পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছিল। দেশে লাগাতার পেট্রোল ডিজেলের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষ সমস্যায় রয়েছে। অবশ্য দীপাবলির ঠিক আগের দিন কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ডিজেলের উপর শুল্ক কিছুটা কম করেছিল। কিন্তু তার আগে নিয়মিত মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বাজেট সম্পূর্ণভাবে বিগড়ে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত সরকারের তরফে পেট্রোল আর ডিজেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি কম করার পর বেশিরভাগ রাজ্যে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কম করা হয়েছে। এর ফলে বহু রাজ্যে এখন পেট্রোলের দাম ১০০ টাকা প্রতি লিটার এবং ডিজেলের দাম ৯০ টাকা প্রতি লিটারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে।
অন্যদিকে ইন্ডিয়া টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকাতেও অক্টোবর মাসের শেষে পেট্রোলের দাম ৮৫ টাকা প্রতি ব্যারেল ছাড়িয়েছিল। এই অবস্থায় বাইডেন সরকার এই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে নতুন রণনীতি তৈরি করছে। আসলে বাইডেন সরকার ‘বাইডেন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইউএস স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (SPR)’ জারি করার কথা ভাবছে। কিন্তু এই ইউএস স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ কী? যা জারি করার ভাবনা চিন্তা করছে আমেরিকা!
১৯৭৫ সালে আমেরিকায় প্রথম ইউএস স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ তৈরি করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া যুদ্ধ এবং আপাতকালীন পরিস্থিতিতে তেলের দাম কম করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। আরব অয়েলে নিষেধাজ্ঞার পর যখন তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল, সেই সময় আমেরিকার অর্থনীতিতে বিপুল ক্ষতি হয়। আর এই নিষেধাজ্ঞার পর তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই এসপিআরের ব্যবহার হয়েছিল। এছাড়াও মেক্সিকোর খাড়ি এলাকাতে চক্রবাত হয় আর সেই সময়েতে সরকার যথেষ্ট লোকসান হয়েছিল, সেই সময়ও এই এসপিআরের ব্যবহার হয়েছিল।
স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ আমেরিকার রিফাইনিং আর পেট্রোকেমিক্যালের কাছাকাছি অবস্থিত, এর ফলে প্রত্যেকদিন ৪৪ লাখ ব্যারেলের তেল পাঠানো যেতে পারে। এর সঙ্গেই যদি সেই দেশের রাষ্ট্রপতি চান, তাহলে ১৩ দিনের ভেতরই এই তেল আমেরিকার বাজারেও পাঠানো যেতে পারে। ফলে যখনই অনলাইনের মাধ্যমে এই তেলের নিলাম করা হয়, তো অন্য জ্বালানি কোম্পানিগুলি তাতে আলাদা করে বুলি লাগায়৷ আর এই সময়ের আরো বড় বিশেষত্ত্ব হল এই সময় কোম্পানিগুলি না শুধু ক্রুড অয়েল নেয়, বরং পরে তা সুদ সহ ফেরত ও দিয়ে দেয়।
সম্প্রতি আমেরিকার এই পদ্ধতির সঙ্গেই চিনও আপাতকালীন তেল রিজার্ভ করার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছে। এই অবস্থায় যদি আমাদের দেশ ও নিজের তেল ভাণ্ডারকে রিলিজ করে দেয় তো তাতে না শুধু ভার বরং পুরো বিশ্বে পেট্রোল ডিজেলের দাম কমতে পারে। শুধু আমেরিকা নয়, এ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি’ ২৯ সদস্য দেশের কাছে স্ট্র্যাটেজিক তেল ভান্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ শামিল রয়েছে। এই দেশগুলি ৯০ দিনের মোট তেল আমদানির সমান এমার্জেন্সি রিজার্ভ করে রাখতে পারে। চিন আর আমেরিকার পর তৃতীয় দেশ হিসেবে জাপানেক কাছে সবচেয়ে বেশি এমারজেন্সি তেল ভান্ডার রয়েছে। উল্লেখ্য,ভারতে আজ তেলের দাম অপরিবর্তিতই থাকছে। আইওসিএলের প্রকাশিত দাম অনুযায়ী আজ কলকাতায় পেট্রোলের দাম ১০৪.৬৭ টাকা প্রতি লিটার এবং ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৮৯.৭৯ টাকা। অন্যদিকে রাজধানী দিল্লিতে আজ পেট্রোলের দাম ১০৩.৯৭ টাকা প্রতি লিটার এবং ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৮৬.৬৭ টাকা।