শ্রেয়া চ্যাটার্জি – কেউ যদি মনিপুরের পানগেই বাজারের অটো স্ট্যান্ডে একবার যান, তাহলে নিশ্চয়ই তার সঙ্গে দেখা হবে। বছর চল্লিশের এক মহিলা যিনি অটো চালাচ্ছেন। পুরুষের মতন শার্ট, প্যান্ট পড়ে অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীদের জন্য। এই মহিলার নাম লাইবি অইনাম। এখন তাকে সমাজে অনেকেই সম্মান করে, কিন্তু তিনি যে সময় তার কাজটা শুরু করেছিলেন আজ থেকে আট বছর আগে সে সময় তাকে নানান রকম কটু কথা শুনতে হয়েছিল।
মানুষজন তার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসত, টিটকিরিও মারত। এত কিছু সহ্য করেও, তিনি তার কাজে অটল ছিলেন। কারণ তাকে এই অটো চালিয়ে সংসার চালাতে হবে, তিনি প্রথম মনিপুরের মহিলা অটো ড্রাইভার। পয়সার অভাবে তার ছেলেকে একদিন স্কুলে পড়া থেকে ছুটি নিতে হয়েছিল। অসহায় এবং অবস্থার চাপে বাধ্য হয়েই ঠিক করেন যে, তাকে অটো চালাতে হবে। মনিপুরী মহিলারা অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের কাজ করেছেন, যেমন তারা শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। তবে মহিলা চালক এই প্রথম। তাকে প্রত্যেকে বলেছেন তার এই জীবিকা থেকে তিনি যেন ছুটি নিয়ে কোন মেয়েলি কাজে যুক্ত হন।
রাস্তার মাঝে ট্রাফিক পুলিশ অনেক সময় তাকে অকারণে দাঁড় করিয়ে সমস্যার মধ্যে ফেলেছেন। শুধু তিনিই নয় তার সন্তানদেরও মা অটো ড্রাইভার হওয়ার জন্য নানান রকম কথা শুনতে হয়েছে। তার স্বামী একজন মদ্যপ তিনি প্রায়ই মদ খেয়ে তার উপর অত্যাচার চালাতেন। তবে শেষমেশ ভালো কথা তার বড় ছেলে এখন গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, ছোট ছেলে সম্প্রতি চণ্ডীগড়ের ফুটবল একাডেমি সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। লাইবি প্রত্যেকটি মহিলার জন্য একজন আদর্শ উদাহরণ তা বলতেই হয়। সমাজের নানান রকম কটু কথা সহ্য করেও তিনি তার কাজে অটল থেকেছেন। একজন মহিলা হয়ে সংসারে একজন পুরুষের জায়গা নিয়েছেন। সংসার করেছেন কাজ করেছেন ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছেন।
সমাজ যতই শিক্ষিত হোক পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এখনো সমাজে নারীর মাথা উঁচিয়ে দাঁড়ানোটা অপছন্দের। আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ জানে নারী যদি একবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, পুরুষ সমাজ তলিয়ে যাবে। তারা এখনো চায় মেয়েরা ঘরের মধ্যে বসে থাকুক। উপার্জনের যদি ইচ্ছাই থাকে তারা ঘরের মধ্যে বসে উপার্জন করুক। হয়তো অনেক পুরুষই এটিকে সমর্থন করবেন না, কিন্তু মনে মনে অনেকেই এই কথাটি মেনে নেবেন। তাদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা বলা নারীরা চাইলে সবকিছু করতে পারে। আর নারীর না চাওয়াটা তার দুর্বলতা নয়।