বর্তমানে নেট দুনিয়ায় ভাইরাল বিষয়টি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং মুহূর্তের মধ্যেই যে কেউ ভাইরাল হয়ে উঠতে পারে এই যুগে। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে করে ভাইরাল হওয়ার জন্য কোন পূর্ব জনপ্রিয়তার প্রয়োজন পড়ে না, আপনি শুধুমাত্র একজন বাদাম বিক্রেতা হয়েও সারা দুনিয়ায় নিজের নাম ছড়িয়ে দিতে পারবেন এবং বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন সকলের প্রিয় একজন মানুষ হিসেবে। আশা করছি বোঝাই যাচ্ছে কার ব্যাপার আমরা কথা বলছি। আগে হ্যাঁ আমরা কথা বলছি বীরভূমের বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকরের ব্যাপারে যিনি কাচা বাদাম গানটি তৈরি করে সারা বিশ্বে নিজের নাম ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।
বীরভূমের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা হলেও তার এই আকর্ষণীয় গানের দরুন তিনি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছেন। নিজের দোকানের বাদাম বিক্রি করার জন্য তিনি নিজেই এই গানটি রচনা করেন এবং সুর দেন এবং তিনি নিজেই খালি গলায় গান গাইতে গাইতে এই বাদাম বিক্রি করার চেষ্টা করতেন। একদিন হঠাৎ করেই তার এই গানটি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এবং সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করে নেন ভুবন বাদ্যকর। বীরভূমের একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে জনপ্রিয়তা লাভের পর তিনি এখন সারা বিশ্বে একটি জনপ্রিয় মুখ। তবে এখন আর তিনি কোনো সাধারণ বাদাম বিক্রেতা নন, বরং তিনি এখন একজন গীতিকার এবং সুরকার ও বটে। বিভিন্ন জায়গায় তাকে আমরা দেখছি নিজের গানের জন্য পারফরম্যান্স করতে। যেখানে আমরা একাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে দেখতে পেতাম পারফরম্যান্স করছে সেখানেই একই জায়গায় স্থান পেতে শুরু করেছেন ভুবন বাদ্যকর।
সম্প্রতি কলকাতার একটি জনপ্রিয় নাইট ক্লাবে তাকে দেখা গেল পারফরম্যান্স করতে। শুক্রবার রাতে কলকাতার সবথেকে বিলাসবহুল কিছু নাইট ক্লাবের মধ্যে একটিতে আমরা দেখলাম ভুবন বাদ্যকরকে লাইভ পারফরম্যান্স করতে। তার জীবনের এই সাফল্য নিয়ে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ভগবান বাবু। তিনি বললেন, “আমি অত্যন্ত খুশি যে আমি আজকে এখানে আসতে পেরেছি।” একটি চকচকে জ্যাকেট পরে ব্যান্ড মিউজিক সহযোগে তিনি নিজের গলায় নিজের তৈরি করা কাচা বাদাম গান গাইলেন কলকাতার সবচেয়ে অভিজাত কয়েকজন ব্যক্তিত্বের সামনে। সকলেই তার গান অত্যন্ত পছন্দ করেছে। তবে ভুবন বাবু নিজের এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না, তিনি এতটাই জনপ্রিয় কিভাবে হয়ে উঠলেন। নিজের সরলতাভরা কথায় ভুবন বাদ্যকর বললেন, “আমি অত্যন্ত খুশি যে আমি আজকে এখানে আসতে পেরেছি এবং আপনার আমাকে এতটা ভালোবেসেছেন। আপনাদের সামনে গান গেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমার কাছে আনন্দ প্রকাশ করার মত ভাষা পর্যন্ত নেই।”
৩ মাস আগে যখন এই ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিটি নিজের পরিবারের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন, তখন হয়তো তিনি জানতেনও না, শুধুমাত্র একটি গান তাকে এতটা সাফল্য এনে দিতে পারে। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের গানের দরুন ১.৫ লক্ষ টাকা রয়েলিটি তিনি পেয়ে গিয়েছেন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো সৌরভ গাঙ্গুলী সঞ্চালিত দাদাগিরি আনলিমিটেডের মঞ্চেও আমরা দেখতে পেয়েছি ভুবন বাবুকে। সৌরভ গাঙ্গুলীর ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েও ভুবনবাবু রীতিমতো বাকরুদ্ধ।
একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বললেন, “সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সত্যিই একজন দারুণ মানুষ। তিনি সত্যিই অত্যন্ত ভালো মনের একজন ব্যক্তিত্ব। এমনকি তিনি আমাকে নিজে একটি গিফ্ট পর্যন্ত দিয়েছেন। শুধু দাদাগিরির পুরস্কার ছাড়াও, আমি তার কাছ থেকে কিছু উপহার পেয়েছি এবং তিনি আমাকে আমার পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দিয়েছেন।” ভুবন বাবু সেই সাক্ষাৎকারে তার গ্রামের প্রতিবেশীদের দেওয়া উপদেশের কথাও বললেন। ভুবন বাদ্যকর বললেন, “আমি যখনই জনপ্রিয় হয়ে যাই, তখন আমার প্রতিবেশীর আমাকে উপদেশ দেয় যেন আমি বাড়ি থেকে না বেরোই, না হলে আমাকে কেউ হয়তো অপহরণ করে নেবে।” তবে শুধু এটুকুই নয়, তার জনপ্রিয়তার জন্য তিনি অত্যন্ত গর্বিত বোধ করেন। বিশেষত তার ছেলে যখন ভুবনের গানের একাধিক ভার্সন এর কথা তাকে জানায় এবং সেই গানগুলি শোনায়, তখন ভুবন বাবু খুশি হন।
কিন্তু ভুবন বাবুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? তিনি কি আবার বাদাম বিক্রি করবেন নাকি অন্য কোন দিকে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাবেন? এই প্রসঙ্গে নিজের মনের কথা শোনালেন ভুবন বাদ্যকর। তিনি বললেন, “ছোট থেকেই আমার শিল্পী হবার শখ ছিল। আমি আপনাদের মতো একজন হতে চেয়েছিলাম। ভাগ্যের জোরে আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছি। আমার স্বপ্ন এখন অনেকাংশে সফল। আমি এখন নিজেই একজন শিল্পী হিসেবে থাকতে চাই। এতটা জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরেও যদি আমি এখন বাদাম বিক্রি করতে চাই তাহলে হয়তো আমাকে নিয়ে পাঁচজন পাঁচটা কথা বলবে। অনেকে হয়তো এই বিষয়টাকে কটাক্ষের চোখেও দেখতে পারে। তাই আমি বাকি জীবনটা এখন শিল্পী হিসেবে কাটাতে চাই। যদি পরবর্তীতে পরিস্থিতি পাল্টায় তখন সেই হিসাবে ফের বাকিটা ভাবা যাবে। তবে এখন শুধুমাত্র আমি নিজের সঙ্গীত চর্চা নিয়ে থাকতে চাই, আর কোনদিকে ভাবতে চাইনা।”