বিয়ে হয়ে যাবার অর্থ এটা নয় যে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার গ্রাস হয়ে যাবে। এবারে কর্ণাটক হাইকোর্টের এরকম একটি পর্যবেক্ষণে ঝড় উঠেছে সারা ভারতে। আধার আইন ২০১৬ অনুযায়ী, কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি এস সুনীল দত্ত যাদব এবং বিজয় কুমার বাতিলের ডিভিশন বেঞ্চ ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটির ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ও সেন্ট্রাল পাবলিক ইনফরমেশন অফিসারের দায়ের করা আপিলের শুনানীর নিষ্পত্তি করে মঙ্গলবার এই আদেশ জারি করেছে। এই মামলায় একজন মহিলা তার স্বামীর আধার কার্ডের তথ্য জানতে চেয়ে আদালতের কাছে আপিল করেছিলেন। সেই আপিলে তার পক্ষে নির্দেশ দিয়েছিল আদালতের সিঙ্গেল বেঞ্চ। আদালতের সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছিল ইউআইডিএআই। কর্ণাটক হাইকোর্টে এবারে সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই সিদ্ধান্তকে খারিজ করে UIDAI-এর পক্ষে রায় ঘোষণা করেছে।
আধার আইন ২০১৬ এর ৩৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, বিয়ে হলে নাগরিকের পদ্ধতিগত অধিকার কোনভাবেই বাতিল হয়ে যায় না। বিয়ে হলে তার সম্পর্ক গোপনীয়তার অধিকারকে গ্রাস করে না। একজন ব্যক্তির অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসন এই আইনের ৩৩ নম্বর ধারার অনুযায়ী স্বীকৃত এবং সুরক্ষিত। বিয়ে এই আধার আইনের ৩৩ নম্বর ধারার অধিকারকে কোন ভাবেই কেড়ে নেয় না। এই প্রেক্ষাপটে ডিভিশন বেঞ্চ একক সদস্যদের বেঞ্চের মামলাটিকে নতুন করে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে এবং স্বামীকে বিবাদী করার পরামর্শ দিয়েছে আদালত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্বামীর আধার কার্ডের তথ্য জানতে চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন এক মহিলা। কর্ণাটকের হুবলি জেলার বাসিন্দা ওই মহিলা ২০০৫ সালে নভেম্বর মাসে তার স্বামীর সাথে বিয়ে করেন। দম্পতির একটি মেয়ে রয়েছে। তবে পারিবারিক আদালত মামলা দায়ের কারী ঐ মহিলাকে ১০ হাজার টাকা এবং কন্যা সন্তানকে ৫ হাজার টাকা ভরণ পোষণের খরচ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বামীকে। তবে এখনো পর্যন্ত স্বামীর হদিস পাওয়া যায়নি এবং সেই কারণে আদালতের আদেশ কোনভাবেই কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় ওই মহিলা তথ্যের অধিকার আইনের অধীনে আধার দপ্তরের কাছে দ্বারস্ত হয়েছিলেন।
২০২১ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল UIDAI। তারা জানিয়েছিল স্বামীর আধার কার্ডের তথ্য কোনোভাবেই প্রকাশ করা যাবে না। আধার আইনের ৩৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর এই নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই মহিলা। আদালত স্বামীকে একটি নোটিশ জারি করে এবং ইউআইডিএআইকে ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মহিলার আবেদন বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়।
তবে সেই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আধার কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় বেঞ্চে একটি নতুন আপিল দায়ের করে। এই আপিলে তারা সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে জানায়, আধার আইনের ৩৩ এর ১ নম্বর ধারা মেনে চলতেই হবে। যুক্তি ছিল সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতির আদেশের পর এই তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব। যদিও স্ত্রীর পক্ষের আইনজীবী বলেছিলেন, বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর পরিচয় একে অপরের সাথে সম্পর্কিত হবে এবং সেই কারণেই ওই ব্যক্তির স্ত্রী তার স্বামীর আধার কার্ডের ব্যাপারে তথ্য জানতে পারেন। দাবি করা হয়েছিল, যখন তৃতীয় পক্ষের থেকে তথ্য জানতে চাওয়া হবে তখন বিধি-নিষেধ আরোপ করা যেতে পারে। তবে এই দাবি কোনোভাবেই গ্রহণ করেনি আদালত।