জানেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গান্ধীজীর সম্পর্ক কেমন ছিল?
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গান্ধীজীর বা গুরুদেবের সঙ্গে মহাত্মার পারস্পরিক সম্পর্ক সমগ্র মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক বিরল শিক্ষণীয় এবং অবশ্যই উপভোগ্য নিদর্শন। গান্ধীজী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গুরুদেব বলে সম্বোধন করেছিলেন। অপরদিকে রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজিকে মহাত্মা আখ্যায় ভূষিত করেছিলেন। এক্ষেত্রে বাংলার প্রবাদ বাক্য ‘রতনে রতন চেনে’ এই কথাটি বলাই যেতে পারে।
গান্ধীজীর প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই শ্রদ্ধা-ভালোবাসা একমুখী ছিলনা। 1941 সালের জানুয়ারি মাসে সুভাষচন্দ্রের মহানিষ্ক্রমণ এর একমাত্র সঙ্গী তথা ভাতুষ্পুত্র প্রখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিশির কুমার বসু গান্ধীজী ও রবীন্দ্রনাথের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে একটি ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন।যা এই বিষয়ে খুবই ব্যঞ্জনাময়।
1938 সালে কলকাতার জাতীয় কংগ্রেস এর বিশেষ অধিবেশনের সময় গান্ধীজী কলকাতা এসেছেন এবং শরৎচন্দ্র বসু 1 নং উডবার্ন পার্কের বাড়িতে উঠেছেন।তখন গান্ধীজীর গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় রবীন্দ্রনাথ নিজেই জোড়াসাঁকো থেকে গান্ধীজিকে দেখতে এলেন। এই সময় গান্ধীজি রবীন্দ্রনাথের জুতোজোড়া বাইরে থেকে এনে তাকে নিজে হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন।
1920 সালে এপ্রিল মাসে কবিগুরু এলেন আমেদাবাদের সবরমতী আশ্রমে।সেখানে এক ভাষণে তিনি বলেন
‘মহাত্মাজীর বাণী বিশ্বের সর্বত্র বিস্তৃত হইয়াছে। অতএব তাকে বিশ্বকর্মা বলা যাইতে পারে।’
1925 সালের 5 নভেম্বর তার ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকার ‘কবি ও চরকা’ শীর্ষক প্রবন্ধে গান্ধীজী লিখেছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ ও তিনি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।
26 সেপ্টেম্বর 1939 সালে কবিগুরু স্বয়ং পৌঁছলেন এড়োরা কারাগারে অসুস্থ শরীরে বৃদ্ধ মহাত্মা তার আশীর্বাদ চেয়ে ছিলেন । সেই সময় গুরুদেব ব্যক্ত করেন -’আমরা একজন মানুষের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে আমরা সেইরকম ব্যক্তিত্বকে দেখতে পাই।’ মহাত্মার মাথার কাছে বসে রবীন্দ্রনাথ স্বকন্ঠে গেয়ে উঠেছিলেন
‘জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো’।
Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জি