শ্রেয়া চ্যাটার্জি – তরমুজ সাধারণত লালই হয়। উপরের অংশটি ভাঙলেই বেরিয়ে পড়ে টুকটুকে লাল তরমুজ। কিন্তু নিতেশ বোরকার নামে ২৮ বছরের গোয়ার এক বাসিন্দা ফলাচ্ছেন হলুদ রঙের তরমুজ। উপরের অংশটা সবুজ থাকবে, ভাঙলেই লাল টুকটুকে রং এর জায়গায় বেরিয়ে পড়বে হলুদ রং। ৪×৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তিনি প্রায় ২৫০ টি হলুদ তরমুজ ফলিয়ে ফেলেছেন। কোন রকম কৃত্রিম সার ব্যবহার করা হয়নি ১০০% জৈবসার ব্যবহার করেই এমন ফসল ফলানো হয়েছে। ৪,০০০ টাকার কাছাকাছি খরচ করে ৩০,০০০ টাকারও বেশি রোজগার করেছেন নিতেশ।
নিতেশ অটো মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিপ্লোমার শেষ করে একটি ইনসিওরেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু মাটির নেশায় তিনি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। তিন বছর আগে তিনি তার চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন পুরোপুরি চাষবাসের কাজে। পেশা ছেড়ে নেশাকেই বেছে নেন। বালক হিসেবে তিনি ছোটবেলা থেকেই তাঁর পিতা এবং পিতামহ কে দেখতেন চাষ করতে। ছোটবেলা থেকেই এই যুবক বেশ কষ্টসহিষ্ণু ছিলেন। তার দাদু ছিলেন তাদের পরিবারের প্রথম কৃষক।
সাধারণত ধান, কাজুবাদাম চাষ করতেন তারা জমিতে। দাদু মারা যাবার পরে তাদের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। তার বাবা এবং তার পক্ষে পুনরায় চাষাবাদ শুরু করাটা খুব সমস্যাজনক ছিল। তবে নির্দিষ্টভাবে পুনরায় চাষাবাদ শুরু করলে তখন তিনি ধান এবং কয়েকটি সবজি দিয়ে শুরু করেছিলেন। যার তালিকায় ছিল জুকিনি, লেটুস, ব্রকলি। যা সাধারণ সবজি থেকে একটু অন্যরকম। ২০১৭ সালে তার এক বন্ধু তাকে বলেছিল, সেই বন্ধুর কাছে হলুদ তরমুজের বীজ আছে। সব সময় নতুন কিছু চাষের দিকে একটা আকাঙ্ক্ষা তার বরাবরই ছিল। আর এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই বন্ধুর থেকে হলুদ তরমুজের বীজ কিনে নিয়েছিলেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখতেই হয় চাষিরা কিন্তু তাদের প্রথম চেষ্টাতেই সব সময় সফল হয়না। তার নিজের জমিতে চাষ করলেও তিনি সফল হননি।
তার পরে তার বন্ধুর থেকে একটি জমি তিন মাসের জন্য নিয়ে সেখানে তিনি চাষাবাদ শুরু করেন। ৭০ দিন পরে সেই গাছ থেকে ফল হওয়া শুরু করলেও অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য ফল নষ্ট হয়ে যায়। তারপরে তিনি একটি পাহাড়ি জায়গা ঠিক করলেন যেখানে তার পরিবারের লোকজনেরা কাজুবাদাম চাষ করতেন। অনেকেই বলেছিল এমন অনুর্বর পাহাড়ি জমিতে তরমুজ চাষ হবে না। কিন্তু তিনি জানতেন পাহাড়ি জমির পাশে রয়েছে বন-জঙ্গল। তাই একটু কষ্ট করলেই এই জমিকে উর্বর করে তোলা যাবে এবং তরমুজ চাষের জন্য উপযুক্ত করে তোলা যাবে।
শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর উপদ্রবই না, পাখিদের উপদ্রব থেকে ফল কে বাঁচানোর জন্য তিনি প্রতিদিন সকাল ৬ টা- ৭.৩০ টা পর্যন্ত জমিতেই থাকতেন। অন্যান্য বন্য জীবজন্তু থেকে জমি কে রক্ষা করার জন্য তিনি চারিদিকে আলোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, “এখনো পর্যন্ত প্রায় ২০০০ মানুষ তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। আমি তাদেরকে আমার ধারণার কথা বলেছি এবং আমার জমি ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। চাষবাসের উপরে তথাকথিত শিক্ষা আমার নেই। আমি নিজেই চাষ করতে করতে শিখেছি। আমি বিশ্বাস করি জমি আমার একমাত্র শিক্ষক।”