বেশ কিছুদিন হল অভিনেতা তাপস পাল আজ আমাদের মধ্যে আর নেই তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে পরলোকগমন করেছেন।তাপস পালের এই অকালপ্রয়াণে শিল্পীমহল শোকে স্তব্ধ। দাদার কীর্তি সিনেমা দিয়ে সিনেমা জগতে তার হাতে খড়ি শুরু। এরপর তাপস পাল বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ও সিনেমাপ্রেমীদের তার অনবদ্য অভিনয় করা অনেক সুন্দর ছবি উপহার দিয়েছেন। সাহেব ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান। অভিনেতার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ের অভিনেতার পাশাপাশি তিনি বিধায়ক ও সাংসদ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাপস পালের এই অকাল প্রয়াণে ভারতবর্ষের প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিল বাংলা অভিনয় জগতের অন্যতম স্বনামধন্য শিল্পী বাদশা মৈত্র সঙ্গে। তিনি তাঁর মূল্যবান মতামত ও প্রতিক্রিয়া আমাদেরকে জানান।
কিছুদিন হলো জনৈক অভিনেতা তাপস পাল তিনি পরলোকগমন করেছেন তিনি আর আজ আমাদের মধ্যে নেই। তাপস পালের এই অকাল প্রয়াণে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির কতটা অপূরণীয় ক্ষতি হল বলে আপনি মনে করেন ?
বাদশা মৈত্র : যেকোন ক্ষেত্রে মানুষ যত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয় দিনের সাথে তার অভিজ্ঞতা আরও বাড়ে , তার আরো অনেক কিছু দেওয়ার থাকে। যেহেতু এত দীর্ঘ সময় ধরে তাপসদা অভিনয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন তাই যদি ফিরে আসতেন আমার মনে হয় তাপস দা আরো নতুন করে অনেক কিছু করতে পারতেন আর করার ইচ্ছাও ছিল। তো সেই অভিনেতার সেই কাজগুলো আমরা হারালাম যা ফেরার কথা ভাবছিল। সেগুলো হলে হয়তো মানুষের বয়সের সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টায়। আর একটা তাপস পাল কে দেখতাম যেটা আমরা দেখিনি। সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা।
আপনার সাথে তাপস পাল স্যারের কোনো আলাপ-আলোচনা , পরিচয় বা কোন স্মৃতি যদি আমাদের সাথে একটু শেয়ার করতেন ?
বাদশা মৈত্র : হ্যাঁ আমরা একটা ছবি করেছিলাম স্বপন সাহার পরিচালনায়। সেই ছবিটাই তাপসদা ছিলেন , বুম্বাদা ছিলেন , অভিষেক ছিলেন , আরো সবাই অনেকে ছিলেন। আমরা আউটডোর করেছি একসঙ্গে। তাছাড়া তাপস দার সাথে কলকাতার টেলিভিশনেও কাজ করেছি । হইহই করে তার কাজ করত ও খেতে ভালোবাসতো , খাওয়াতেও ভালবাসত। খুব সুন্দর হুল্লোড় করা মানুষ ছিল , জোরে জোরে কথা বলতো , সবার খবর নিত।
আপনি যদি একটু খেয়াল করে দেখেন তাহলে দেখবেন যে তাপস পালের প্রাণের পরে তার মৃত্যু ঘিরে রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। অনেকে অনেক ধরনের মন্তব্য করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন মিম হচ্ছে। এই ঘটনাটিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন ? একজন মানুষ মারা গেছে তার উপরে দাঁড়িয়ে যে ঘটনাগুলো হচ্ছে এগুলো কি হওয়া উচিত আপনি কি মনে করেন ?
বাদশা মৈত্র : আমি উচিত-অনুচিত নিয়ে কিছু বলতে পারব না কারণ আমি আমার একজন সিনিয়র অভিনেতা কে হারালাম। যেটা বললাম যে একটা অন্য তাপস পাল কে দেখার ইচ্ছে ছিল। আমার কাছে তাপস পালের প্রাইমারি পরিচয় হচ্ছে একজন অভিনেতা। তাপস দা কে যখন থেকে চিনছি তখন থেকে তিনি অভিনেতা , বাংলা ছবির বেশ কিছু সুপারহিট ছবি হিরো। সেই সূত্রে যেহেতু তাপস দা কে যেহেতু চেনা। পরবর্তীতে যখন অভিনেতা হয়েছিতখন তাপস দার সাথে যখনই দেখা হয়েছে কথা হয়েছে তা অভিনয় সংক্রান্ত। আজকে যদি উত্তম কুমার বেঁচে থাকতেন উত্তমকুমারকে দর্শক অন্যভাবে পেত বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে। তাপস পালও অন্য ধরনের বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছবিতে অভিনয় করেছেন , যেখানে অন্য তাপস পাল কে দেখেছি আমরা। সেই ভাবেই আরো অনেক কিছু দেখতে পাবার সুযোগ ছিল হয়ত ! তো সেটা আমরা মিস করলাম। বাকিদের মন্তব্য নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না , এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। তাপস দা কে নিয়ে আমার অনুভূতি টা ঠিক এখানেই , এর মধ্যেই রাখতে চাই। তাছাড়া বিশেষ করে লোকটি চলে গেছেন , বেঁচে থাকলে তার সামনে বসে বিশেষ করে আমি যে কোন বিষয় সামনে বসে ভালো-মন্দ কিছু বলার থাকলে বলতে ভালোবাসি। যেহেতু লোকটা চলে গেছে আমার শ্রদ্ধাটাই তার প্রতি থাক সেটাই শেষ অনুভূতি তাপস দার জন্য আমার।
তার বিদেহী আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে বা তার পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলেন ?
বাদশা মৈত্র : দেখুন পরিবারের মানুষ যে কষ্টে থাকবে এটা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। শুধু একটাই কথা বলার আছে যে , সমস্ত মানুষরা হয়তো শরীরে চলে গেছে কিন্তু অনেক মানুষের মনে বেঁচে আছেন তাই পরিবারের লোকেদের এটুকুই বলবো। সান্তনা বা শান্তি যাই বলুন , অসময়ে তো চলে গেছে। এই কষ্টটা ভুলবার নয়। চলে গিয়েও যায়নি , এই মানুষগুলো যায় না , অনেকের মনে তাপসদা বেঁচে থাকবেন সেটাই তাদেরকে আমি ভাবতে বলবো যদি তাতে একটু সান্ত্বনা পাওয়া যায়।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]