ক্লাস একাদশ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয় ওঠে উলুবেড়িয়া চত্বর। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার রাজাপুর সুমদা বাজার এলাকার বাসিন্দা ওই একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সরস্বতী পুজোর দিন বাড়ি থেকে স্কুলে যাবে বলে সে ঘর থেকে বেরোয় কিন্তু সে স্কুলে যায়নি ও বাড়িতেও ফেরেনি। ঠিক তার পরের দিন শুক্রবার পুলিশ মেয়েটির প্রেমিককে গ্রেফতার করে। এরপর জিআরপি সূত্রে ছাত্রীর পরিবার জানতে পারে বাগনান স্টেশন এর কাছে রেললাইনে ধারে একটি মেয়ের মৃতদেহ মিলেছে। শনিবার রাতে মর্গে গিয়ে ছাত্রীর মৃতদেহ শনাক্ত করে তার পরিবার। এরপরই উত্তেজিত জনতা পথ অবরোধ করে এবং সেই অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সাথে জনতার খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত বার্তার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিল মাননীয় সাংসদ শ্রী অর্জুন সিং এর সঙ্গে। তিনি আমাদের ভারত বার্তাকে তার মূল্য মূল্যবান মতামত জানান।
গতকাল রাজ্যে আবারো একটি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। যাকে কেন্দ্র করে গতকাল উলুবেড়িয়ায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রেমিক ও তার সঙ্গীরা মেয়েটিকে ধর্ষণ ও তারপর খুন করে রেললাইনের পাশে ফেলে দেয়। পুলিশ এই ঘটনায় মেয়েটির প্রেমিক সেক আমির আলীকে গ্রেফতার করেছে কিন্তু এখনো অন্যান্য অভিযুক্তরা বেপাত্তা। তাদেরকে পুলিশ সন্ধান করছে। কি বলবেন আপনি বিষয়টিকে নিয়ে ?
অর্জুন সিং : মমতা ব্যানার্জির সরকারে কেউই সুরক্ষিত নেই। পুরুষ , মহিলা , যারা স্কুলে পড়ে , যারা কলেজে পড়ে , শ্রমিক , ডাক্তার এমনকি রাজ্যপালও সুরক্ষিত নেই। এখন যারা রেপ করছে তারা যদি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতার ভাই বা রিলেটিভ হয়ে যায় তাহলে তাকে কিছু করবেনা। এটাই এখন চলছে। আপনি দেখেছেন একজন মহিলাকে পায়ে দড়ি বেঁধে টানা হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে আগে কেউ কল্পনা করতে পারত ? কেউ ভাবতেও পারতো যে এই ধরনের ঘটনা করবে সরকারি দলের তরফ থেকে। মমতা ব্যানার্জি ধৃতরাষ্ট্রের মত ওখান থেকে বসে তামাশা দেখবেন।
তাহলে কি পুলিশ প্রশাসন কোনরকম সরকারের অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছে ?
অর্জুন সিং : পুলিশ প্রশাসন শব্দটাই ব্যবহার করা উচিত না। মমতা ব্যানার্জি প্রশাসনে পুলিশ দলদাস হয়ে কাজ করছে। পুলিশের কোন ভূমিকাই নেই।
রবিবার ভোর বেলা প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয়েছে হিন্দু মহাসভার নেতা রঞ্জিত বচ্চনকে কিছু মাস আগে সেখানে কমল সিং নামে আরেক হিন্দুত্ববাদী নেতাকে খুন করা হয়েছিল। স্বয়ং যোগীর রাজ্যে এমন ঘটনা। কি বলবেন আপনি ঘটনাটিকে নিয়ে ?
অর্জুন সিং : কারো খুন করাটা কেউ রুখতে পারে না। কমলেশ সিং খুন হয়েছিল কিন্তু তার তিন দিনের মধ্যে সমস্ত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সারা ভারতবর্ষে এমনকি সারা পৃথিবীতে এমন কোন বিজ্ঞান নেই , এমন কোন টেকনোলজি নেই যে আপনি আগে থেকে জানতে বুঝে নেবেন যে এই ব্যক্তিটি খুন হতে চলেছে। তবে আজকাল ফোনে অনেক টাপিং করে শোনা যায় এ ওকে মারবে , প্ল্যানিং করবে। কিন্তু যেখানে হাইটেক খুন হচ্ছে বা যারা অর্গানাইজ ক্রাইম করে , তারা ধর্মীয় খুনগুলো করানো হচ্ছে। এগুলোকে রোখা খুব কঠিন। কত তাড়াতাড়ি ঘটনার পরে তাকে গ্রেফতার করা হলো , তার সঠিক সাজা হলো। এটা একটা বড় ব্যাপার থাকে। কিন্তু কত তাড়াতাড়ি কোন জায়গার পুলিশ কাজ করছে এটা যোগীরাজ্যে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে তাড়াতাড়ি আসামীগুলোকে ধরে। কিন্তু পশ্চিমবাংলা কে আপনি যোগী রাজ্যের সাথে তুলনা করবেন না। পশ্চিমবাংলা সবাই জানে কে খুন করেছে , সবাই জানে কে রেপ করেছে কিন্তু পার্টি না বললে তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এটা কিন্তু যোগীরাজ্যে যে বা কোন রাজ্যে হয় না।
আপনার উদ্ধৃতিটা কে গ্রহণ করে বলবো , আপনি বললেন রাজ্যপাল সুরক্ষিত নয়। রাজ্যপাল যিনি আমাদের আচার্য তিনি যখন সুরক্ষিত নয় তার মানে সাধারন মানুষ বলুন আমরা মিডিয়ার লোকেরা বলুন আমরা তো তাহলে কেউই সুরক্ষিত নয় !
