ঋদ্ধিমান রায়: দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ লক্ষ ছাড়ালেও মৃত্যু হারও কিন্তু ক্রমাগত নিম্নগামী(১.৮৯ শতাংশ) যা দেশের জন্য যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। দেখা যাচ্ছে ভারতের ৮০ শতাংশ করোনা আক্রান্ত রয়েছেন মাত্র ১০টি রাজ্য থেকে। সেই অনুযায়ী এই ১০ টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই তিনি করোনায় মৃত্যু হার ১ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য মাত্রা রাখেন রাজ্যগুলির কাছে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে আশাপ্রদ তথ্য হল দেশে দৈনন্দিন করোনা পরীক্ষা আগের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ানো হলেও পজিটিভ কেসের সংখ্যা তুলনায় হ্রাস পাচ্ছে। WHO এর তরফে ভারতে গোষ্ঠী সংক্রমণের যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা এখনো পর্যন্ত ঠেকিয়ে রেখেছে ভারত। অন্যান্য করোনা আক্রান্ত দেশগুলির তুলনায় করোনা সংক্রমণে মৃত্যুহার যথেষ্ট কম আমাদের দেশে। চিন আমেরিকা ইতালিকে নাকের জলে চোখের জলে করে ছেড়ে দেওয়া করোনা ভারতে তেমন থাবা বসাতে পারে নি কেন এ পর্যন্ত, একটি গবেষণা থেকে অনুমান করা হচ্ছে এর কারণ।
গবেষণায় দাবি, মানুষের শরীর সর্দিজ্বর ও কাশি প্রতিরোধে সক্ষম হলে কোভিদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও সক্ষম। একজন মানুষ আগে সাধারণ সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকলে করোনা ভাইরাসকে চিহ্নিত করে প্রতিঘাত করার ইমিউনিটি রয়েছে তার শরীরে। সর্দি জ্বর বা কাশি আমাদের দেশের মানুষের কাছে এক প্রকার জল-ভাত! এই রকম সর্দি কাশিতে ভুগলে সাধারণ ভাবে ঘরোয়া টোটকাতেই সুস্থ হয়ে যাই আমরা। অতএব, গবেষণা অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের শরীরে পূর্বেই বিদ্যমান করোনাকে প্রতিঘাত করার মত এন্টিবডি।
সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি বলছে– শরীরে সর্দি-কাশি-জ্বরের টি সেল তৈরি হলে তা কোভিদের স্পাইক প্রোটিনকে চিহ্নিত করে ফেলে। এই টি সেল যত শক্তিশালী হয়, তত সহজে করে ফেলতে পারে করোনাকে কাবু। এই কারণে এক এক রোগীর দেহে করোণার আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হয় বলে জার্নালে দাবি করা হয়েছে। বহুক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অসংখ্য কোভিড পজিটিভের শরীরে কোনোরকম উপসর্গই নেই! আবার সেই অবস্থাতে কোয়ারেন্টিনেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন প্রচুর মানুষ।
যদিও এই তত্ত্বটি এখনো প্রাথমিক গবেষণা পর্যায়েই রয়েছে। এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। অনেক গবেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, মানুষের শরীরে কোভিডের এন্টিবডি আগে থেকেই থাকলে তাহলে বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হল কীভাবে।
গবেষণাটি এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বৈজ্ঞানিকেরা। তবে তত্ত্বটি নিশ্চিত ভাবে প্রমাণিত হলে কোভিড ১৯ এর মোকাবিলা করার এক অনন্য দিক খুলে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তত্ত্বটির গ্রহণযোগ্যতা থাকলে ধরে নেওয়াই যাবে, তাহলে কি ভ্যাকসিন প্রয়োগের পূর্বেই ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের শরীরে তৈরি রয়েছে কোভিড ১৯ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার মত ইমিউনিটি সিস্টেম?