Trending NewsAppleNYT GamesCelebrity NewsWordle tipsBig 12 SoccerCelebrity BreakupsKeith UrbanUnited Nations Day

ফুলকপির সন্দেশ কিংবা মানকচুর জিলিপি, জেনেনিন কবিগুরুর খাদ্যতালিকায় কি কি ছিল

Updated :  Friday, May 8, 2020 9:34 AM

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যের ভান্ডার ছিলেন। তবে তিনি যে ভীষণ পরিমাণে ভোজনরসিক ছিলেন, তা কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা। খাদ্যতালিকায় স্বাভাবিক খাবারের সাথে সাথে অনেক অস্বাভাবিক খাবারও পছন্দের তালিকায় ছিল। তার যখন যা যা খেতে ইচ্ছা করত তার স্ত্রী মৃণালিনী তাকে সেটাই বানিয়ে দিতেন। মৃণালিনীর হাতের তৈরি ‘এলোঝেলো’ খেয়ে কবিগুরু এমন উদ্ভট নাম শুনে নাক সিঁটকে এর নাম দিলেন ‘পরিবন্ধ’। তার কবিতাতেও রয়েছে খাদ্যের নানান রকম বর্ণনা। তিনি লিখেছিলেন “আমসত্ত্ব দুধে ফেলি, তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে, হাপুস হুপুস শব্দ চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।” এত সুন্দর খাবারের বর্ণনা ভোজন রসিক না হলে বোধহয় দিতে পারতেন না। কবিগুরুর পছন্দের তালিকায় ছিল চা। তিনি জাপানি চা এতটাই পছন্দ করতেন যে, জাপানে গেলে তার জন্য একদিন চায়ের সেরিমনি করা হতো। গীতাঞ্জলি লেখার জন্য কবি নোবেল পুরস্কার পান। তার আগের বছর ইংল্যান্ডে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হওয়ার জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন “ইন্ডিয়ান সোসাইটি” লন্ডন। সেদিনের খাদ্যতালিকায় ছিল গ্রীন ভেজিটেবল সুপ, ক্রিম অফ টমেটো সুপ, রোস্ট চিকেন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, গ্রীন স্যালাড, আইসক্রিম প্রভৃতি।

কবিগুরু ফল খেতে ভীষণ ভালোবাসতেন। তার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকত পাকা পেপে, কলা, বাতাবি লেবু আর আম। তিনি আম কেটে কেটে দিলে খেতে পছন্দ করতেন না আমি চুষে খেতে তিনি বেশি ভালোবাসতেন। একবার কবি মৃণালিনী দেবীকে মানকচুর জিলিপি বানাতে বললেন। শুনে মৃণালিনী দেবী তো হাসি থামে না। তবে চেষ্টা করে তিনি সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তার পছন্দের তালিকায় ছিল কাঁঠালের দই, মাছের কালিয়া অথচ মাছ ছাড়া, ফুলকপির তৈরি সন্দেশ, দই মালপোয়া যখন যা যা ইচ্ছা করত সব বানিয়ে দিতেন মৃণালিনী দেবী। তথ্য যা বলছে তা হল, কবিগুরু যে কোন খাবারে ঝাল খুব অপছন্দ করতেন।

তাই প্রত্যেকটি খাবারের উপর চিনি তো থাকতোই। বাঙালির যে ‘খেয়ালী সভা’ আমরা এখন দেখি, তার সৃষ্টি করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঠাকুরবাড়িতে প্রায়ই বসত এমন ‘খামখেয়ালী সভা’। তবে এই খেয়ালী সভা যে সব সময় আড্ডা বা মজলিসের জন্য বসত তা নয়, অনেক সময় ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট আলোচনার জন্য এইরকম আড্ডা বসানো হতো। কবি পছন্দের দেশি খাবারের মধ্যে ছিল কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছ আর চালতা দিয়ে মুগের ডাল এবং নারকেল চিংড়ি। তিনি কাবাব খেতেও পছন্দ করতেন। হিন্দুস্থানী তুর্কি কাবাব, চিকেন কাবাব, আনারস দিয়ে মাংস ছাড়াও তিনি ভালবাসতেন ঠাকুরবাড়ির হেঁশেলের রান্না হওয়া পাঁঠার মাংস। শুধু পাকা আম নয়, তার পছন্দের তালিকায় ছিল কাঁচা আমও। আচার খেতে বেশ ভালবাসতেন। সকালটা শুরু হতো এক গ্লাস নিম পাতার রস দিয়ে। কবিগুরু ছিলেন অসম্ভব পানের ভক্ত। তার নাতজামাই কৃষ্ণ কৃপালিনীর কাছ থেকে খুব সুন্দর একটি পানদানি উপহার পান।

ফুলকপির সন্দেশ কিংবা মানকচুর জিলিপি, জেনেনিন কবিগুরুর খাদ্যতালিকায় কি কি ছিল

কবিরাজি কাটলেট নাম হওয়ার পিছনে রবীন্দ্রনাথের নাম বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ জুড়ে দিয়েছেন। ‘কবিরাজি’ কথাটা সাধারণত ইংরেজি কথা ‘কভারেজ’ থেকে এসেছে, আবার কেউ কেউ মনে করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বসন্ত কেবিনে গিয়েছিলেন কাটলেট খেতে, এই কাটলেটের উপরে থাকা পাউরুটির প্রলেপ কবির একেবারে পছন্দ ছিল না, তাই কবির মনের মতন করে ডিমের গোলায় ডুবিয়ে বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল কবিকে এক কাটলেট। সেটা খেয়ে কবির বেশ পছন্দ হয়েছিল। সেই থেকে এই কাটলেটের নাম দেওয়া হয় ‘কবিরাজি কাটলেট’। তবে এ বিষয়ে নানা মুনি নানা মত পোষণ করেছেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনি যেন এক জ্ঞানের ভান্ডার। উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, নাটক, গান, নাচ, আঁকায় তিনি সর্বত্র তার ডালপালা প্রসারিত করেছেন। আজ ২৫ শে বৈশাখ, কবিগুরুর এই জন্মদিনে তাকে প্রণাম জানিয়ে আমরা প্রত্যেক ভারতীয়রা আজ লকডাউনে বাড়িতে বসেই কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করব। ২৫ শে বৈশাখের দিন শান্তিনিকেতন, জোড়াসাঁকোয় কোন অনুষ্ঠান নেই, অনুষ্ঠান আয়োজনের কোনো তাড়া নেই, এমন ২৫ শে বৈশাখ বাঙালি তথা গোটা ভারতবাসীর পক্ষেই খুব দুঃখের। তবে রবীন্দ্রনাথ আমাদের সাথে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। তিনি বাঙালি তথা গোটা ভারতবাসীর মনের মনিকোঠায় রয়ে গেছেন। এ বছরটা না হয় সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম করেই আমরা এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করি। সব ভালো কিছু তোলা থাক পরের বছরের জন্য।