বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য বলে আদিমতম বৃক্ষটি হল বট। বাংলার শত-সহস্র বছরের ঐতিহ্য রয়েছে বটগাছকে ঘিরে। কলকাতার ইতিহাসকে পরম যত্নে যেমন লালন করেছিল ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন ট্রি’। শহরের শতাব্দীপ্রাচীন বটবৃক্ষ। শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনের সেই ‘বৃদ্ধ’বটের বয়স হয়েছিল প্রায় ২৭০ বছর। কিন্তু সেই ইতিহাসকে উপড়ে দিল ২০২০।
এ বছরে কী হয়নি! এত বছরে যা কেউ দেখেনি ২০২০তে এসে এমনই কিছু ঘটনার সাক্ষী হতে হল। করোনা, লকডাউন, আমফান। দাপটে কেউ কারও থেকে কম নয়। কিন্তু প্রকৃতিকে বশ্যতা স্বীকার করানো ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন ট্রি’কে উপড়ে দিল আমফান। সুপার সাইক্লোনের দাপট ডাল নোয়াতেই হল বৃদ্ধ বটবৃক্ষটিকে।
মহানগরের সবচেয়ে প্রাচীনতম গাছ এটি। পৃথিবীজোড়া খ্যাতি ছিল। গিনেস বুকেও নাম রয়েছে ২৭০ বছর বয়সী বটগাছটির। আয়লা-ফণীর মতো সাইক্লোনের ঝড়ঝাপ্টা সহ্য করে নিয়েছিল এতদিন। বোটানিক্যাল গার্ডেনের পুরনো রেকর্ড থেকে জানা যায়, এই গাছের জন্ম ১৭৫০ সাল নাগাদ। অর্থাৎ ১৭৩৭-এর ভয়াবহ সাইক্লোনের সময় তার জন্ম হয়নি। তবে, ১৮৬৪-র ভয়াবহ সাইক্লোনকে হারিয়েছে সে। কিন্তু গিনেস বুকে নাম তোলা এই বটগাছের পুরনো অংশের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেন বা শিবপুর বি গার্ডেন নামে পরিচিত এই বিশাল উদ্যানটিতে প্রায় ১৪০০ প্রজাতির প্রায় ১৭ হাজার গাছ রয়েছে। উদ্ভিদপ্রিয় মানুষদের কাছে এই স্থান অমরাবতীর চেয়ে কম কিছু নয়। ২৭৩ একর জমিতে শোভাবর্ধক গাছ ছাড়াও রয়েছে নানা দুষ্প্রাপ্য গাছও। কিন্তু উদ্যানের ‘চোখের মণি’ ছিল শতাব্দীপ্রাচীন সেই বটগাছ। শিকড় সমেত উপড়ে যাওয়া গাছের ক্ষয়ক্ষতি মাপতে গিয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষের মত, ক্ষতি অপরিসীম।
আড়াই শতক পেরনো গাছটির পরিধি ৩০০ মিটার। দেড় একর জমির উপর শত শত ঝুরি নিয়েই এতকাল দাঁড়িয়ে ছিল এই সুবিশাল ‘দ্য গ্রেট ব্যানিয়ন ট্রি’। শতাব্দীপ্রাচীন কাঠামো ভাঙল আরও অনেক শাখাপ্রশাখা নিয়েই। ২০২০ ভাঙল শহরের এক ইতিহাসকে। কিন্তু পুরোনো ক্ষতে তো আর প্রলেপ কাজ করে না। তবু আগামীর আশা রাখছে পরিবেশপ্রেমীরা।