল। সেখানেই ২০১৯ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪০.৩%। বাংলায় সেই দিক থেকে দেখলে এখন বিজেপি অনেকটা সফল। তাদের যে আগের কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলা চলে।

আরও খুঁটিয়ে দেখলে দেখা যাবে, ২০১১ থেকে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে বামেদের ভোট প্রায় ৯.৮৮ শতাংশ কমেছে৷ আবার ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে বামেদের মোট ভোট ক্ষয়ের হার বেড়ে হয়েছিল ১৬ শতাংশ মতো৷ আবার কংগ্রেসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে তারা ৮.৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, সেখানে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তা বেড়ে হয়েছিল ১২.৩ শতাংশ৷ কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের হার ৯.৬ শতাংশ থেকে কমে হয় ৫ শতাংশ৷ অন্যদিকে ২০১১ সালে বাংলায় ক্ষমতায় আসার পরে কমেনি শাসক শিবিরের ভোটের হার। অর্থাৎ বলা চলে যে, বাম কংগ্রেস হারিয়েছে তাদের বহু ভোট। তার স্থানে লাভবান হয়েছে বিজেপি। বাম এবং কংগ্রেস শিবির থেকে বিজেপি-র ঝুলিতে যাওয়া এই ভোটের সংখ্যা কমবেশি ১ কোটি৷ ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তা ধরে রাখা বিজেপি-র কাছে বড় চ্যালেঞ্জ৷ সূত্র হতে জানা গিয়েছে যে, শুভেন্দুকে গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব হতে যে সমস্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হল বাম-কংগ্রেস থেকে প্রাপ্ত ভোট ধরে রাখা। ফলে নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই দরজা গলায় বাম-কংগ্রেসের প্রশংসা করে চলেছেন বিজেপি নেতা।

Related Articles

Back to top button