সোনার ঝলক আবারও আলোড়ন তুলেছে বাজারে। বৃহস্পতিবার দিল্লির বাজারে সোনার দাম বেড়ে পৌঁছেছে প্রতি ১০ গ্রামে ১,১৩,১০০ টাকা, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই বছর শুরু থেকে প্রায় ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে সোনার দাম। ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি আরও একবার ‘সেফ হেভেন’ বা নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে।
বছরের শুরু থেকে চড়া উত্থান
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সোনার দাম ছিল ৭৮,৯৫০ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম। সেই তুলনায় ২০২৫ সালে দাম বেড়েছে প্রায় ৩৪,১৫০ টাকা। বিশ্লেষকদের মতে, এত বড় উত্থান সোনাকে ‘ব্লকবাস্টার অ্যাসেট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বাজারে সোনার বর্তমান মূল্য
অল ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ১০০ টাকা বেড়ে ১০ গ্রাম সোনার দাম হয়েছে ১,১৩,১০০ টাকা। পাশাপাশি ৯৯.৫ শতাংশ খাঁটি সোনা বিক্রি হচ্ছে কর-সহ ১,১২,৬০০ টাকায়, যা এটিও সর্বোচ্চ স্তর।
কেন বাড়ছে সোনার দাম?
বাজার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একাধিক কারণে সোনার দাম এভাবে বেড়ে চলেছে—
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুদ্রাস্ফীতি ও ঋণ উদ্বেগ
দুর্বল মার্কিন অর্থনীতি
এশিয়ার ETF (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড)-এ শক্তিশালী বিনিয়োগ
বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাপক কেনাকাটা
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও কর অনিশ্চয়তা
অগমন্ট রিসার্চের প্রধান রেনিশা চৈনানি বলেছেন, বাজার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সোনার উপর ভরসা রাখছেন। অন্যদিকে, পিএল ক্যাপিটালের সিইও সন্দীপ রাইচুরা-র মতে, ২০২৫ সাল সোনার জন্য “ব্লকবাস্টার ইয়ার” হিসেবে ধরা যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে চিত্র ভিন্ন
ভারতের বাজারে রেকর্ড হলেও আন্তর্জাতিক দামে সামান্য পতন লক্ষ্য করা গেছে। স্পট গোল্ড ০.৫২% কমে দাঁড়িয়েছে ৩,৬২১.৯১ ডলার প্রতি আউন্সে। স্পট সিলভারও ০.৩৫% হ্রাস পেয়ে ৪১.০১ ডলার প্রতি আউন্সে বিক্রি হচ্ছে।
আমেরিকার রিপোর্টে সবার নজর
বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা এখন আমেরিকার কনজিউমার ইনফ্লেশন ডেটা-র দিকে তাকিয়ে। যদি সেখানে মুদ্রাস্ফীতির চাপ ধরা পড়ে, তাহলে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ শীঘ্রই সুদের হার কমাতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, সেই সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রভাব ফেলবে আন্তর্জাতিক সোনার দামের উপর। এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের সিনিয়র বিশ্লেষক সৌমিল গান্ধী জানিয়েছেন, ফেডের নীতি সোনার ভবিষ্যৎ দিক নির্দেশ করবে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য বার্তা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনা এখনও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ পছন্দ। তবে এত উঁচু দামে নতুন বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। বাজারে স্বল্পমেয়াদী ওঠানামা হওয়ার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না।
রেকর্ড ভাঙা দামের মধ্যেও সোনা আবারও প্রমাণ করেছে, অস্থির বাজার পরিস্থিতিতেও এটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সম্পদ। আগামী দিনে ফেডারেল রিজার্ভের পদক্ষেপ এবং মার্কিন অর্থনৈতিক ডেটাই ঠিক করবে এই উত্থান কতদূর গিয়ে পৌঁছাবে।














