বড় অসহায় অবস্থায় কেটেছে শৈশব জীবন, যার চলচ্চিত্র দেখে এখনো হো হো করে হেসে ওঠে মানুষ
শ্রেয়া চ্যাটার্জি – মাথায় টুপি পড়ে, হাতে একটা লাঠি নিয়ে, ছোট গোঁফের নিচে ঠোঁটের হাসিটা আজও অমলিন। যে মানুষটা এখনো পর্যন্ত বিশ্ববাসীকে হাসিয়ে চলে, তার নাম চার্লি চ্যাপলিন। বাস্তব জীবনে নিজে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও কি করে এতটা মানুষকে হাসাতেন সেটাই বড় রহস্যের। অভিনয়ের পারদর্শিতায় আমরা আজও মুগ্ধ হই। সিনেমা তো অনেকেই করেন অনেকে ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রী হন কিন্তু সিনেমার মধ্যে শুধুমাত্র মুখাভিনয় আর দেহের অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ও যে মানুষকে হাসানো যায়, চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমা তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। নির্বাক সিনেমার জগতে তারেই দান অনস্বীকার্য।
তার জন্ম তারিখ এবং জন্মস্থান নিয়ে নানান রকম মতপার্থক্য আছে। ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল তার জন্মদিন পালিত হয়। তবে কেউ কেউ মনে করেন, লন্ডনের ওয়ালওর্থে, অথবা কেউ মনে করেন ফ্রান্সে, আবার কারো মতে, ইংল্যান্ডের স্টাফোর্ডসায়ারে ও তার জন্ম হয়েছিল। তার পিতা চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র এবং মাতা হানাহ চ্যাপলিন। দুজনেই মঞ্চে অভিনয় করতেন এবং একইসাথে তারা দুজনেই গান গাইতেন। তবে বাবা-মা’র সম্পর্ক বেশিদিন ভালো থাকেনি। তাই চ্যাপলিন ছোটবেলা থেকেই তার মা-বাবাকে একসঙ্গে পাননি। তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকতেন। তবে হঠাৎ করে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে একটি অনাথ আশ্রম এ ভর্তি করা হয়। তার কিছুদিন পরে তিনি মায়ের দেখা পান, তখনও তার মা অসুস্থই ছিলেন। তাই তাকে তখন বাবার কাছে পাঠানো হলেও বাবাও তাকে সুস্থ জীবন দিতে পারেননি। কারণ তার বাবা একজন মদ্যপ ছিলেন। সবমিলিয়ে বড় অসহায় অবস্থায় কেটেছে চ্যাপলিনের শৈশব জীবন। রোজগারের তাগিদে মাত্র আট বছর বয়সেই তিনি ‘দ্য এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’ নামক একটি যাত্রাদলে নাম লেখান। ১৯১৪ সালে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘মেকিং এ লিভিং’ মুক্তি পায়। তার একটি বিখ্যাত বক্তব্য হলো ‘আমি বিশ্বাস করি যেদিন আমি কোন কাজ করবো না সে দিনের রাতের খাবারটা আমার প্রাপ্য নয়’। বৈবাহিক জীবন খুব একটা সুখের ছিল না। জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন। তা সত্বেও সাধারণ মানুষকে হাসাতে তিনি এতোটুকু খামতি রাখেননি ।
তার নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র গুলি হল দ্য কিড, দ্যা ওম্যান অফ প্যারিস, দ্য গোল্ড রাশ, দ্য সার্কাস, সিটি লাইটস, মডার্ন টাইমস, দ্য গ্রেট ডিক্টেটর প্রভৃতি। তবে দ্য গ্রেট ডিক্টেটর এ তিনি অনেক মাত্রায় রাজনৈতিক হয়ে যান এবং সর্বোপরি হিটলারকে ব্যঙ্গ করেন। এরপর থেকেই তিনি সমালোচনার মধ্যমণি হয়ে ওঠেন।
তার এই অসাধারণ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি অনেক সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৭২ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে চ্যাপলিনকে ‘গোল্ডেন লায়ন’ পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ‘ডক্টর অফ লেটার্স’ ডিগ্রী লাভ করেন। আরো পুরস্কারে তার ঝুলি পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তার অভিনয় দেখে আমরা আজও মুগ্ধ হই। আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেকেই আজও তার চলচ্চিত্র দেখে একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠি।