সাক্ষাৎকার

ট্রেনে রফির গলায় গান গেয়ে ভাইরাল হওয়া শিল্পী অজিত কুমার ঝাঁ এর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার

Advertisement

গত ৬ই ফেব্রুয়ারি রফি সাহেবের গান গেয়ে ভাইরাল হওয়া শিল্পী অজিত কুমার ঝাঁ এর এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার নিলেন আমাদের সংবাদ প্রতিনিধি কৌশিক পোল্ল্যে। তারই সবটুকু কথোপকথন নীচে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রশ্ন: প্রথমেই আপনার নিজের সম্বন্ধে দু চার কথা বলুন

– দেখুন গানবাজনা তো ছোট থেকেই করতাম কিন্তু কোনোদিনও সেরকম সুযোগ পাইনি। বাড়ি থেকে সমর্থন পাইনি। এরপর আমি চলে এলাম ফটোগ্রাফিতে এবং পড়াশোনা যা করেছি তাতে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চিফ ফিন্যান্স অফিসারের পদে রয়েছি।

আপনি যে প্রতিদিনই ট্রেনে গান করেন, এটা কতদিন ধরে চলছে?

– টানা ২৫ বছর।

বাহ! খুবই ভালো বিষয়। আপনার যে ভিডিয়োটি ইতিমধ্যে আমাদের পোর্টাল থেকে ভাইরাল হয়েছে তার পিছনের গল্পটা যদি শেয়ার করেন।

– এটি ৬ই ফেব্রুয়ারির ঘটনা। যাতায়াতের রুটটা অন্যদিনের তুলনায় ভিন্ন ছিল। যদিও দমদমে এসে আমার পছন্দমতো পিছনের কম্পার্টমেন্টে উঠি। তারপর পরিচিত নিত্যযাত্রীদের অনুরোধে গান শুরু করি। ট্র্যাক আমার সঙ্গে থাকেই এবং একটি ব্লুটুথ স্পিকারও। আমি গান শুরু করে দিই এবং ঋচীক নামের ছেলেটি কখন ভিডিও করে নেয় তা বুঝতে পারিনি। পরেরদিন নিজের ছেলের মারফৎ সবটা জানতে পারি যে আমার গানের ভিডিও অনেক ভিউস পেয়েছে ফেসবুকে।

আপনার ভিডিয়োর একটি ঝলক এতটা সাফল্য পাবে তা কখনও ভেবেছিলেন?

– কোনোদিন ভাবিনি। বলা চলে ওপরওয়ালাই আমাকে এই সুযোগ পাইয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে একজন ভাইরাল ভিডিও সেনসেশন হওয়ার পর আপনার অনুভূতিটা ঠিক কীরকম?

– এই অনুভূতিটা আমি বলে বোঝাতে পারব না। সবাই বলে আমি রফি সাহেবের গান খুব ভালো গাই এবং এ নিয়ে ট্রেনের কামরায় আমায় নিয়ে রীতিমতো টানাটানি পড়ে যায়। রোজ দুবেলা ট্রেনে যাওয়ার সময় গান করা আমার ডেইলি রুটিন।

যিনি আপনার ভিডিয়োটি পোস্ট করেছেন সেই ঋচীকবাবুকে কী আপনি আগে থেকে চিনতেন?

– না। তবে আমি ওকে ফেসবুকে খুঁজে নিয়ে যোগাযোগ করে ধন্যবাদ জানাই। যদিও ও সব কৃতিত্বটাই আমায় দিয়েছে।

ওনার প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া কীরূপ?

– ওকে ফোন করে অনেক আশীর্বাদ করি। যেহেতু ও আমার থেকে অনেকটাই ছোট।

আপনার বাড়িতে কে কে রয়েছে?

– আমার মা রয়েছেন, স্ত্রী রয়েছে, এছাড়াও এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

আপনার কর্মজীবন নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানাবেন?

– সকাল পৌনে নটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে চক্ররেল ধরি, গন্তব্য বাঙুড় গ্রুপ। টানা পঁচিশ বছর এই লাইনেই যাতায়াত করছি। দমদম মেলাতে পরপর সাত বছর গান করেছি। আমার নিজের নামে একটি ইউটিউব চ্যালেনও আছে তাতে আমার গাওয়া বেশকিছু গান রয়েছে।

আপনি তো চাকুরীজীবী, এর মাঝে কী গান নিয়ে নতুন কোনো ভাবনাচিন্তা রয়েছে?

