বর্তমান সময়ে ভারত সরকার তথা বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কাছে অন্যতম বড় একটা চ্যালেঞ্জ হলো নারীদের আর্থিক উন্নয়ন এবং নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি মহিলাদের আর্থিকভাবে সুরক্ষিত এবং স্বনির্ভর করে তুলতে বেশ কিছু নতুন নতুন প্রকল্প চালু করছে। এই ধরনের উদ্যোগ মহিলাদের শুধু স্বাবলম্বী নয় বরং পরিবার এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে একটা বড় ভূমিকা রেখে দিচ্ছে। এই প্রতিবেদনে আমরা মহিলাদের জন্য চালু করা বেশ কিছু প্রকল্পের ব্যাপারে আপনাদের জানাতে চলেছি। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে এই প্রকল্প চালু করেছিল। লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পটি হলো পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি গৃহস্থ মহিলাদের আর্থিক সহায়তার অন্যতম প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে সাধারণ শ্রেণীর মহিলারা ১০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণীর মহিলারা ১২০০ টাকা করে পেয়ে থাকেন। সরাসরি মহিলাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের মাধ্যমে। স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য হল মহিলাদের জীবনের মান উন্নত করা এবং তাদের আর্থিকভাবে স্বাধীন করা। বিশেষ করে যারা বাড়ির কাজে জড়িত থাকেন এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরাসরি অবদান রাখতে পারছেন না, তাদের জন্য এই প্রকল্প অনেকটাই স্বস্তিদায়ক।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে মেয়েদের আর্থিক সুরক্ষা দেবার জন্য চালু করা হয়েছে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা। ২০১৫ সালে বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা চালু করা হয়েছিল। কন্যা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের প্রকল্প এটি। মেয়ের দশ বছর বয়স হওয়ার আগে সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার আওতায় আপনারা একাউন্ট খুলতে পারেন। ন্যূনতম ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখা যেতে পারে এই একাউন্টে। এখনো পর্যন্ত এই সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনার একাউন্টে ৮.২ শতাংশ করে সুদ দেওয়া হয়, যা বলতে গেলে ভারতের সর্বোচ্চ। মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই প্রকল্পের সঞ্চয় তুলে ব্যবহার করা যায়, যা তার উচ্চশিক্ষা বা বিবাহের খরচ মেটানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এটি মেয়েদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার একটি প্রগতিশীল উদ্যোগ।
উড়িষ্যা সরকারের অন্যতম জনপ্রিয় একটি প্রকল্প হল সুভদ্রা যোজনা, যা মহিলাদের আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী করতে এবং দরিদ্র মহিলাদের উন্নতির লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে মহিলাদের প্রতিবছর ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয় এবং এই টাকা দুই কিস্তিতে দেওয়া হয়। মহিলাদের জীবনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য এই প্রকল্প সহায়ক বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও পাঁচ বছর এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত মহিলারা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকেন। মহিলাদের জীবনের মান উন্নত করার জন্য এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে ওড়িশা সরকারের তরফ থেকে।
মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট নামের একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে মহিলারা ন্যূনতম এক হাজার টাকা থেকে সর্বাধিক দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত রাখতে পারেন। এতে এক বছরে ৭.৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। এই প্রকল্পটি মূলত তাদের জন্য যারা স্বল্প পরিমাণে সঞ্চয় করতে চান এবং অল্প সঞ্চয়কে পাথেয় করে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পেতে চান। এই সেভিং সার্টিফিকেটের মাধ্যমে মহিলারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারবেন।