প্রথমে মদ্যপান করে নাক ডেকে ঘুম তারপর চাকরী নিয়ে টানাটানি। এ রকমই একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো উত্তরপ্রদেশের এক সহকারি স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে। রাত্রি 12 টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত স্টেশনে ডিউটি ছিল তার। কিন্তু, নেশা তো করতেই হবে। এই কারণে রাত্রে ডিউটি দেওয়ার আগে সুরাপানে মত্ত ছিলেন যোগী রাজ্যের ওই স্টেশন মাস্টার। স্বাভাবিকভাবেই কাজে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখ জড়িয়ে আসলো ঘুমে। কিন্তু ঘুম যখন ভাঙল ও ততক্ষনে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। দিল্লি হাওড়া রুটে একাধিক ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়েছে বেশ খানিকক্ষন ধরে। আটকে পড়েছে বহু মালগাড়ি এবং এক্সপ্রেস ট্রেন। যাত্রী এবং ট্রেন চালকদের নাজেহাল অবস্থা। একের পর এক ফোন, চাপ বাড়ছে রেলের উপর তলার কর্তাদের উপরে। কিন্তু তাতে কি, ওই স্টেশন মাস্টারের শুধু ভালো ঘুম হলেই হল।
গত বুধবারের ঘটনা একেবারে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় রেলওয়ের সমস্ত দপ্তরে। রাত্রি বারোটার পর থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত দিল্লি হাওড়া রুটের সমস্ত ট্রেন চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সহকারী স্টেশন মাস্টার কোনরকম সবুজ সঙ্কেত দেখাননি। এই কারণে বৈশালি এক্সপ্রেস, সঙ্গাম এক্সপ্রেস, ফরাক্কা এবং মগধ এক্সপ্রেসের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন আটকে পড়ে এই রুটে। উত্তর প্রদেশের কঞ্চেহৌসি স্টেশনে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। সেই স্টেশনে ওই সময় কাজের দায়িত্বে ছিলেন স্টেশন মাস্টার অনিরুদ্ধ কুমার। কিন্তু ডিউটিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পুরোপুরি নেশায় বুদ। এই অবস্থায় স্টেশনে কাজে যোগ দিয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলেন তিনি।
কিন্তু এই ঘুমের জেরে হলো বিপত্তি। এই সমস্ত ট্রেন কে তিনি কোনো রকম সবুজ সংকেত দেখাতে পারলেন না ফলে আটকে গেল এই সব ট্রেন। অন্যতম ব্যাস্ত একটি রেল রুট কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেল। বহুক্ষণ স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকায় খবর গেল কন্ট্রোল রুমে। অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন তাই বাধ্য হয়ে স্টেশনে ছুটে এলেন রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা। এসেই তাদের একেবারে চক্ষু চড়কগাছ। স্টেশনে এসে তারা দেখেন একেবারে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বৈশালী এক্সপ্রেস, ফরাক্কা এক্সপ্রেস এর মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি ট্রেন। আর এই দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের কেবিনে একেবারে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন অনিরুদ্ধ কুমার।
অবশেষে, পরিস্থিতি সামলাতে হলো খোদ স্টেশন মাস্টারকে। ওই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার বিশ্বম্ভর দয়াল তাকে চোখেমুখে জল ছিটে দিয়ে ঘুম দিয়ে তোলেন। রাত দুটো নাগাদ সমস্ত সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পরে আবারও চালু হয় ট্রেন পরিষেবা। যদিও, এই অভিযোগের জন্য হয়তো অনিরুদ্ধ কুমারকে নিজের চাকরি খোওয়াতে হতে পারে। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই চার্জশিট তৈরি হয়ে গেছে। ডিউটির সময় তিনি মদ্যপ ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরকম পরিস্থিতিতে যদি অভিযোগ সম্পূর্ণ রূপে সত্যি প্রমাণিত হয় তাহলে কিন্তু ভারতীয় রেলওয়ে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে। আপাতত তিনি সাসপেন্ডেড রয়েছেন।