অফবিট

আজ এপ্রিল ফুল, আমরা প্রত্যেকেই জেনো বোকা বেনে গেছি করোনা ভাইরাসের কাছে

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – করোনা ভাইরাস বোকা বানিয়েছে সবাইকে। আজ এপ্রিল ফুল, কেউ কাউকে বোকা বানাচ্ছে না, কারণ আমরা প্রত্যেকেই বোকা বেনে গেছি করোনা ভাইরাস এর কাছে। একটা অতি ক্ষুদ্র সামান্য ভাইরাস কিভাবে যে এইভাবে প্রত্যেকটা দেশের ওপরে থাবা বসিয়ে যেতে পারে সত্যি তা না দেখলে বিশ্বাস হত না। কেড়ে নিল অনেক কিছু। একে একে কেড়ে নিয়েছে আত্মীয়, প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব, সবাইকে। চারিদিকে শুধু দুঃখ আর দুঃখ। যে মানুষ একসময় নিজেকে শিক্ষিত বলে অহংকার বোধ করত সেই মানুষ আজ হার মেনেছে করোনা ভাইরাস এর কাছে। মাথা নত করে সে তার হার স্বীকার করে চেঁচিয়ে বলছে তুমি চলে যাও, আমাদের মুক্ত করো। করোনা ভাইরাস কি শুনছে আমাদের কথা? না শুনছে না। সে তার ইচ্ছামত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ দেশ থেকে ও দেশ। বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে ক্রমাগত সে বোকা বানিয়ে চলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কেউ কাউকে আজ বোকা বানাচ্ছে না। কারণ প্রত্যেকেই কার্যত বোকা হয়ে ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে আছেন। কিন্তু করোনা ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু, কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু শুধুই কি কষ্ট দিয়েছে আর কি কিছুই দেয়নি সে? একটু হিসাব করে দেখুন করোনা ভাইরাস আমাদের অনেক ভালো কিছু দিয়েছে।

যে স্বামী সকাল থেকে ঘুম থেকে উঠেই তার চোখকে বন্দি রাখতো তার ল্যাপটপের মধ্যে স্ত্রীর দিকে তাকানোর সময় ছিলনা, সেও আজ ঘরবন্দি, কতক্ষণ তাকাবে ল্যাপটপের দিকে? সময় আছে প্রচুর, তাই ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে সে সময় দিচ্ছে তার স্ত্রী এর খুঁটিনাটি হাতের কাজে, কিংবা তার যে সন্তান এতদিন পর্যন্ত বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কাঁদতে কাঁদতে রাতে ঘুমিয়ে পড়তো, সেই বাচ্চাটিও এখন বাবার কাছে গল্প শুনে রাতে ঘুমোতে যায়, কারণ বাবার হাতে রয়েছে প্রচুর সময়।

পাড়ার মোড়ে যে সমস্ত মহিলারা বুকের উপর সায়া বেঁধে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মেয়েটির ব্রা এর ফিতা বেরিয়ে গেছে কিনা তাই নিয়ে সমালোচনা করত, কিংবা যে সমস্ত কাকুরা চায়ের দোকানে গামছা পড়ে বসে বিড়ি খেতে খেতে রাতে দেরি করে ফেরা কোন ছেলের বড়দের সামনে সিগারেট খাওয়া দেখে সমালোচনা করত, সেই সমস্ত কাকু-কাকিমার আজ গৃহবন্দী। নেই কোন সমালোচনা।

যাদের কাছে পাড়ার মুদির দোকানে গিয়ে মুড়ি, চিঁড়ে কেনা প্রচন্ড ব্যাকডেটেড মনে হতো, সামান্য মুদির দোকান থেকে যারা বেশ হাত পাকিয়ে ফেলেছিলেন বড় বড় শপিং মল থেকে শপিং করতে তারাও আজ মুদির দোকানে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে।

যে মেয়েটা রাতের অন্ধকারে একা ফিরতে ভয় পেত, আজ যাদের জন্য ভয় পাবে সেই সমস্ত নরপিশাচরা ঘরের মধ্যে বন্দি। দেশকে সামলাতে আর কোন সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হচ্ছে না, কারণ জঙ্গিরাই আজ ঘরবন্দি।

চাকরি বাকরি, ইঁদুর দৌড়ের পাশাপাশি যখন আলমারিতে রাখা বইয়ের উপর এক আঙ্গুল সমান ধুলো পড়ে যায়, তখন দেখে ভারী কষ্ট হয়। কিন্তু এখন সেই সময় ধুলো ঝেড়ে রবীন্দ্র, বঙ্কিম, শরৎকে কাছে টেনে নেওয়ার। পুরনো হারমোনিয়ামটা কিংবা পুরনো গিটারে একটু সুর তোলা। কিংবা পুরনো ক্যানভাসটার ওপরে ধুলো ঝেড়ে সেটি দেখে নতুন কিছু সৃষ্টি করা। সন্ধ্যে হলে বাড়ির সবাই মিলে বসে লুডো খেলা, ফিরে এসেছে সবকিছু।

ভুঁড়িওয়ালা ঘুষখোর পুলিশ টাও আজ নেমেছে সাধারণ কে বাঁচাতে, কয়েকদিন আগে যে ভুয়ো ডাক্তার মার খেয়েছিল, আজ হয়তো সেও বাঁচাচ্ছে কোন রোগীকে।

পাড়ার যে কাকু টা তার বাড়ির সামনে কোন কুকুর, বিড়াল দেখলে লাঠি দিয়ে তাকে ভাগিয়ে দিতো, তারও হয়তো শরীরে মায়া এসেছে, সে ও তার সঙ্গে কুকুর কেও এক মুঠো ভাত খেতে দিচ্ছে।

মন্দির, মসজিদ নিয়ে আর কোনো রকমের কোনো বিতর্ক নেই, হিন্দুদের ও কোন জমি চাইনা, মুসলিমদের কোন জমি চাই না বোধহয় এখন এমনই পরিস্থিতি। শুধু চাই আমরা সকলে যেন বেঁচে থাকি। মৃত্যু ভয় এমন।

সবশেষে একটা কথা না বললেই নয় পৃথিবী এতদিন দম নিতে পারছিল না। যানবাহন, কল-কারখানার ধোয়ায় সে একেবারে কলুষিত হয়ে পড়েছিল, পৃথিবী এখন প্রাণ খুলে দাম নিচ্ছে। পশুপাখিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজেদের মতো করে। তাদের বাধা দেওয়ার কেউ নেই। কারন মানুষরূপী এই পশুরা আজ গৃহের মধ্যে বন্দী। সত্যিই প্রকৃতির কী অদ্ভুত পরিহাস বন্য জীবজন্তু বাইরে হেসেখেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষরা ঘরের মধ্যে বন্দি।

একবার ভেবে দেখুন মৃত্যুভয় কি সাংঘাতিক, যে ভয় সমস্ত মানুষকে ঘরের মধ্যে একেবারে ঠেসে পুরে রেখেছে। সবাই মৃত্যুভয় জুজু হয়ে রয়েছে এই বুঝি করোনা ভাইরাস থাবা বসালো। আমরা নিশ্চয়ই করোনা ভাইরাস মুক্ত পৃথিবী চাই হয়তো ঈশ্বর, আল্লাহ এবং যিশুখ্রিস্টের কৃপায় তা একদিন হবে, কিন্তু এই ভাইরাস তার ভয়ঙ্কর দিককে যেন মানুষের মনের মধ্যে এমন ভাবে ছাপ ফেলে যায় যে মানুষ এই দিনগুলোর কথা যেন ভুলতে না পারে এবং শুধু তাই নয় এই দিনগুলোর থেকে প্রত্যেকটা মানুষ যেন শিক্ষা নেয়। যেকোনো হিংসা, মারামারি নয়, কোন ধর্মীয় বিভেদ নয়, কোন দলগত পার্থক্য নয় আমরা প্রত্যেকে মানুষ। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা মানুষ।

Related Articles

Back to top button