বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এই মুহূর্তে অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তাঁর শরীরের দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে চিকিৎসকরা তাঁর ইউরিন আউটপুট রেস্টোর করার চেষ্টা করছেন । বিশেষজ্ঞ নেফ্রোলজিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী শুরু হয়েছে সৌমিত্রবাবুর ডায়ালিসিস। তবে ডায়ালিসিসে যদি কাজ না হয় তাহলে রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির গাইডলাইন অনুযায়ী অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হবে। বর্ষীয়ান অভিনেতার জন্য গঠিত মেডিক্যাল টিমের প্রধান ডঃ অরিন্দম কর জানিয়েছেন যে, সৌমিত্রবাবুর রেনাল ফাংশন একদম ভালো নেই। এছাড়া গত 22 দিন ধরে নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকার ফলে তাঁর শরীরে অন্যান্য কিছু সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই কারণে তাঁর শরীরে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু বয়সজনিত কারণে এই অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
ফুসফুস ও মস্তিষ্কে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক সমস্যা জটিলতর হয়ে উঠেছে। ফলে তিনি এই মুহূর্তে অচেতন। তাঁর ফুসফুসের অবস্থা স্থিতিশীল। সৌমিত্রবাবুকে আপাতত পঞ্চাশ শতাংশ অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে। রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছে তাঁকে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে রেনাল ফাংশনের অবস্থা ঠিক না থাকায় তাঁর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। নেফ্রোলজিস্টরা ওষুধের মাধ্যমে তা কমানোর চেষ্টা করছেন। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটছে। মস্তিষ্কের স্নায়ু প্রায় অচল হয়ে গেছে।
গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 সাল থেকে সিওপিডির সমস্যা ও করোনা সংক্রমণের ফলে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটতে শুরু করে। এইসময় সৌমিত্রবাবু করোনা এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হন। ফলে তাঁর অস্থিরতা বাড়তে থাকে। সৌমিত্রবাবুর সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাঁর মূত্রথলিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপি করার পরেও তাঁর শারীরিক অবস্থার বিশেষ উন্নতি হয়নি। ক্রমশ তাঁর মস্তিষ্ক সূচক 6-এ নেমে যায়। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফলে তাঁকে বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। তাঁর হার্টরেট অনিয়মিত হয়ে যায়। এইসময় সৌমিত্রবাবুর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তাঁর শরীরে সংক্রমণ রোধ করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা শুরু হয়। সৌমিত্রবাবু অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন।
তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তাঁর বাইপ্যাপ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সৌমিত্রবাবুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল এবং সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছিল। তিনি দুর্বল ছিলেন। সৌমিত্রবাবু কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি। কিন্তু বয়সের কারণে তাঁর শরীরে স্টেরয়েডের ডোজ কমানোর ফলে সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক সমস্যা বাড়তে থাকে। ফলে তিনি অচেতন হয়ে যান। গত সোমবার বিকাল 3 টে নাগাদ তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। তাঁর শরীরে প্লাজমাফেরেসিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। অপরদিকে তাঁর পরিবারের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন। এদিকে সৌমিত্রবাবু আইসিইউ-এ ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন তাঁর কিছু ছবি অনৈতিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফলে ক্ষুব্ধ হন তাঁর কন্যা পৌলমী। তিনি অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।