জি বাংলার জনপ্রিয় সিঙ্গিং রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’ গত দুই বছর ধরে বারবার পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে আসছে। এর আগেও ‘সারেগামাপা’-র বিজয়ী নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। বাংলাদেশি গায়ক নোবেল (Nobel)-এর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অপর একজন প্রতিযোগী বিজয়ী হয়েছিলেন। অপমান করা হয়েছিল নোবেলের বাবাকেও। তাঁদের জন্য সামান্য খাবার ও জলের ব্যবস্থাও ছিল না। নোবেলের বাবা এই নিয়ে অভিযোগ না করলেও অপর প্রতিযোগীরা জানিয়েছিলেন সেই ঘটনা। 2021 সালে আবারও শুরু হল উইনিং ট্রফি নিয়ে বিতর্ক। চলতি বছরে ‘সারেগামাপা’-র সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন আবীর চট্টোপাধ্যায় (Abir chatterjee)। শোয়ের বিচারকের আসনে ছিলেন আকৃতি কক্কর (Akriti kakkar), শ্রীকান্ত আচার্য (srikanta acharjee), জয় সরকার (jay sarkar)। এছাড়াও গ্র্যান্ড ফিনালে পর্বের বিচারক ছিলেন মিকা সিং (Mika singh)। সঙ্গীতগুরু ছিলেন মনোময় (manomay), রাঘব (Raghav) ও ইমন (Imon)।
দীর্ঘ ছয়মাস ধরে চলা ‘সারেগামাপা’-র গ্র্যান্ড ফিনালে-র প্রতিযোগী ছিলেন রক্তিম চৌধুরী (Raktim chowdhury), জ্যোতি শর্মা (Jyoti sharma), নীহারিকা নাথ (Niharika nath), অর্কদীপ মিশ্র (Arkadip mishra), বিদিপ্তা চক্রবর্তী (Bidipta chakraborty), অনুষ্কা পাত্র (Anushka patra)। প্রত্যেকেই নিজের গায়কীতে অসাধারণ। গ্র্যান্ড ফিনালে-র প্রথম রাউন্ডে এলিমিনেটেড হয়ে যান জ্যোতি ও রক্তিম। সবশেষে বিদিপ্তা, অনুষ্কা ও নীহারিকাকে হারিয়ে প্রথম হন অর্কদীপ।
অর্কদীপ একজন লোকসঙ্গীত শিল্পী। তাঁর মেন্টর ইমন। এই মুহূর্তে মনোময় ও রাঘবের তুলনায় চর্চার শিরোনামে রয়েছেন ইমন। চুলচেরা বিচার করলে অর্কদীপের থেকে বাকিরা অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন। দর্শকদের মতে, অর্কদীপকে বিজয়ী করা হবে, এটা আগে থেকেই ঠিক ছিল। কিন্তু চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও ‘সারেগামাপা’-র প্রযোজনা সংস্থা জানিয়েছেন, এই ধারণা একেবারেই ভুল। কিন্তু প্রতিবারই কি করে এক ভুল হতে পারে? দর্শকমহল ‘সারেগামাপা’ শো-টি পছন্দ করেন। গত দুই বছর ধরে সেই দর্শকরাই কেন আঙুল তুললেন এই শোয়ের দিকে? তাঁরা জানিয়েছেন, পরের বার থেকে এই শো তাঁরা দেখবেন না।
দর্শকদের বিচারে প্রথম স্থানের দাবিদার ছিলেন নীহারিকা বা অনুষ্কা। কিন্তু অর্কদীপের জয় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে আকৃতি ও মিকার জাজমেন্টকেও। অপরদিকে ইমন লাইভে এসে বলেছেন, ‘সারেগামাপা’ স্ক্রিপ্টেড নয়। এখানে টাকা দিয়ে উইনিং ট্রফি কেনা যায় না। ইমন জানিয়েছেন, অর্কদীপ তাঁর পূর্বপরিচিত। তাঁরা একই জায়গায় সঙ্গীত চর্চা করেছেন। এমনকি টাকা খাওয়ার প্রসঙ্গে ইমন শিক্ষাব্যবস্থাকেও টেনে আনেন। তবে ইমন আপনি মাথা গরম করে লাইভ না করলেই পারতেন। কারণ আপনার পূর্বপরিচিত একজন প্রতিযোগী, যিনি কিনা ভার্সেটাইল সিঙ্গার নন, আবার ‘সারেগামাপা’-তে যাঁর মেন্টর কিনা আপনিই, শেষ অবধি তিনি বিজয়ী হলেন, এটা খুব রহস্যময় নয় কি? তবে যাই হোক, জি বাংলা ‘সারেগামাপা’-র তরফে আপনার বিয়ের উপহারটা সত্যিই খুব ভালো ছিল, তাই না?
অর্কদীপের জয় বহু অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে গেলেও তিনি তাঁর ফ্যানদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মঞ্চের লড়াই এখানে শেষ হয়ে গেলেও জীবনের লড়াই শেষ হয়নি। অর্কদীপ নেটিজেনদের কাছে আশীর্বাদ চেয়েছেন। তবে একটা কথা বলা দরকার, রিয়েলিটি শোয়ে বিজয়ী হওয়া মানে সেরা গায়ক বা গায়িকা হওয়া নয়। অর্কদীপ নিজের কমফর্ট জোন ভেঙে কতটা বেরোতে পারেন, এখন সেটাই দেখার! অর্কদীপ কিন্তু নিজের জয় নিয়ে নিজেও কনভিন্সড নন। তাই ইমনের লাইভ শেষ হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় অর্কদীপের লাইভ। লাইভে এসে অর্কদীপ খুব দুঃখী মুখ করে জানান, তিনি সমস্ত সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছেন। তিনি সবাইকে তাঁর পাশে থাকার আবেদন করেছেন।
অপরদিকে শুধুমাত্র নেটিজেনরাই নয়, সঙ্গীতজগতেও এই নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সবাই একটাই কথা বলছেন, অর্কদীপ শুধুমাত্রই দাবার বোড়ে। তাঁর মাধ্যমে ইমনের পাবলিসিটি করাই ছিল এই জয়ের মূল লক্ষ্য। ইমন আপনি কি এই বিষয়ে আরও একটি লাইভ করে মিডিয়াকে একহাত নেবেন! তা নিতেই পারেন, কিন্তু আমাদের মিডিয়া সত্য সামনে আনতে বদ্ধপরিকর।