ভারত বার্তা ডিজিটাল ডেস্ক, কুণাল রায় : সাল ১৯৮৪, কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে শুরু হয় মেট্রো পরিষেবা। উদ্দেশ্য একটাই ছিল- যাত্রীগণকে একটু স্বস্তি দেওয়ার। রোজকার বাস, ট্রাম ও ট্যাক্সির হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি প্রদান করা। ক্লান্তি ও ঘাম থেকে বের করে তাদের সরকারী পরিষেবার এক ভিন্ন স্বাদ প্রদান করা। বলা বাহুল্য সফলও হয়েছিল তাদের সেই প্রয়াস। আজ প্রায় তিন দশকের ওপরে এই মেট্রো পরিষেবা নিয়ে সাধারণ জনগণের সেভাবে কোন অভিযোগ নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের চরম ব্যস্ততার সাথী এই মেট্রো। এক কথায় বলা যেতে পারে, মেট্রো রেলে দেশবাসীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে বহুদিন পূর্বেই।
তবে সম্প্রতি এমন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা কিছুটা হলেও এক চরম অসন্তোষের কারণ হয়ে ধরা দিয়েছে আমাদের সামনে। পূর্ব-পশ্চিম যুক্ত করার এই আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি রূপায়িত হওয়ার কথা ছিল প্রায় সাত বছর আগে, মানে ২০১২। দীর্ঘ সাত বছর এই ভাবেই কেটে গেছে নিস্তব্ধে! বর্তমানে সরকার চাইছে এই বৃহৎ মেট্রো প্রকল্পটি যেখানে এই তিলোত্তমা নগরী সহ হাওড়া, সল্ট লেক ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে এক ছাদের নীচে আনা হবে, আগামী ২০২১ এর মধ্যে সমাপ্ত করতে। নিঃসন্দেহে, এটি একটি জনমুখী সুপরিকল্পনা। কিন্তু বিগত এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে উঠে এসেছে বেশ কিছু বিতর্ক। প্রায় প্রতিটি খবরের কাগজের শীর্ষ খবর কলকাতার বউবাজার অঞ্চলের মেট্রো কেলেঙ্কারি! কলকাতা মহানগরীর এই আভিজাত্য পূর্ণ জায়গায় নেমে এসেছে ধস! মাটি পরীক্ষা করা সত্ত্বেও, মেট্রোর কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই সৃষ্টি হয় এক আলোড়ন! দুশো বছরের বেশী সময়ের বহুতল বাড়িগুলো তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে।
অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী ৫২ টি বাড়ির ধস নামে, বহু পরিবার গৃহহীন হয়েছে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৭০ এর ও বেশী পরিবার বিপুল আকারে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নেমে এসেছে রাস্তায়। তাদেরকে আপাতত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করা হয়েছে! তীব্র প্রতিবাদ, কান্না ও যন্ত্রনায়ে তাদের জীবন আজ জর্জরিত। মনে হয়ে জীবনের সৌন্দর্যে গ্রহণ লেগেছে, এক লহমায় সব কিছু পাল্টে গিয়েছে! অবশেষে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মমতা ব্যানার্জী হস্তক্ষেপ করেন। তিনি কেন্দ্রের কাছে প্রতি পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতি পূরণ দাবী করেন। এই ঘটনার মাধ্যমে উনি আরেকবার বুঝিয়ে দেন যে তাঁর সরকার সবসময় জনগণের পাশেই আছে ও থাকবে। আপাতত মেট্রোর কাজ বন্ধ। কবে শুরু হবে তাও সঠিকভাবে জানা নেই। সরকারী মহল থেকে কি বা বার্তা আসবে, এখন তারই অপেক্ষা!
আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনে শিউরে উঠি। চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক ধংশলীলার ছবি। তবে কখনও প্রশ্ন করেছি যে মানুষ তার থেকেও অধিক মাত্রায় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সম্ভত না! তাই শুধু পরিকল্পনা নয়- চাই একটু সচেনতা, একটু অনুভূতি, একটু মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর ইচ্ছে! মাননীয় কতৃপক্ষ, শুনছেন কি!!