সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন বিমান সংস্থার একাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শত শত যাত্রী। বিশেষ করে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি মর্মান্তিক ঘটনার পর বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ডিজিসিএ (DGCA) কড়া নিরাপত্তা পরিদর্শনের নির্দেশ জারি করেছে। এর জেরে এয়ার ইন্ডিয়া-সহ অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলিকে একাধিক বিমান গ্রাউন্ডেড করতে হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় রুটেই।
তবে শুধু এয়ার ইন্ডিয়া নয়, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, আকাসা এয়ার, ভিস্তারার—সব বিমান সংস্থাই কোনও না কোনও ভাবে অপারেশনাল ত্রুটি বা খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফ্লাইট বাতিল ও দেরির মুখে পড়েছে। এর ফলে সাধারণ যাত্রীরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন, তেমনই অনেকেই জানেন না কীভাবে সহজেই রিফান্ড বা পুনঃনির্ধারণ (rescheduling) সম্ভব।
যাত্রীদের অধিকারের কথা বলছে আইন
DGCA-র নির্দেশ অনুসারে, কোনও ফ্লাইট যদি প্রযুক্তিগত ত্রুটি, কর্মী ঘাটতি বা নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল হয়, তবে যাত্রীরা ১০০% রিফান্ডের অধিকারী। এমনকি, বিমান সংস্থাগুলি বিনামূল্যে অন্য ফ্লাইটে যাত্রীদের রিবুকিং-এর সুবিধা দিতে বাধ্য। প্রয়োজনে খাবার ও থাকার ব্যবস্থাও করতে হয় যদি বিলম্ব দীর্ঘ সময় ধরে হয়।
রিফান্ড প্রক্রিয়া কতটা সহজ?
প্রতিটি বিমান সংস্থার নিজস্ব রিফান্ড পদ্ধতি রয়েছে। যেমন:
Air India: অফিসিয়াল অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে ‘Manage Booking’ থেকে রিফান্ড অনুরোধ করা যায়।
IndiGo: রিফান্ড ফর্ম বা ‘6Eskai’ চ্যাটবট ব্যবহার করে প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।
SpiceJet: PNR নম্বর দিয়ে রিফান্ড স্ট্যাটাস চেক করা যায় অনলাইনে।
Akasa Air: ‘My Booking’ বিভাগ থেকে ৫-৭ দিনের মধ্যে রিফান্ড হয়।
Vistara: সরাসরি বুকিংয়ে অটোমেটিক রিফান্ড পাওয়া যায়।
Alliance Air ও Air India Express: অনলাইন রিফান্ড অনুরোধ নেয়, যদিও সময় একটু বেশি লাগে।
কখন দেরি হতে পারে?
যদি রিফান্ড ৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে না আসে, তাহলে তৃতীয় পক্ষের এজেন্টের মাধ্যমে বুকিং, প্রযুক্তিগত সমস্যা বা ব্যাংক স্তরের বিলম্ব এর জন্য দায়ী হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে:
এয়ারলাইন্সের কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে PNR সহ যোগাযোগ করুন।
সমাধান না হলে DGCA-এর AirSewa.gov.in পোর্টালে অভিযোগ জানান।
কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করা থাকলে ব্যাঙ্কে চার্জব্যাক অনুরোধ করা যেতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে সমস্যার উল্লেখ দ্রুত প্রতিক্রিয়া আনতে পারে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা: আপনার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর
১. ফ্লাইট বাতিল হলে কি আমি পুরো টাকার রিফান্ড পাব?
হ্যাঁ, যদি বাতিলের কারণ বিমান সংস্থার তরফে হয় (যেমন প্রযুক্তিগত ত্রুটি), তাহলে সম্পূর্ণ রিফান্ড পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
২. রিফান্ড পেতে কতদিন সময় লাগে?
আইন অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হয়।
৩. অনলাইন এজেন্টের মাধ্যমে বুক করলে রিফান্ড প্রক্রিয়া কী আলাদা?
হ্যাঁ, সেক্ষেত্রে রিফান্ড পেতে কিছুটা সময় বেশি লাগতে পারে এবং এজেন্টের মাধ্যমেই তা ফলো আপ করতে হয়।
৪. DGCA-তে অভিযোগ কীভাবে করব?
www.airsewa.gov.in সাইটে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে অভিযোগ জানানো যায়।
৫. সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ জানানো কি কাজে আসে?
হ্যাঁ, অনেক সময় বিমান সংস্থাগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়।
ফ্লাইট বাতিলের ঘটনা দুঃখজনক হলেও, আপনার অধিকার ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকলে রিফান্ড পাওয়া একেবারেই সহজ। সরাসরি বুকিং ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করলে বিমান সংস্থাগুলি আইনত ফেরত দিতে বাধ্য।














