ভারতের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে নমো ভারত ট্রেন। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটে চলা এই ট্রেন বর্তমানে দেশের দ্রুততম ট্রেন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতদিন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস, রাজধানী এক্সপ্রেস এবং শতাব্দী এক্সপ্রেসকেই দেশের গর্ব বলে মনে করা হত। কিন্তু ২০২৪ সালের জুন মাসে রেলওয়ের নতুন নির্দেশিকায় সেসব ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ১৩০ কিমি/ঘণ্টায় সীমাবদ্ধ করা হয়। ফলে দেশের গতির মুকুট চলে এসেছে নমো ভারতের মাথায়।
দিল্লি-গাজিয়াবাদ-মীরাটকে আরও কাছে আনছে
বর্তমানে এই ট্রেনটি দিল্লির নিউ অশোক নগর থেকে দক্ষিণ মীরাট পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। পুরো করিডোরটি ৮২.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা সম্পূর্ণ হলে দিল্লির সরাই কালে খান থেকে উত্তরপ্রদেশের মোদিপুরম পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে পরিষেবা মিলবে। তখন যাত্রীরা সমস্ত স্টেশন অতিক্রম করেও এক ঘন্টারও কম সময়ে দিল্লি থেকে মীরাট পৌঁছাতে পারবেন।
যাত্রীবান্ধব ভাড়া
যাত্রীদের পকেটের কথা ভেবেই নির্ধারণ করা হয়েছে ভাড়া। দিল্লি এনসিআর থেকে মীরাট পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড এসি কোচে ভাড়া প্রায় ১৫০ টাকা। আর প্রিমিয়াম কোচে ভাড়া ১৮০ থেকে ২২৫ টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে, যা স্টেশনভেদে পরিবর্তিত হয়।
আধুনিক প্রযুক্তির সমাহার
হায়দরাবাদে ডিজাইন করা এবং গুজরাটের সাভলির অ্যালস্টম কারখানায় তৈরি নমো ভারত ট্রেনে রয়েছে একাধিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে অ্যারোডাইনামিক ডিজাইন, স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা (ATP), ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (ATC) এবং স্বয়ংক্রিয় ট্রেন অপারেশন (ATO)। বর্তমানে এই ট্রেন ছয়টি কোচ নিয়ে চলছে এবং প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর যাত্রা শুরু করে। মেট্রোর মতো ঘন ঘন থামার অসুবিধা এড়াতে একে বিশেষভাবে দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
জনপ্রিয়তার নতুন রেকর্ড
২০২৩ সালের অক্টোবরে ১৭ কিলোমিটার অগ্রাধিকার বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১.৫ কোটিরও বেশি মানুষ এই ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। যাত্রীদের অভিজ্ঞতা বলছে, নমো ভারত শুধু সময় বাঁচাচ্ছে না, বরং দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ করছে। আরও একটি বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে এই করিডোরে মীরাট মেট্রোকেও সংযুক্ত করা হচ্ছে, যাতে শহরের ভেতরের যাত্রা এবং শহরের বাইরে যাওয়া আরও সহজ হয়ে ওঠে।
দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় দ্রুততা ও আধুনিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে নমো ভারত। রেলওয়ের এই নতুন সংযোজন শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, সাধারণ যাত্রীর জন্যও এক বড় স্বস্তি। ভবিষ্যতে করিডোর পুরোপুরি চালু হলে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।














