‘মিস্টার ইন্ডিয়া’-র সেই বিখ্যাত ডায়লগ ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’ এখনও মজার ছলে লোকের মুখে মুখে ফেরে। নব্বইয়ের দশকে তিনি শুধু দুর্নীতিপরায়ণ ভিলেন ছিলেন না, এক বজ্রকঠিন পিতাও তাঁর চরিত্রে ফুটে উঠেছেন অনায়াসেই। সেই পিতা যিনি মেয়ের খুশির জন্য তাঁর আজন্মলালিত সংস্কার ত্যাগ করে বলতে পারেন, ‘‘যা সিমরন, জিলে আপনে জিন্দেগি”। হ্যাঁ, আজ কথা হচ্ছে আশি ও নব্বইয়ের দশকে বলিউডের ভিলেনের সিংহাসনের একচ্ছত্র অধিপতি অমরীশ পুরি(Amrish puri)-র। এখনও পিতার কাঠিন্য বোঝাতে অমরীশ পুরির উপমা ব্যবহার করা হয়।
অমরীশের প্যাশন ছিল অভিনয় ও বাইকে করে ট্র্যাভেল করা। তাই কোনও দিন কোনও চাকরিতে থিতু হতে পারেননি তিনি। দাদা মদন পুরি (Madan puri) ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা। কিন্তু দাদা কোনোদিন এগিয়ে এসে সাহায্য করেননি অমরীশকে। অমরীশও হাত পেতে নিতে চাননি দাদার সাহায্য। দীর্ঘদিন তিনি সত্যদেব দুবে (satyadeb dubey)-র থিয়েটার গ্রুপে অভিনয় করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। তার পাশাপাশি দুর্দান্ত অভিনয় ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বারবার অডিশনে রিজেক্ট হয়েছেন শুধুমাত্র চেহারার জন্য। একসময় এক নামী পরিচালক তাঁকে মুখের উপরেই বলেছিলেন, এই চেহারা নিয়ে তিনি হিরো হতে পারবেন না। কিন্তু অমরীশ তো চাননি হিরো হতে। তিনি শুধু চেয়েছিলেন অভিনেতা হতে। কারণ তিনি জানতেন অভিনয়ই প্রকৃত হিরো। কিন্তু যখন রিজেকশনের ফলে অমরীশের মন খারাপ হত তখন তিনি বেরিয়ে পড়বেন বাইক নিয়ে। একসময় বাইকে করে বিশ্বভ্রমণের পরিকল্পনা করলেও অভিনয় নিয়ে ব্যস্ততার কারণে অমরীশের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। অল্প কিছু টাকা যোগাড় হলেই অমরীশ বাইক নিয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়তেন। এমনকি তিনি একসময় নিজের জীবন বিমা বেচে টাকা যোগাড় করেছিলেন ভ্রমণের জন্য।
চল্লিশ বছর বয়সে অভিনেতা হিসাবে বলিউডে ডেবিউ করেছিলেন অমরীশ পুরি। সেই সময় তাঁকে অনেকেই বলেছিলেন, তিনি সফল হবেন না। কিন্তু সময় উত্তর দিয়েছে সব প্রশ্নের। কিংবদন্তী হয়ে গিয়েছেন অমরীশ পুরি। যে কোনও ধরনের চরিত্রে অনায়াসেই খাপ খাইয়ে নিতেন তিনি। তবে ছোট চরিত্র ছিল তাঁর না-পসন্দ। অমরীশের গম্ভীর কন্ঠস্বর ছিল তাঁর পুঁজি তা তাঁর অভিনয়কে অন্য মাত্রা দিয়েছে। 1979 সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন অমরীশ পুরি। একসময় পৃথ্বী থিয়েটারে তাঁর প্রচুর নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। কিন্তু অমরীশ পুরির মৃত্যুর দিন তাঁর শ্মশানযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন না বলিউডের কোনও তারকা। কিন্তু তাতে কি এসে যায়! শিল্পীর মৃত্যু হয় না। তিনি অমর হয়ে থাকেন তাঁর শিল্পের মাধ্যমে। তাই তো আজও অমরীশের বলা সংলাপ মানুষের মুখে মুখে অমর হয়ে ফেরে।