রাজ্য ও রাজ্যপাল সংবিধানের রীতির সৌজন্যকে রক্ষা করে চলছেন না : বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য
রাজ্য সহ গোটা দেশজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাইরাস এর প্রভাব থেকে মুক্ত হবার জন্য গোটা বিশ্বে ভ্যাকসিন তৈরীর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিন কবে আবিষ্কার হবে , কবে বাজারে আসবে এ নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক চলছে। ভারতবর্ষের প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা যে রেকর্ড করে চলেছে তা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ডাক্তার সহ বিজ্ঞানীমহলে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। হসপিটালে বেড পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠছে। এর পাশাপাশি পুনরায় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রাজ্য ও রাজ্যপাল এর মধ্যে বিতর্ক রাজ্য রাজনীতিতে তথা রাজনৈতিক মহলে জল্পনা সৃষ্টি করেছে।
এই বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত নেওয়ার জন্য আমাদের ভারত বার্তার প্রতিনিধি প্রীতম দাস যোগাযোগ করেছিলেন মাননীয় শ্রী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সঙ্গে। তিনি এই বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের ভারত বার্তার প্রতিনিধিকে জানান।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অভিযোগ করেছেন যে , হাসপাতালে মানুষ বেড পাচ্ছে না। সরকারি পরিসংখ্যান ও মুখ্যমন্ত্রীর দাবির মধ্যে ফারাক রয়েছে। অন্যদিকে ফিরহাদ হাকিম মন্তব্য করেছেন কোন হাসপাতাল থেকে রোগীকে ফেরানো হচ্ছে না , সব হাসপাতালে বেড আছে ও মানুষের কোন অভিযোগ নেই। এই পুরো বিষয়টি নিয়ে ঠিক কি প্রতিক্রিয়া দিতে চাইবেন ?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : এই সময় সকলের দাবি হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা তৈরি করা যাতে মানুষ আতঙ্কিত না হয়। দুটি দায়িত্বপ্রাপ্ত দল , একদল কেন্দ্র চালাচ্ছে ও একদল রাজ্য চালাচ্ছে , এই দুটো দল দায়িত্বজ্ঞানহীন এর মত কাজ করছে। রাজ্য সরকার যেমন সংখ্যার তথ্য গোপন করছে অনুরূপভাবে ভারত সরকার সংখ্যা তথ্য গোপন করছে। মানুষের মধ্যে কোনরকম ভরসা তৈরি করছে না। আপনি সেই কাজটা তৈরি করার বদলে দিলীপ বাবু এক কথা বলছেন , ফিরহাদ বাবু আরেক কথা বলছেন। মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা আরেকরকম।
তাহলে কি এই সেনসেটিভ বিষয়টা নিয়ে রাজনীতি চলছে ?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : দেখুন সমস্ত কিছুর পেছনেই রাজনীতি থাকে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনো ক্ষুদ্র দলীয় রাজনীতি করার দরকার নেই। এই বিষয়টার রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমাধান হওয়া দরকার। রাজ্যের চিকিৎসকরা বলেছিলেন – যে পরিমাণ বেড আছে বলে ঘোষণা করা হচ্ছে কার্যত তা নেই। তাই রাজ্য সরকারের দায়িত্ব এই তথ্যগুলি পরিষ্কার করে মানুষের কাছে রাখা যাতে মানুষ সুচিকিৎসার সুযোগ পায়। আর দিলীপবাবু সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে কিভাবে মানুষ নিজেদেরকে এই সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন এ বিষয়ে সচেতন করা। এই দুটো কাজ যদি করেন তবেই উপকার হবে মানুষের। তা না হলে মানুষের অসহায়তা নিয়ে দুটি অযোগ্য দল ঝগড়া করে যাচ্ছে।
ভারত সহ গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। কোথাও আনলক করাটা কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত হয়েছে বলে মনে করেন কি ?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : যখন আমাদের লক করা দরকার ছিল তখন করা হয়নি। যখন বিদেশ থেকে মানুষের এদেশে আশাটা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার ছিল , পরীক্ষা করে তাদের ছাড় দেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকার সেটা করেনি। ডিসেম্বর মাস থেকেই আমাদের কাছে এই সচেতনতা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , যে করো না সংক্রমণ ছড়াবে। সেই সময় দেশের সরকার এগুলোকে গুরুত্ব দেয়নি। যখন বুঝতে পারলো সংক্রমণ টা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখন হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা করে দিল। কোন রকম প্রস্তুতি না দিলে এবং তাতে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ঘর ছাড়া ও কর্মহীন হয়ে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো। দেশের সরকার তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অবজ্ঞা করলেন যার ফলে রোগটা সংক্রমিত হয়ে ছড়ালো। আর যখন লকডাউন করা দরকার তখন আনলক করে দিচ্ছে। এটা পুরোপুরি পরিকল্পনাহীনতার জন্যই হয়েছে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার অবৈজ্ঞানিক ভাবে কাজ করছে , অপরিকল্পিত কাজ করছে।
আবারো রাজ্য ও রাজ্যপাল এর মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। ইতিপূর্বে এই ঘটনার সাক্ষী আমরা অতীতেও থেকেছি। আজকে রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিপ্রেক্ষিতে শাসকদল অভিযোগ করেছে রাজ্যপাল রাজনীতি করছে। বারবার রাজ্য এবং রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাতে নেপথ্যে কি কারণ হতে পারে বলে আপনি মনে করেন ?
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। রাজ্য এবং রাজ্যপাল তারা কেউই সংবিধানের যে রীতি বা কাঠামো আছে , তার যে সৌজন্যে আছে সেটাকে রক্ষা করে চলছেন না। রাজ্য সরকারের উচিত রাজ্যপাল কে তাদের আস্থায় নিয়ে বোঝানো উচিত তারা কি কি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং তারপর এই কাজটাকে কার্যকরী করা। রাজ্যপালের উচিত মূলত রাজ্য সরকার যাতে ঠিকমত কাজ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের ডেকে বলা। এরকম প্রকাশ্যে দিবালোকে বিতর্ক করছেন এটা অত্যন্ত খারাপ হচ্ছে। ভারতবর্ষের সংবিধানের যে শিষ্টতা আছে সেটা নষ্ট হচ্ছে এবং মুশকিল হচ্ছে তৃণমূল যখন বিরোধী দল ছিল তখন তারা রাজ্যপালের এই ধরনের ভূমিকা কে খুব উৎসাহিত করেছেন । তাহলে আজকে যখন রাজ্যপালরা এই ধরনের ভূমিকা নিচ্ছে তারা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে করেছেন। তাতে তৃণমূল দল অস্বস্তিতে পড়েছে। এইরকম বিতর্ক বন্ধ হওয়া উচিত অবিলম্বে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী বসে বিরোধের যে জায়গা আলোচনা করে মিটিয়ে নিক। এরকম করাটা তো ঠিক নয়। আমরা তো দেখেছি কেরালায় একসময় রাজ্যপাল আরিফ খান বিভিন্ন মন্তব্য করছিলেন সিএএ , এনআরসি নিয়ে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে রাজ্যপালের সাথে কথা বলে বিষয়টার সমাধান করতে পেরেছেন। সুতরাং দু’জনকেই দায়িত্ব নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা করে এই ধরনের ছেলেমানুষি বিতর্ক পাড়ার ক্লাব এর মত এটা বন্ধ করা দরকার।
[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]