শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ২৮৩ বছর পরে এমন ধ্বংসলীলা দেখল কলকাতাবাসী। বুলবুল, ফনি এবং বেশ কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া আয়লাও মহানগরীর এতটা ক্ষতি করতে পারেনি। উপড়ে গেছে পাঁচ হাজারেরও বেশি গাছ। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় এমন ঝড় আগেও গেছে। সেখানকার মানুষ খানিকটা প্রতিবছরই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। কিন্তু শহর কলকাতার বুকে এমন বিধ্বংসী ঝড় মানুষ কল্পনাও করতে পারেননি। সাজানো-গোছানো প্রানের শহর কল্লোলিনি কলকাতা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পড়েছে। বেরিয়ে পড়েছে তার কঙ্কালসার দেহ। বড় বড় বৃক্ষ উপড়ে রাস্তার ওপর ইলেকট্রিকের তার সমেত ছিঁড়ে পড়েছে। ঝড় চলে যাওয়ার পরে বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। চারিদিকে মানুষের হাহাকার।
১৭৩৭ এবং ১৮৬৪ এই দু’টি বছরে পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, এমনটাই ইতিহাস বলছে। সেই সময় বঙ্গদেশে ১৭৩৭ সালের ১১ ই অক্টোবর সাত সকাল বেলা দিয়ে এসেছিল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। পুরনো নথি পত্র ঘাটলে জানা যায়, এই ঝড়ে কলকাতার মূলত উত্তরভাগ একেবারে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। ৪০ ফুট উঁচু হয়ে গিয়েছিল গঙ্গার জল। টানা ৬ ঘণ্টা এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছিল। এর পরে ১৮৬৪ সালের ৫ ই অক্টোবর আবারো সাইক্লোন আছড়ে পড়েছিল বাংলার বুকে। তবে সে বছর ঝড় মারাত্মক ক্ষতি করেছিল খেজুরি বন্দর এবং হিজলি বন্দর। কিছু ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায়, কলকাতা শহরে ঝড়ের ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল ৯০ হাজার টাকার খানিক বেশী।
প্রকৃতির ধ্বংসলীলার কাছে যে মানুষ বড় অসহায়। তা আমফান বুঝিয়ে দিয়ে গেল। কলকাতায় থাকা বড় বড় ইমারত কিংবা ফ্ল্যাট বাড়িতে যতই সুযোগ-সুবিধা থাকুক, প্রকৃতির কাছে কংক্রিটের দেওয়ালে থাকা সুখে স্বাচ্ছন্দের মানুষ আর রাস্তায় থাকা গরীব মানুষ সবই যেন এক হয়ে যায়। করোনা ভাইরাস আর আমফান দুই মিলে যেন পশ্চিমবঙ্গবাসীর একেবারে নাজেহাল অবস্থা। সব মিলিয়ে এখন আমাদের একটাই প্রার্থনা সেরে ওঠো পশ্চিমবঙ্গ, সেরে ওঠো কলকাতা।