অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya) মানেই একরাশ হাসি, অভিনয়ের স্বকীয়তা। সম্প্রতি তেতাল্লিশটা বসন্ত পার করেছেন অপরাজিতা। দুপুরে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে আশীর্বাদ করে অপরাজিতাকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন তাঁর গুরুজনরা। পাঁচরকম ভাজা, মাছের মাথা, কালের চাটনি, পায়েস কোনকিছুই বাদ যায়নি দুপুরের খাবারে। দুপুরে অপরাজিতার পরনে ছিল আকাশি রঙের অর্গাঞ্জা শাড়ি এবং জরির কারুকার্য করা ফুলস্লিভ ব্লাউজ। সন্ধ্যায় অপরাজিতার স্বামী অতনু (Atanu) অপরাজিতার জন্য রেখেছিলেন সারপ্রাইজ পার্টি। সেই পার্টিতে কালো গাউন পরে সাদা রঙের কেক কাটলেন অপরাজিতা। পাশে ছিলেন অতনু। পার্টির জায়গা সাজানো হয়েছিল লাল ও গোলাপি রঙের ফুল দিয়ে। অপরাজিতার জন্মদিনের ছবিগুলি যথারীতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কিন্তু অপরাজিতা ক্রমশ পালটে যাচ্ছেন নতুন বছরে। ওজন কমানোর জন্য কয়েক মাস ধরে নিয়মিত শরীরচর্চা করছেন অপরাজিতা। ট্রেডমিলে হাঁটা তাঁর কাছে এখন রুটিন। কিছুদিন আগে ট্রেডমিলে হাঁটতে হাঁটতেই ওয়ার্কআউটের একঘেয়েমি কাটাতে জনপ্রিয় হিন্দি গান ‘সাকি সাকি’-এর সঙ্গে নেচেছেন অপরাজিতা। তাঁর সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়েছে। এমনকি লাল রঙের মনোকিনিতে সুইমিং পুলের নীল জলে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন তিনি। অনেক মহিলাই মোটা হওয়ার কারণে সুইমিং কস্টিউম পরতে চান না। অপরাজিতা বডি শেমিং -কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে লাল রঙের মনোকিনি পরে উদাহরণ তৈরী করেছেন। অপরাজিতার এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেটিজেনদের কাছে প্রশংসনীয় হয়েছে । কিছুদিন আগেই অতনুর সঙ্গে অনেকগুলি ছবি শেয়ার করেছেন অপরাজিতা। বাইরে বেড়াতে গিয়ে অতনুর সঙ্গে ডিনার ডেটের ছবি শেয়ার করেছেন অপরাজিতা। কখনও গণেশ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন অপরাজিতা ও অতনু। ছবিগুলিতে অপরাজিতার পরনে রয়েছে জিনস ও সোয়েট শার্ট। অতনু ও অপরাজিতার ছবিগুলি ভাইরাল হয়েছে নেটদুনিয়ায়।
কিছুদিন আগেই উত্তরবঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন অপরাজিতা । পাহাড়ের হিমেল হাওয়া অপরাজিতার পজিটিভ এনার্জি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দূষণমুক্ত পরিবেশে বহমান নধীর ধারে অপরাজিতা খালি গলায় গেয়ে উঠেছিলেন বলিউড ফিল্ম ‘খামোশি-দ্য মিউজিক্যাল’-এর জনপ্রিয় গান ‘আজ ম্যায় উপর’। তার সঙ্গে হালকা নাচও নেচেছিলেন। অনস্ক্রিন অপরাজিতাকে শাড়ি পরে দেখা যায়। কিন্তু পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে কালো রঙের হাকোবা ড্রেস, লাল জিপসি টুপি ও কালো স্টকিংস পরেছিলেন অপরাজিতা। এই রূপেও তাঁকে যথেষ্ট আকর্ষণীয় লাগছিল। অপরাজিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন তাঁর গানের ভিডিওটি। বাঙালির প্রিয় নায়িকা অপরাজিতা ভিডিওটি শেয়ার করতেই মুহূর্তে তা ভাইরাল হয়ে গেছে।
কিছুদিন আগেই রিলিজ হয়েছে মৈনাক ভৌমিক (Mainak bhoumik)পরিচালিত ফিল্ম ‘চিনি’। এই ফিল্মে অভিনেত্রী মধুমিতা সরকার( madhumita sarkar)-এর মা মিষ্টি-র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অপরাজিতা। প্রকৃতপক্ষে মা ও মেয়ের সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে তৈরী ‘চিনি’। ‘চিনি’ হয়তো অনেকাংশে এক মহিলার গল্প যিনি একসময় বাঙালি পরিবারের আটপৌরে গৃহবধূ হলেও পরবর্তীতে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে যান। অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি, নিজের মতো করে জীবন বাঁচা মহিলাকে আলাদা দিশা এনে দিলেও তাঁর মেয়ের মনে তা নেতিবাচক প্রভাব তৈরী করে। ফিল্মটা আসলে মধুমিতার নয়, অপরাজিতার। অপরাজিতার অভিনয় সবাইকে ফিকে করে দিয়েছে এক লহমায়।
তাই এবার বসন্ত উৎসবেও নিজের রঙ ছড়িয়ে দিলেন অপরাজিতা। করোনা বিধি মেনে রঙ খেলেছেন অপরাজিতা। নিজের বাড়ির ছাদে এদিন তিনি রীতিমত বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছিলেন। এই উৎসবে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা, পরিবারের সদস্য এবং ছাত্রছাত্রীদের দল। দোল উপলক্ষ্যে কমলা ও গোলাপি রঙের শাড়ি, কাঁচের চুড়ি ও গাঁদার মালায় সেজেছিলেন অপরাজিতা। ছাত্রীদের সঙ্গে হিন্দি ফিল্ম ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’-এর হোলি সং ‘বালম পিচকারি’ গানে ডান্স পারফরম্যান্স করেছেন ছাত্রীদের প্রিয় ‘অপাদি’। অপরাজিতার সেই নাচের ভিডিও এই মুহূর্তে চারিদিকে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। এদিন অপরাজিতার স্বামী অতনুও হলুদ পাঞ্জাবী পরে স্ত্রীর সঙ্গে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন। সব মিলিয়ে অপরাজিতার বেহালার বাড়ি দোলের দিন হয়ে উঠেছিল জমজমাট। অপরাজিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় বসন্ত উৎসবের ছবিগুলি শেয়ার করে লিখেছেন, সবার জীবন রঙের খুশিতে ভরে উঠুক। নেটিজেনরাও তাঁদের প্রিয় ‘পারি’-কে দোলযাত্রার রঙিন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
অপরাজিতার মতো অভিনেত্রীও একসময় ইন্ডাস্ট্রির তথাকথিত রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন। বহু নায়ক নিজেদের প্রেমিকাকে ফিল্মে নায়িকা হিসেবে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন প্রযোজকদের কাছে এবং বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে অপরাজিতাকে। বারবার রিজেকশন অপরাজিতাকে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে। তিনি আবারও ফিরে এসেছেন নতুন রূপে, নতুন সাজে, আপামর বাঙালির ‘পারি’ হয়ে। নিজেই ঘুরিয়ে দিয়েছেন নিজের কেরিয়ারের মোড়। ফিরে তো তাঁকে আসতে হতোই তাঁর অভিনয়ের আঙিনায়, কড়ায়-গণ্ডায় উশুল করে নিতে হতো তাঁর খ্যাতি কারণ তিনি যে হার মানতে জানেন না, তিনি যে ‘অপরাজিতা’।