অর্জুন সিং : আপনি কি সুরক্ষিত আছেন ? আমি কি সুরক্ষিত আছি ? ডাক্তার সুরক্ষিত আছে ? উকিল সুরক্ষিত আছে? হাবরা কোর্টে ঢুকে পুলিশ যাকে মেরেছিল সেই পুলিশকে ভাটপাড়ার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ করে দেয়া হয়েছে। এখানে তো কেউ সুরক্ষিত নেই এটাতো সঠিক কথা।
বঙ্গ রাজনীতিতে পূর্বে অনেক অকথা কুকথা শোনা গেছে। এবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে নিয়ে কিছুদিন আগে দিনহাটা তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ ক্ষ্যাপা ষাড় বলে আক্রমণ করেছেন। কি বলবেন এটাকে নিয়ে ?
অর্জুন সিং : উদয়ন দা একজন ভদ্রলোক সে কেন এই ধরনের কথা বলল তা আমি জানিনা। ওইতো দিদিমনির কাছে নম্বর পাবার জন্য এইসব বলতে পারে।
কিছুদিন আগে জামিয়ায় গুলি চালনা কাণ্ডে মাননীয় বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আমাদের সাক্ষাৎকারে জানান এর পিছনে বিজেপির স্পষ্ট হাত রয়েছে ও উনি যদি পুলিশ কমিশনার হতেন তাহলে অনুরাগ ঠাকুর কে গ্রেফতার করতে বলতেন। কি বলবেন আপনি এই বিষয়টিকে নিয়ে ?
অর্জুন সিং : তুই কোন বিকাশদা কি বলেছে আমি সেটা শুনিনি। কিন্তু জামিয়া হোক বা দিল্লির শাহীনবাগ এর সামনে হোক এইযে ঘটনা গুলো ঘটছে এটা জনরোষ হচ্ছে। 50 দিন ধরে একটা রোডকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাতায়াতে যেখানে 15 মিনিট লাগে , সেখানে আড়াই থেকে 3 ঘন্টা লাগছে। যে ছেলেটা গুলি চালিয়েছে সে একজন ছোট ব্যাবসায়ী, দুধ বিক্রি করে , একটা ছেলে রং করে। তাদের যাতায়াতে অসুবিধা। তারপর যেখানে সরাসরি দেশের বিরুদ্ধে স্লোগান হচ্ছে , বহু মানুষ ক্ষোভটা আটকে রাখতে পারছে না। জনরোষে এইসব হচ্ছে , বাচ্চা ছেলে তাদের কোন ম্যাচিউরিটি আসেনি’। তারা নিজে কন্ট্রোল করতে পারেনি। এটাও হতে পারে।
প্রথমে দিল্লির জামিয়ায় গুলি চালনা ঘটনা , তার ঠিক পরেই রবিবার ভোর বেলা হিন্দু মহাসভার নেতা গুলি দ্বারা খুন হলেন, তারপরই শাহিনবাগে গুলি চালনা । মানে এটা কি কোন হিংসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে আস্তে আস্তে ?
অর্জুন সিং : দেখুন একটা লোক , একটা কিছু বাচ্চা ছেলে রেগে হোক , জনরোষ হোক ব্ল্যাংক ফায়ারিং করছে। এরা হিন্দু, হিন্দুরা করছে এই ধরনের ইঙ্গিত করা হচ্ছে। আরেকটা হিন্দু মহাসভার যে লোককে খুন করা হলো তার ব্যাপারে তার ব্যাপারে মিডিয়ার কোথাও ঘুরছে না। কিন্তু একটা লোক ব্ল্যাক ফায়ারিং করেছে তাকে নিয়ে দিল্লির মিডিয়া পুরো ভারতবর্ষে এটা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে , অর্গানাইজড ওয়েতে মিডিয়াকে ব্যাবহার করে এসব করানো হচ্ছে।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস]