গত শুক্রবার সকাল ন’টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমস্ত দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি ভাষন দেন। তিনি বলেন, ৫ই এপ্রিল রবিবার রাত ন’টায় দেশের সমস্ত নাগরিক তাদের বাড়ির আলো নিভিয়ে দিয়ে যেন প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে নয় মিনিটের জন্য। এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে মোদির এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করা হয়। আজ বিজ্ঞানের যুগেও এরকম অতিপ্রাকৃত শক্তির উপর আস্থা রাখা ভিত্তিহীন এমনটাই বলছেন একদল সমালোচক, কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, ওই দিন কেন ঘরের আলো নিভিয়ে উক্ত কাজকর্ম করব আমরা? প্রশ্নের ঘনঘটা রাজ জমালেও তার সঠিক উত্তর বা সমাধান তো অবশ্যই রয়েছে।
ভারতবর্ষ আধ্যাত্মিকার দেশ, এই দেশ ভক্তিতে বিশ্বাস রাখে। এদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, উৎসব, সভ্যতা সবকিছুর সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে আধ্যাত্মিকতা।বিজ্ঞান যেমন কোন ধর্ম নয়, তেমনই আধ্যাত্মিকতাও কোন ধর্ম নয়। বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতা দুটিই শক্তি কেন্দ্রিক। বিজ্ঞান ভগবানে বিশ্বাসী নয় কিন্তু এই কার্যকলাপের একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও বর্তমান।এই মহাজগতে যা কিছু বর্তমান (পরমাণু থেকে শুরু করে সৃষ্টির সেরা মানুষ, জীব অথবা জড়) সবকিছুই শক্তির বিভিন্ন রূপ। যার শুরু হয়েছিল কোন এক একক শক্তি থেকে। সেই একক শক্তি কে ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ ‘পরাশক্তি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বিজ্ঞান বলে শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, এটি বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবর্তিত ও পরিবাহিত হতে পারে মাত্র। একই সূত্র ধরে শক্তির কথাই বলছে অ্যাধাত্মিকতা।
আধ্যাত্মবাদ অনুযায়ী, মহাজগতে শক্তি দুই ধরনের, একটি শুভ শক্তি এবং একটি অশুভ শক্তি। আমরা এই মহাবিশ্বের যে কোনো একটি সৌরজগতের পৃথিবী নামক একটি গ্রহের ‘বুদ্ধিমান প্রাণী’ তাই আমরা যে মহাবিশ্বের সকল প্রকার শক্তির সাথে অবচেতন ভাবে হলেও জড়িত সেটা আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে। আধ্যাত্মিকতার অতিপ্রাকৃত বিষয়ের তত্ত্বগুলি বিজ্ঞানের চক্ষুশূল। কিন্তু ভাবুন তো, আজ এমন একটি মারন ভাইরাস সারা বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ধ্বংস করতে চাইছে মানব সভ্যতাকে, যার কোনো সঠিক সমাধান করতে পারছে না বিজ্ঞান, সেটি কি অশুভ শক্তি নয়? এবং যদি সেই অর্থে এটিকে অশুভ শক্তি বা অনাকাঙ্খিত শক্তি ধরা হয় তাহলে কি এর কোনো সমাধান নেই? অবশ্যই আছে।
কথায় আছে ‘জনতা জনার্দন’ অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস রয়েছে যে কথা বারেবারে বলে গিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ, তিনিও তো দর্শনের ছাত্র ছিলেন। এখন কথা হচ্ছে আমাদের মধ্যে যে অন্তর্নিহিত শক্তি যাকে আমরা পরমাত্মা বলে থাকি এই পরমাত্মার সঙ্গে আত্মার যোগসূত্র স্থাপনই আমাদের মধ্যে দৈবজ্ঞানকে জাগরিত করে। ফলে ১৩০ কোটি মানুষ যখন একযোগে একই ভাবনায় মগ্ন হয়ে সংগ্রাম করবে একটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তখন নিশ্চই সেই সংকল্প বাস্তবে রূপ নেবে।
প্রদীপ বা মোমবাতি হল শক্তির উৎস যার উল্লেখ্য রয়েছে ভারতীয় পঞ্চতত্ত্বে এই সংকেত অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে সক্ষম। প্রত্যেকটি ভারতবাসী যখন একই সংকল্পে চিন্তামগ্ন হবে তখনই একটি মহাশক্তি উৎপন্ন হবে। এটি কোনো বিশেষ দৈবশক্তি নয় যা একেবারে করোনা থেকে মুক্ত করে দেবে। হয়তো ভারতে করোনার প্রকোপ থাকবে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি আমাদের মনোবল বাড়িয়ে তুলবে কয়েকগুন, মনে বিশ্বাস বাড়বে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বৃহৎ জনসংখ্যা একত্রিত হয়ে এই বিপর্যয়ে লড়াই করার শক্তি পাবে। তাই সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে রবিবার ৫ই এপ্রিল সকল ভারতবাসী বাড়ির বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শুভশক্তির আহ্বান করে। যাদের হাতের কাছে প্রদীপ ও বাতি নেই তারা অন্ততপক্ষে টর্চ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বেলেও যেন এই নিয়মটি পালন করেন।