করোনায় (Coronavirus) আক্রান্ত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। করোনা ভয়ংকর রূপ নিয়ে কোমাতে পরিণত হয়। তার মধ্যেই সিজারিয়ান সন্তান প্রসব করেন কেলসি। সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে কোমা থেকে ফিরে তিন মাস পর সেই সন্তানকে কোলে পেলেন মা।
কেলসি টাউনসেন্ড, আমেরিকার উইসকনসিনের বাসিন্দা। প্রথমে করোনা। তার পর কোমা। প্রায় নিঃশেষ হতে বসেছিল জীবন। কোমার মধ্যেই নিজের চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেন । এর পর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। সবাই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমন সময় যেন মিরাকল হয়ে গেল। প্রায় তিন মাস পর সুস্থ হয়ে ফিরে এলো মা। সন্তানকে জড়িয়ে ধরলেন বুকে।
তবে এই তিন মাস পর ফিরে আসার পেছনে কঠিন পরিস্থিতি আর দীর্ঘ লড়াইয়ের পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। ৪ ঠা নভেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন কেলসি। তারপর থেকেই তার শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে কেলসির অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছিল। একদিকে তার সন্তান প্রসবের সময়েও ছিল আসন্ন। অন্যদিকে কোমায় থাকাকালীন অবস্থায় সন্তান প্রসব করলে যদি সন্তানের মস্তিষ্ক বা অন্য অংশের ক্ষতি হয়ে যায় , সেই বিষয় নয়েও দ্বন্দ্বে ছিলেন চিকিৎসকরা। সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যেই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেন কেলসি। পুরো নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস এই টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর ডিসেম্বরের শেষ দিকে কেলসির চিকিৎসকরা মনে করেছিলেন তার ডাবল লাংস ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজন পড়তে পারে। কিন্তু এর পরই ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। কয়েকদিনের পর হাত-পা নাড়তে শুরু করেন কেলসি। রোগীর মনোবলই তাঁকে দ্রুত সুস্থ করে তোলে। দিন কয়েকের মধ্যেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে বের করে তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। এমনটাই জানান তার চিকিৎসক জেনিফার ক্রুপ।
করোনার মধ্যে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মানার পরেও কেলসি এবং তার স্বামী দুজনেই করোনায় আক্রান্ত হন। পরে তার স্বামী সুস্থ হয়ে বারি ফিরে আসেন কিন্তু কেলসির অবস্থার অবনতি ঘটে দিন দিন। কেলসির স্বামী ডেরেক টাউনসেন্ডের কথায় তাদের সন্তান লুসি এতদিন তার মাকে মিস করেছে। সবসময় চারিদিকে তাকিয়ে সে কিছু যেন খুঁজত। মাকে দেখে তার চোখগুলো যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ঠোঁটের কোণে হাসিও এসেছে। হয়তো সন্তানের এই ছোট্ট ছোট্ট আবেগগুলোই ফিরিয়ে এনেছে তার মাকে।