– একটি গানে সুর দিয়েছি যেটি কিছুদিন পরেই প্রকাশ পাবে। আরও একটি আধুনিক গানের সুর তৈরি করছি, ওটা হয়ে গেলে দুটোই একসঙ্গে রেকর্ড করব।

আপনার নিজের নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলও বর্তমান, সেটা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে?

– সময়ের ভীষন অভাব। অফিসের পর খুবই চাপের বিষয় এসব, কারন অ্যালবামগুলো নিয়ে বসতে হয়। যদি সময় করতে পারি তখন এগুলো নিয়ে কাজ করে রেকর্ডিং এর পরিকল্পনা রয়েছে।

আপনার এলাকায় কেউ যদি প্রভিতাধর হয়েও গানের সুযোগ না পান তাহলে তাকে কোনোভাবে সুযোগ করে দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়াবেন?

– আমার কাছে যে কেউ আসলেই আমি সাধ্যমতো সাহায্য করি। আমার কাছে অনেক ট্র্যাক আছে সেগুলো দিয়ে সাহায্য করা বা অন্যান্য সাহায্য করে থাকি, সে ফটোগ্রাফি হোক বা গান। আজ পর্যন্ত কাউকে না বলিনি।

রানু মন্ডলের মতো কখনো প্লেব্যাকের সুযোগ পেলে কী রেকর্ডিং করবেন?

-নিশ্চই করব।

সেক্ষেত্রে যদি মুম্বাই যেতে হয় তাহলে কর্মক্ষেত্রে কীভাবে সামাল দেবেন?

– যদি যেতেই হয়, তাহলে একমাসের ছুটি নিয়ে যাব, আবার কাজ শেষে ফিরে এসে এদিকের হাল ধরব। কারন বাংলা আমাকে টানে যেহেতু জন্মসূত্রে আমি এখানের লোক। তবে আমি আদতে বিহারের মিথিলার ব্রাহ্মন।

এখনও পর্যন্ত কোনো অফার পেলেন?

– না। তবে দুবাই থেকে ইউ.এস, সবর্ত্র লোকের প্রশংসা ও শুভেচ্ছাবার্তা পেয়েছি। যদিও একটা কথা বলি, এটা কেউ জানেনা। ক্লাস নাইনে আমার টনসিলের অপারেশন হয় এবং ডাক্তার আমাকে গান গাইতে নিষেধ করেন। তবুও গানটা ছাড়িনি কারন এটা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে।

সোশাল মিডিয়ায় আপনাকে রানু মন্ডলের সঙ্গে তুলনা করে ট্রোল করা হয়েছে সে নিয়ে কী বলবেন?

– আমি মনে করি রানু মন্ডলের গলা আমার থেকে অনেক ভালো তাই ওনার সঙ্গে আমার তুলনাই চলে না।

রফিজির সঙ্গে কোন মহিলা গায়িকার গানের দ্বৈতমিশেল আপনার ভালো লাগে?

– দুজনকে মেলাতে পারি। আশা ভোঁসলে ও সুমন কল্যানপুর। লতাজি অবশ্যই ভালো গায়িকা তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে এদের বেশি ভালো লাগে।

রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান?

– কী বলব আর। সবই গন্ডগোলে ভরা। নেতারা শুধু নিজেদের স্বার্থ বোঝে। এবং আমি কোটা ব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা করছি, এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ন নষ্ট করে দিচ্ছে।

সাম্প্রতিক NRC ও CAA ইস্যুতে আপনার কী বক্তব্য?

– আমি NRC কে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছি, কারন আমাদের দেশ পুরো ধর্মশালা হয়ে রয়েছে ফলে অনুপ্রবেশকারী অবৈধ প্রবেশ ঘটছে। ধর্মের নামে রাজনীতি চলছে।

ট্রেনে গান গাওয়ার জেরে আপনি বর্তমানে এলাকা সহ সোশালেও বেশ বিখ্যাত, আপনার পরিবার এবিষয়ে অবগত রয়েছেন? তাদের প্রতিক্রিয়া কীরকম?

– আগে আমার ছেলে ভীষন বারন করত কিন্তু ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বাড়ির লোকের মতামত পাল্টেছে।

ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন অজিতবাবু ‘ভারতবার্তা’র তরফ থেকে আপনার এগিয়ে চলার জন্য অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন। আপনি দিনটি শুভ হোক।

– ধন্যবাদ ।

Related Articles

Back to top button