শ্রেয়া চ্যাটার্জি – গরম পড়তে না পড়তেই বড় বড় শপিং মলগুলোতে শুরু হয়ে যায় AC কেনার ভিড়। আর হবে নাই বা কেন, দিনকে দিন বিশ্ব উষ্ণায়ন হওয়ার জন্য বেড়েই চলেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। কিন্তু আপনি যদি বাড়ি বানানোর সময় এই তিনটি জিনিস মাথায় রাখেন, তাহলে আপনি AC না কিনেই AC- র মতন ঠান্ডা ঘরে বাড়িতে সময় কাটাতে পারবেন।
১) সিমেন্টের জায়গায় ব্যবহার করুন মাটি এবং চুন ও বালি। বাড়ি বানানোর সময় সিমেন্টের জায়গায় চুন সুরকি এবং মাটি ব্যবহার করলে বাড়ি দম নিতে পারে। অর্থাৎ বাড়ির মধ্যে হাওয়া অনেক বেশি ঢুকতে পারে। ঠিক এই ভাবেই ধ্রুব হিংমিরে এবং প্রিয়াঙ্কা গুঞ্জিকার মহারাষ্ট্রের থোড়ান গ্রামের কামশেঠের কাছে এমন বাড়ি বানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, তারা ক্রমাগত তাপমাত্রা দেখেছেন বাড়ির ভেতর এবং বাড়ির বাইরের। যখন বাইরে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন বাড়ির ভেতরে তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি। এমনকি তারা জানান, গ্রীষ্মকালে তাদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করতে হয় না, এমনকি পাখাও লাগেনা।
২)তাপ নিয়ন্ত্রক ছাদ বানালে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা থেকে খানিকটা বাঁচা যায়। ছাদ তৈরি করতে হবে বৃষ্টি নিরোধক হিসাবে। তৈরি করার সময় ব্যবহার করতে হবে নারকেল ছোবড়া। যা অনেকটাই পরিবেশবান্ধব। এমন সুন্দর তাপ শোষণকারী ছাদ বানিয়েছেন হাসিত গানাত্রা। যিনি ‘sustainable roofing for Rematerials’ এর প্রবর্তকও বটে।
৩) পুরনো ধাঁচের পদ্ধতি বজায় রেখেও বাড়ি বানালেও বাড়ি অনেক ঠান্ডা থাকে। কেরালার বিখ্যাত ভিনু দানিয়াল যিনি অসাধারণ কায়দায় বাড়ি বানিয়ে ছিলেন। মাটি দিয়ে ব্লক তৈরি করে, বিয়ারের বোতল দিয়ে জালি বানিয়ে এক অভিনব কায়দায় বাড়ি বানান। বাড়ির নকশা করা হয় কেরালার ঐতিহ্য নাডুমুট্টাম এর অনুকরণে। এই নাডুমুট্টমের বৈশিষ্ট্য হলো, বাড়ির সামনে থাকবে খোলা উঠান। শুধু নাডুমুট্টম এর বাড়িগুলি শুধুমাত্র ভেতরটা ঠান্ডা থাকবে এমন নয়, এটি বৃষ্টির জল ধরে রাখার ক্ষমতাও রাখে। পুরো পদ্ধতিটি পরিবেশবান্ধব। কতগুলো উপকরণ মাথায় রেখে বাড়ি বানালেই বাড়িগুলি ভেতর থেকে ঠান্ডা হবে। ওপরতলাটি তৈরি হবে পুরোপুরি বিয়ারের বোতল দিয়ে। খুব সুন্দর করে জালিকার মতন তৈরি করে। যার ফলে খুব সহজেই হাওয়া-বাতাস খেলতে পারবে। তবে উপকরণগুলি নিজের মতন করে ব্যবহার করতে হবে। একথা ঠিকই তবে আপনার পরিবেশের যে উপকরণ বেশি পাওয়া যায়, কিংবা আপনার পরিবেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই বানাতে হবে এমন ঠান্ডা বাড়ি।
এখনো যদি বাড়ি না বানিয়ে থাকেন তাহলে বাড়ি বানাতে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করতেই পারেন। কারুর কারুর হয়তো সেকেলে মনে হতে পারে। মনে হওয়াটা অস্বাভাবিকও কিছু না। তবে দিনকাল যা পড়ছে দূষণের মাত্রা যেভাবে বাড়ছে, সেই সব কথা মাথায় রেখে AC যতটা কম ব্যবহার করা যায় ততটাই ভালো। তবে গরমের মাত্রা ও দিনকে দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। যার জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র এখন আর অভিজাত ওদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এখন তা সাধারণের ও প্রয়োজনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কতগুলো জিনিস মাথায় রেখে বাড়ি তৈরি করলে প্রাকৃতিক উপায়ে ঠান্ডা হওয়া সম্ভব। তাহলে ঘরের মধ্যেও ঠান্ডা থাকবে, আর পৃথিবীও অনেক দূষণমুক্ত হবে।