নিউজ

ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বহু প্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে যেসমস্ত দুর্গাপূজা!

Advertisement

আর কিছুদিন পরেই বাঙালি সবথেকে বড় দুর্গাপুজোর শুভারম্ভ। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ চলছে জোর কদমে আর জানান দিচ্ছে মা আসছে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই দুর্গাপুজো চলে আসছে দিন যত এগিয়েছে আস্তে আস্তে পাল্টেছে শহর থেকে শহরতলীর পুজো সংস্কৃতি। নানারকম আলোকসজ্জায় শহর সেজে ওঠে পুজোর জোয়ারে। আর সাবেকি বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে যোগ হয়েছে নানারকম থিম পুজো।

ইতিহাস থেকে জানা যায় মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপূজার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। 11শ শতকে মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির দুর্গা ভক্তি তরঙ্গিনী নামক গ্রন্থে দুর্গা বন্দনা পাওয়া যায় তবে প্রথম দুর্গাপুজো শুভারম্ভ হয়েছিল 1510 সালে কোচবিহারের কুচ বংশের রাজা বিশ্বসিংহের হাত ধরে। আবার 1610 সালে কলকাতায় বারিসার রায়চৌধুরী পরিবারের প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেন।

প্রাচীনকালের সেই দুর্গাপুজোর সৃষ্টি হলেও ক্রমে ক্রমে রাজা বা জমিদারদের মৃত্যুর পর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল সেখানকার পুজো কিন্তু এখনও কিছু প্রাচীন দুর্গাপুজো আছে যেখানে রাজা বা জমিদারদের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবাররা সেই পুজো নিজের দ্বায়িত্বে তুলে নিয়েছেন ।

1) বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুর্গাপুজো হলো পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মায়ের পুজো। দেবী মৃন্ময়ী ছিলেন মল্লভূম রাজ্যের রাজরাজেশ্বরীমুল্ল রাজবংশের কুলদেবী।মাদ্রাসা জগতমল্ল 997 খ্রী এই পুজোর প্রবর্তন করেন। এখানে দুর্গাপ্রতিমার গড়ন কিছুটা আলাদা হয় প্রচলিত দুর্গামূর্তির চেয়ে। রাজবাড়ির পুজো যে দেবীপটের ব্যবহার করা হয় তা স্বতন্ত্র।

2) আরেকটি প্রাচীন দুর্গাপুজো হল বর্ধমানের কীর্তিচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত সর্বমঙ্গলা মন্দিরের পুজো। এই দূর্গাপ্রতিমা একটু অন্যরকম এখানের মা দুর্গা অষ্টদশভূজা সিংহবাহিনী। 1820 সালে প্রতিষ্ঠিত রাধাবল্লভ বাড়ির শ্বেতপাথরের পুজো দেখার মতোন।

3) আবার আরেকটি প্রাচীন পুজো হলো কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার গঙ্গাটিকুরি গ্রামে ইন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় – এর পুজো যা শুরু হয় 1885 সালে।

4) দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রাচীন দুর্গাপুজো গুলির মধ্যে অন্যতম হলো বালুরঘাটের কংগ্রেস পাড়ার পাল বাড়ি দুর্গাপুর আনুমানিক 350 বছর পূর্বে আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজের বাড়িতেই এই পুজো শুরু করেন গৌরী পাল। গৌরী পাল ওতার উত্তরসূরিদের অবর্তমানে প্রায় 80 বছর আগে এই পুজোর দায়িত্ব নেন সেখানকার প্রতিবেশীরা এই পুজোর বিশেষত্ব হল নবমী ও দশমীর দিনে দেবীকে পান্তা ভাত ও বোয়াল মাছের ভোগ দেওয়া হয়। কথিত আছে এখানে দেবীর কাছে নিষ্ঠাভরে কিছু মানত করলে তা পূরণ হয়।

5) বর্তমান কলকাতার সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপুজোটি হয় বড়িশার সাবর্ন রায়চৌধুরী বাড়িতে। এছাড়াও দ্বিতীয় প্রাচীন দুর্গাপুজো হলো শোভাবাজার এর দুর্গাপুজো।

6) 505 বছরের প্রাচীন আরেকটি দুর্গাপুজো জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পুজো। প্রতীকী নরবলির জন্য আজও এই পুজো সমান আকর্ষণীয়। কোচবিহারের রাজপরিবারের সদস্য বৈকন্ঠপুর রাজবাড়ির সদস্য মিলিয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন কথিত আছে দুই রাজপরিবারের বংশধর বৈকুন্ঠপুর এর জঙ্গলে মা ভগবতী মূর্তি গড়ে দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন পুজোর রীতি অনুযায়ী পাঠাবলি না দিয়ে পরিবারের কোন এক সদস্যকে দেবীর উদ্দেশ্যে নরবলি দিয়ে উৎসর্গ করেছিলেন।

আর এভাবেই সময়ের সঙ্গে নিজেদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে দুর্গাপূজা। সাবেকী থিম মিলেমিশে একাকার হয়েছে। কবি নজরুলের কাব্যেও দুর্গা ভাবনার কথা উঠে এসেছিল তার প্রথম কাব্য অগ্নিবীণার আগমনী কবিতায়। কবির স্বদেশের বুকে রণরঙ্গিনী দশভূজা আহ্বান করেছিলেন-

” আজ রণরঙ্গিনী জগৎমাতার দেখো মহারন
দশ দিকে তার দশহাতে বাজে দশ প্রহরণ । পদতলে লুটে মহিষাসুর
মহামাতা ঐ সিংহবাহিনী জানাই আজকে বিশ্ব বাহিনী….”

আসলে মহিষাসুর তো হিংসা বিদ্বেষ সমস্ত রকম অশুভ শক্তির প্রতীক তাই এগুলিকে দূর করে মনের ভিতর শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত করায় হলো প্রকৃত দুর্গাপুজো।

Written by – দেবস্মিতা ধর

Related Articles

Back to top button