অফবিট

অ্যাসিড আক্রমণে ঝলসে গেছে মুখ, তবুও জয় হয়েছে ভালোবাসার

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি- সালটা ছিল ২০০৯। প্রমোদিনী রউল, যিনি বাস করেন ওড়িশার ভুবনেশ্বরে। তার তখন বয়স মাত্র ১৫ বছর। ২৮ বছর বয়সী এক প্যারামিলিটারি সৈন্য তার গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছিল। এর কারণ হলো তার বিয়ের প্রস্তাবে মেয়েটি রাজি হয়নি। তাই এমন ভয়ংকর পরিণতি। তার জীবন ক্রমশ অন্ধকারে ডুবে যেতে শুরু করে। অ্যাসিড আক্রান্ত হয়ে তিনি বেশ কিছুদিন হসপিটালে কোমায় ছিলেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে চার বছর শয্যা নিয়েছিলেন, তার বিধবা মা একা হাতেই তার সেবা করে গেছেন।

কিন্তু এর মাঝে ভগবান রূপে একজনের আবির্ভাব হয়। ঈশ্বর তো নিজে আসেন না, কারুর মধ্যে দিয়েই তিনি হাজির হন। প্রমোদিনীর জীবনের সরোজ সাহু নামে এক যুবক আসে। সরোজ একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। প্রমোদিনী যেখানে তার স্বাস্থ্যের চিকিৎসা করাতেন সেখানেই একজন নার্স বান্ধবীর সঙ্গে সরোজের পরিচয় ছিল। ভালোবেসে সরোজ তাকে রানী বলে ডাকে। প্রথম প্রথম সম্পর্কের গোড়ায় সরোজ তাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। আস্তে আস্তে সম্পর্কের ভিত শক্ত হয়। চিকিৎসা চলাকালীন অনেকটা সময় সে রানীর পাশেই থাকত। সরোজ মনে মনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন, সে ভাবেন তার রানীকে আবার আগের জায়গায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরিয়ে আনবেন। তার জন্য সরোজ নিজের চাকরি ছেড়ে দেন এবং দিন রাত তার রানীর সেবায় নিজের জীবন দিয়ে দেন। একসাথে থাকতে থাকতে তারা উপলব্ধি করেন তারা একে অপরের প্রেমে পড়েছেন। একটা সময় প্রমোদিনী ভেবেছিলেন, ওড়িশা ছেড়ে তিনি চলে যাবেন এবং নিজের ক্যারিয়ারে মন দেবেন। কারণ তিনি জানতেন, সরোজের পরিবার তাকে মেনে নেবেননা। পাঁচ বছর সম্পর্কে থাকার ফলে তারা ঠিক করে এইবার সত্যি সত্যিই একসঙ্গে থাকবে। গত বছর ভ্যালেন্টাইনস ডের দিনে তারা যুক্ত হন লখনৌর একটি ক্যাফেতে।

সম্প্রতি তারা ভুবনেশ্বরে একই সঙ্গে থাকছেন এবং তারা দুজনেই অ্যাসিড আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন। বর্তমানে অ্যাসিড আক্রমণ সত্যিই বড্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়েরা বারবার অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। যখন শারীরিকভাবে মেয়েদেরকে অত্যাচার করা সম্ভব হচ্ছে না তখন তার মুখে বা শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দিয়ে তার জীবনটাকে তছনছ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যারা এমন করেন তারা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কিন্তু সব প্রমোদিনীর মতো অ্যাসিড আক্রান্ত নারীরাইতো আর পাশে সরোজের মত ভগবানরূপী মানুষকে পাননা। তাদের জীবনটা তখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

Related Articles

Back to top button