মহিলার নাচ দেখে ফিদা মাধুরী, ডান্স দিওয়ানে মঞ্চ কাঁপালেন যমুনা
অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত (Madhuri Dixit) মানেই নব্বইয়ের দশকের ‘তেজাব’-এর মোহিনী অথবা ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’-এর নিশা। ‘ধক ধক গার্ল ‘ মাধুরীর আদায় ফিদা সতেরো থেকে সাতাশি। বলিউডের সুন্দরী অভিনেত্রী তথা মোহময়ী নর্তকী বললেই সবার আগে মনে আসে মাধুরীর নাম। একসময় মাধুরী যেমন পুরুষদের হৃদয়ে ঝড় তুলতেন, তেমনি মেয়েরা হতে চাইতেন মাধুরীর মতো সুন্দরী। সম্প্রতি শুরু হয়েছে কালার্স চ্যানেলের জনপ্রিয় ডান্স রিয়েলিটি শো ‘ডান্স দিওয়ানে সিজন-3’। এই ডান্স রিয়েলিটি শোয়ে সব বয়সের পুরুষ ও নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারেন। এই কারণে ডান্স দিওয়ানের প্রতিযোগীদের তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয়, যথা- ফার্স্ট জেনারেশন, সেকেন্ড জেনারেশন, থার্ড জেনারেশন। ফার্স্ট জেনারেশনের প্রতিযোগীরা শিশু ও টিন এজ। সেকেন্ড জেনারেশনের প্রতিযোগীরা যুবক-যুবতীরা এবং থার্ড জেনারেশনের প্রতিযোগীরা প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ার দল। ‘ডান্স দিওয়ানে সিজন-3′-এর বিচারকের আসনে রয়েছেন মাধুরী দীক্ষিত, ডান্স কোরিওগ্রাফার ধর্মেশ (Dharmesh) এবং অপর এক ডান্স কোরিওগ্রাফার ও স্টেজ ডিরেক্টর তুষার কালিয়া (Tushar Kalia)। শোয়ের সঞ্চালনা করছেন রাঘব (Raghav)।
ডান্স দিওয়ানের মঞ্চে প্রতি উইকেন্ডে বিচারক ও দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করে নতুন ডান্স কোরিওগ্রাফির চমক। অনেকেই এই মঞ্চ থেকে শুরু করেছেন নিজের ডান্সের দ্বিতীয় ইনিংস। এরকম একজন মহিলা হলেন মুম্বইয়ের যমুনা দাস (jamna das)। যমুনা মাধুরীর ভীষণ ফ্যান। তিনি সাধারণতঃ মাধুরী অভিনীত ফিল্মের গানের সঙ্গে নাচ করেন। মাধুরী যমুনার অনুপ্রেরণা। যমুনার নাচের প্রতিটি বিভাগে নিখুঁতভাবে ফুটে ওঠেন ‘মোহিনী’।
আদতে গুজরাতের মেয়ে যমুনা ডান্স দিওয়ানের মঞ্চে মাধুরীর নাচ দেখার জন্য শুনিয়েছেন নিজের লড়াইয়ের কথা। খুব অবাক লাগছে না? হ্যাঁ, এটাই সত্যি। ভারতের অনেক অংশে এমনকি খাস কলকাতা শহরেও কাজের বিনিময়ে মানুষ যেমন একবেলার পারিশ্রমিক হিসাবে পান এক প্যাকেট খাবার যা প্রতিবেদকের অত্যন্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ঠিক সেভাবেই যমুনা পাশের বাড়ির কাকিমার বাসন মেজে দেওয়ার বিনিময়ে দেখতে পেয়েছিলেন মাধুরীর নাচ। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে যমুনা নাচতে ভালোবাসেন। কিন্তু এই নাচের জন্য একসময় তাঁকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। গুজরাতের মেয়ে যমুনা একসময় বিয়ে হয়ে চলে আসেন মুম্বই। প্রথাগত নাচ না শিখলেও যমুনা লুকিয়ে লুকিয়ে নাচ করতেন। একদিন তিনি ধরা পড়ে যান তাঁর স্বামীর কাছে। যমুনাকে অবাক করে দিয়ে তাঁর স্বামী বলেন, “নাচতে জানো, তা বলনি কেন?”। স্বামীর তিরস্কারের বদলে যমুনার ভাগ্যে জুটেছিল স্বামীর প্রশংসা। এরপর পাড়ায় কোনো অনুষ্ঠান হলে যমুনাকে নাচ করতে উৎসাহ দিতেন তাঁর স্বামী। ঘরের কাজ করতে করতেও যমুনা নাচ করে নেন মাঝে মাঝেই। এমনকি বাদ যায় না রান্নাঘরও। হয়তো অনেকেই বলবেন , এসব গল্পকথা, মনগড়া কাহিনী। কিন্তু যমুনার সঙ্গে একাত্ন হতে পারবেন মহিলারা যাঁরা সমাজ ও সংসারের চাপে নিজের প্রতিভা, নিজের প্যাশনকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হন। আত্মত্যাগ কোথাও যেন আত্মহত্যার সমান। স্বামীর উৎসাহে যমুনা আসতে পেরেছেন ‘ডান্স দিওয়ানে সিজন-3′-তে। প্রতি সপ্তাহান্তে মঞ্চে ঝড় তুলছে তাঁর নৃত্যশৈলী। বিচারকদের কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন যমুনা। স্বয়ং মাধুরী তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে যমুনার ডান্স ভিডিও। বুকে হাত দিয়ে হলফ করে বলুন তো, আমাদের মধ্যেও কি অস্তিত্ব নেই অনেক যমুনা, অনেক মাধুরীর, যাঁরা পরিবার ও সন্তানের জন্য নিজের অতীব প্রিয় নাচ ছেড়ে দিতে বাধ্য হননি! তাঁদের মধ্যেও অনেকের কি ইচ্ছা হয় না, আরও একবার নতুন করে নিজের নাচ শুরু করতে, ঘরের কোণায় অযত্নে ফেলে রাখা ঘুঙুরে বোল তুলতে? নিশ্চয়ই হয়, তাই একবার এগিয়ে আসুন না, একবার নিজেকে ভালোবেসে দেখতে দোষ কি! সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে নিজের প্রতিভাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে যদি কপালে তিরস্কার জোটে, নাহয় জুটবে। কিন্তু তবু তো দিনের শেষে মেয়েরা জানবেন, জীবনে অন্তত একবার, নিজেকে ভালোবেসে, নিজের জন্য বেঁচেছেন।
দেখুন সেই নাচের ভিডিও ক্লিক করুন