একটি ট্র্যাজিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পী শুক্রবার সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে নেমে আর ফিরতে পারেননি। তাঁর অকালপ্রয়াণে শোকস্তব্ধ সংগীতজগৎ। প্রশ্ন উঠছে—স্কুবা ডাইভিং আসলে কতটা নিরাপদ? এবং কেন এই জলক্রীড়া প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে?
কী এই স্কুবা ডাইভিং
স্কুবা ডাইভিং মূলত এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। এখানে ডুবুরিরা পানির নিচে বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় কাটান। তাঁদের সঙ্গে থাকে এয়ার ট্যাঙ্ক, ডাইভিং মাস্ক, ফিন এবং জলরোধী স্যুট। অক্সিজেন সরবরাহ করে এমন যন্ত্রকে বলা হয় SCUBA (Self Contained Underwater Breathing Apparatus)। এর সাহায্যে ডুবুরি পানির নিচে স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারেন।
শরীরে কীভাবে চাপ তৈরি হয়
পানির গভীরে নামার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে চাপ বাড়ে এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। ডুবুরি যদি খুব দ্রুত ওপরে উঠে আসেন, তখন এই গ্যাস রক্তে বুদবুদ আকারে তৈরি হয়, যা স্নায়ু, টিস্যু ও রক্তনালিতে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। একে বলা হয় ডিকম্প্রেশন সিকনেস। অনেক সময় এই জটিলতাই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, জুবিন গার্গের মৃত্যু হয়তো স্কুবা ডাইভিংয়ের সাধারণ কয়েকটি ঝুঁকির সঙ্গেই যুক্ত।
-
ডিকম্প্রেশন সিকনেস – হঠাৎ উপরে উঠে আসার ফলে রক্তে গ্যাস বুদবুদ তৈরি হয়ে মৃত্যু ঘটতে পারে।
-
এয়ার এমবোলিজম – শ্বাসনালী দিয়ে বাতাস রক্তপ্রবাহে ঢুকে গেলে তা রক্তনালী ব্লক করে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক ঘটাতে পারে।
-
ডুবে যাওয়া – যন্ত্রপাতির সমস্যা বা আতঙ্কের কারণে শ্বাসরোধ হয়ে ডুবে মৃত্যু সম্ভব।
-
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট – পানির নিচে অতিরিক্ত চাপ বা হৃদরোগজনিত কারণে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
-
শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা – ভীতি বা অক্সিজেনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ফুসফুসে পানি ঢুকে শ্বাসপ্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
স্কুবা ডাইভিংয়ে সুরক্ষার নিয়ম
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই খেলা উপভোগ করার আগে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। সঠিক যন্ত্রপাতি, শরীরের উপযোগী ডাইভিং লেভেল এবং মেডিক্যাল চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যাঁদের হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ রয়েছে, তাঁদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়া উচিত।
সংগীতপ্রেমীদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে রইলেন “ইয়া আলি রেহম আলি” খ্যাত জুবিন গার্গ। তবে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু আবারও মনে করিয়ে দিল, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি প্রাণঘাতীও হতে পারে। সচেতনতা ও সুরক্ষার অভাবেই ঘটে যেতে পারে অপূরণীয় ক্ষতি।