ইভেন্টনিউজ

স্বাধীনতা দিবস অর্জনে বীরদের আত্মবলিদান!

Advertisement

ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ইংরেজরা ভারতে আগমন করে কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তারা ভারতের রাজনৈতিক অন্দরে প্রবেশ করে নানা ষড়যন্ত্র ও কূটনৈতিক কলাকৌশলের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিতে সমর্থ হন এবং ভারতীয় জনগণের উপর শোষণ,নির্যাতন চালাতে থাকে।ইংরেজদের এই অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রনোদিত ভাবে সর্ব ধর্মের মানুষ রুখে দাঁড়িয়ে ছিল।বৃটিশ ঔপনিবেশিদের হাত থেকে ভারতবর্ষ কে রক্ষা করে স্বাধীন ভারত গড়তে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আত্মবলিদান দিয়েছিলেন বহুমানুষ।

৯ই আগষ্ট শুরু হওয়াভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন যে এতো ব্যাপক রূপ নেবে তা ইংরেজ কল্পনা ও করতে পারে নি।
১৯৪৭সালে দেশ স্বাধীন হয়। ১৮৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নানা পর্যায়ে আমরা অনেকের পরাক্রমের কথা জানি, অনেকেই আত্মহুতি দিয়েছিলেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সময় ই প্রথম স্বাধীনতার বিউগল বেজে উঠেছিল। আর তারপর মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে লবণ, সত্যাগ্রহ ও ডান্ডী অভিযান,নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে “আজাদ হিন্দ ফৌজ “প্রতিষ্ঠা, ভগত সিং,সুখদেব রাজগুরু,চন্দ্র শেখর আজাদ, চাপেকর ভাইদের মতো অসংখ্য নবীন ভাইদের আত্মবলিদানের মধ্যে দিয়ে ভারতের স্বাধীনতা এসেছিলো।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্ব কনিষ্ঠ শহীদ ছিলেন ক্ষুদিরাম বোস।তাঁর সংগ্রাম ছিল বৃটিশদের কাছ থেকে ভারতের জন্মাধিকার ” স্বাধীনতা ” ছিনিয়ে নেওয়া।ওয়াটসন, ও Bomfylde,এই দুই বৃটিশ কে হত্যা ও কিংসফোর্ড এর গাড়িতে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করার অভিযোগে তাঁকে ফাঁসি বরণ করতে হয়।

মহাত্মা গান্ধীর আইন অমান্য আন্দোলন কে কেন্দ্র করে বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে থাকে।বাঙালি তরুণরা মৃত্যু ভয় কে তুচ্ছ করে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।এমন ই একজন বিপ্লবী হলেন মাষ্টার দা সূর্য সেন।তিনি চট্টগ্রামকে বৃটিশ শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য গঠন করেন চট্টগ্রাম বিপ্লবী বাহিনী বা চিটাগাঙ রিপাব্লিক্যান আর্মি।চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন করে স্বাধীন চিটাগাঙসরকার গঠনের ঘোষণা করেন।১৯৩৩ সালে সূর্য সেন গ্রেফতার হন।১৯৩৪ সালে ট্রাইবুনালের বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয় এবং চরম নির্যাতনের পর ৯ ই আগষ্ট তাঁর ফাঁসি দিয়ে তাঁকে বঙ্গোপসাগরে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

স্বাধীনতা আন্দোলনে বীরদের মধ্যে বিনয় বাদল দিনেশের নাম ভারতবাসীর মনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা। দেশের প্রতি তাঁদের আত্মত্যাগ
চির স্বরণীয় হয়ে আছে।১৯৩০ সালে ৮ই ডিসেম্বর এই ত্রয়ী রাইটার্স বিল্ডিং তখনকার ইংরেজ দের হেড কোয়ার্টারে ঢুকে অত্যাচারী ইংরেজ জেরারেল সিস্মসন কে হত্যা করেন,।সুভাষ চন্দ্র বোসের সংগঠিত “বেঙ্গল ভলিন্টিয়ার্স এ যোগদান করেন বিনয়,বাদল, দীনেশ। দেশের সেবায় এদের আত্মবলিদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা।

১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বেগম হজরত মহল ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনে বাঙালি নারীদের ভূমিকা ও ছিলো প্রদীপের সলতের মতো।নিজেকে ভবিষ্যতের নিরাপত্তাকে দূরে সরিয়ে বিপ্লবের পথে এগিয়ে দিয়েছিলো তাদের স্বামী, সন্তান, ভাইদের। অন্য দিকে তারা কখন ও ঘরের ভেতর থেকে, কখন ও ঘরের বাইরে বেরিয়ে বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

বৃটিশদের বিরুদ্ধে নারী লড়াইয়ের কথা উঠলেই মনে পরে প্রিতিলতা ওয়েদ্দেদারের নাম। চট্টগ্রামের মাষ্টার দা সূর্য সেনের অন্যতম সক্রিয় সঙ্গী ছিলেন প্রিতিলতা। মাষ্টার দার নেতৃত্বে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন তিনি।অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সায়ানাইড খেয়ে আত্মবলিদান দেন।

অপর স্বাধীনতা সংগ্রামী শহীদ কনকলতা বড়ুয়া।উনি ছিলেন প্রথম নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি বৃটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন।বৃটিশ অফিসের সামনে ভারতীয় পতাকা তোলার উদ্দেশ্য তিনি একটি ছোট দল গঠন করে এগিয়ে যান বৃটিশ অফিসের দিকে।সেই সময় ইংরেজ পুলিশের গুলিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।এছাড়াও বীনা দাস যিনি গভর্ণর স্ট্যানলি জ্যাকসন কে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিলেন।

মাতঙ্গিনী হাজরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীদের জীবন দানের প্রতীক।বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে মিছিলের পুরোভাগে থাকাকালীন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বীরদের আত্মবলিদানের কথা এই অল্প কথায় বলে বা লিখে শেষ করা যায় না।ইতিহাসের পাতায়, পাতায় তাদের নাম, মানুষের মনের খাতায় তাঁদের নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা আছে।
স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা তোলার মর্যাদা পেয়েছিলেন সেনাপতি বাপাদ তিনি ছিলেন গান্ধী বাদী নেতা।মুলসি সত্যাগ্রহের নেতৃত্ব দেবার জন্য তাঁকে সেনাপতি বলে ডাকা হতো।ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেসমালোচনা ও ভাঙচুর করার অভিযোগে তিনি দীর্ঘদিন জেল খেঁটেছিলেন।

ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে জন্য যে দীর্ঘ সংগ্রামের যে অসংখ্য মানুষের আত্মবলিদান তাদের অনেকের নাম ই মনে রাখে নি ইতিহাস।। বিশ্বের ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছেন অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী নায়ক – নায়িকা।তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো স্বাধীন ভারত গড়ে তোলা,দেশ কে ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তি দেওয়া।

Writen By : ঝুমা দাস

Related Articles

Back to top button