খেলানিউজফুটবল

চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র, দেখে নিন তার জীবনের গল্প এক নজরে

Advertisement

“যখন ঈশ্বর সিদ্ধান্ত নেবেন, তখন তা আমাদের পক্ষেই যাবে।” মারাদোনা সর্বদা মনে করতেই যে তিনি ধারের জীবনে বেঁচে আছেন। তবে তার জীবনের গল্প অনেক কেই অবাক করবে। কিন্তু বহু বাঁধা কাঁটিয়ে ও একটি কথা সর্বদা উঠে আসবে ‘সর্বকালের অন্যতম ফুটবলার’ এবং নিজের সময়ের সেরা ফুটবলার ছিলেন মারাদোনা। কাল যিনি দিব্বি ছিলেন, আজ সেই জীবন আর নেই। শান্ত হয়ে গিয়েছে তার অস্থির আত্মা। অবশেষে বহু অস্থিরতা কাঁটিয়ে উঠে ঈশ্বরের কাছে চলে গেলেন ব্রুনোর বস্তির সেই ছেলেটি। তবে সেই ছেলেটি আর পাঁচ জনের মতো ছিলনা। তার চোখে ছিল ইতিহাস তৈরির স্বপ্ন।

আমরা সবাই জানি ফুটবল এমন একটি খেলা যেখানে ১১ জন খেলোয়াড়ের সমান গুরুত্ব থাকে দলে। কিন্তু এই ফুটবলার একার দায়িত্বে জিতিয়েছিলেন তার দলকে। ১৯৮৬ এর সেই বিশ্বকাপ। শেষ খেলা ছিল ইংল্যান্ড এবং আর্জেন্টিনার মাঝে। সেই শেষে আর্জেন্টিনার জয়। না সেই দৃশ্য ভোলা সম্ভব না তাকে। কোনও দলের ক্ষমতা ছিলনা তাকে গোল করা থেকে আটকাবে। বেলজিয়ামের বিপক্ষে সেমিফাইনালে জয়ের জন্য যে গোলটি প্রয়োজন ছিল, তাও নিশ্চিত করেছিলেন মারাদোনা নিজে। সেই কারণে খুব সহজেই বলা চলে যে চমৎকার তা জীবনে একদম একটি ছোট বিষয় ছিল। ৫ফুট ৫ ইঞ্চির এই ব্যক্তির ছিল অবিশ্বাস্য একটি শারীরিক গঠন ও। সেই কারণেই বিপরীত দলের পক্ষে বোধ হয় মারাদোনাকে আটকানো সহজ বিষয় ছিল না।

তবুও বহু চ্যালেঞ্জ এসেছে তার জীবনে। বহু বার শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তবু কখনও শারীরিক সমস্যার বাহানা দেখিয়ে পিছিয়ে আসেননি এই যোদ্ধা। যুদ্ধ কখনও ভয় দেখাতে পারেননি তাকে।

তারপর বিশ্বে বড় বড় সমস্ত খেলোয়াড়রা যখন মিলান, রোমের বড় দলে যোগ দিচ্ছে, এমন সময় মারাদোনা যোগদান করেন নাপোলি নামে একটি ছোট দলে। নাপোলি বেশ কিছু বছর ধরে সিরি এ তে খারাপ প্রদর্শন করছিল। সেই কারণে প্রথম খেলায় তাকে সহ্য করতে হয়েছিল চরম কটাক্ষ। তবে সেই কটাক্ষের জবাব মারাদোনা দিয়েছিলেন নিজের খেলার মাধ্যমে। পরবর্তীকালে নিজের দক্ষতায় নাপোলিকে দুই বার ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ এবং একবার ইউইএফএ কাপ জিতিয়েছিলেন মারাদোনা। এর থেকেই প্রমাণ হয় যে কতটা উচ্চমানের খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। তারপর ১৯৮৬ সালে তার এক অবৈধ ছেলে জন্মগ্রহণ করে। এর সাথেই দলে প্রত্যাবর্তন করেন মারাদোনা। সেই প্রত্যাবর্তন আজও ফুটবল ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বলা বাহুল্য, ৩০ বছর বয়েস পর্যন্ত তার ছেলে কে তিনি মেনে নেননি। পরবর্তীকালে অবশ্য মারাদোনা নিজের ছেলেকে স্বীকার করেছিলেন।

এখানেই তার জীবনের সমস্যার শেষ নয়। ক্রাইম বস কারমাইন গিয়ালয়ানো এর সাথে তার বন্ধুত্বের কথা কারো অজানা নয়। অনেকেই মনে করেন মারাদোনার কোকেনের নেশার পিছনে কারমাইনের অবদান রয়েছে। ১৯৯১ সালে ড্রাগ টেস্ট করা হয় তার। কোনও ভাবে দলীয় বন্ধুদের দ্বারা মূত্রের নমুনা জোগাড় করে নিজেকে বাঁচান মারাদোনা।

বলা বাহুল্য ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপেও তিনি ইতালিকে হারিয়েছিলেন সেমিফাইনালে। সেখানে একটি পেনাল্টি শুট-আউটের মাধ্যমে এমনটা সম্ভব করেছিলেন মারাদোনা। তারপর থেকেই ইতালি ঘৃণা করতে থাকে তাকে। অন্যদিকে পুলিশ ওয়্যারট্যাপিং অপারেশনে ড্রাগ এবং কোকেনের জন্য ২ বছরের জেল হয় এই ফুটবল লেজেন্ড এর।

কিছু সপ্তাহ পরে, তিনি নেপোলির একটি ম্যাচের শেষে হওয়া ড্রাগ পরীক্ষায় ব্যর্থ হন এবং তখন ১৫ মাসের জন্য বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া হয় আদালত হতে। এটিই ছিল মারাদোনার ইতালিয়ান অ্যাডভেঞ্চারের সমাপ্তি। তারপর ১৯৯৭ সালে ৩৭ বছর বয়েসে খেলা থেকে অবসর নেন এই ফুটবল লেজেন্ড।

ফুটবল খেলার সফর শেষ হলেও ২০০৮ সালে ম্যানেজার হিসেবে নিজের দলে ফিরে আসেন মারাদোনা। তবে সেই সফর বিশেষ ভালো ছিলনা। এর আগেই কোকেনের ওভার ডোজের জন্য একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল মারাদোনার। তবু কোকেনের থেকে দূরে যেতে পারেননি তিনি। কিছুদিন আগে তার ৬০ তম জন্মদিনের কিছুদিন পরে তিনি মস্তিষ্কের চিকিৎসা করান। বহুবার তার ডাক্তার তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন নিজের স্বভাব বদলাতে। কিন্তু তিনি তা শোনেননি।

তবে মারাদোনা চির অমর হয়ে থাকবেন প্রতি ফুটবল প্রেমীর দেহে। সর্বদা এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি একটা কথাই বলতেন,” আমি সাদা অথবা কালো হতে পারি। কিন্তু কখনও ধূসর হতে দেখবে না তুমি আমায়।”

Related Articles

Back to top button