২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন তিনি নেতাজি সংক্রান্ত সমস্ত ফাইল ডি ক্লাসিফাই করতে শুরু করবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। ২০১৬ সাল থেকেই মোদি শুরু করে দেন ফাইল ডি ক্লাসিফাই করার প্রক্রিয়া। তাও আবার শুরু করেন নেতাজির জন্মদিন অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি থেকে। তার প্রাক্কালে, একটি নতুন চাল খেলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি, ২০১৫ সালে নেতাজি সংক্রান্ত সমস্ত ফাইল সকলের প্রকাশ্যে নিয়ে চলে আসেন।
বারংবার নির্বাচনী দলগুলি বাংলা তথা ভারতবর্ষের নেতাজির প্রতি আবেগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করেছে। এবারও তার অন্যথা হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ২০১৯ নির্বাচনের আগে ভারতবর্ষের নেতাজি আবেগকে অত্যন্ত সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগে ২০১৮ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠার দিন সকলকে চোখে দিয়ে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দুটি দ্বীপের নাম তিনি আবারও রাখেন স্বদেশ এবং স্বরাজ। ২১ অক্টোবর অর্থাৎ INA প্রতিষ্ঠার দিন লাল কেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। বারংবার এইভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি ভারতবর্ষের নেতাজি আবেগকে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু তারপর সব কিছু চুপচাপ।
২০১৮ ই শেষ, তারপরের দু’বছর INA প্রতিষ্ঠার দিন লালকেল্লাতে কোন পতাকা উত্তোলন হয়নি। কোন ফাইল ক্লাসিফাই করার কাজও দেখা যায়নি। উল্টে বেশকিছু ফাইল কূটনৈতিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন এবং তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এই বছর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্ম শতবার্ষিকী। তাই এই বছর নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিজেপি নেতাজি আবেগকে হাতিয়ার করে নামতে চলেছে বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
গত ২ বছর তেমন কোনো কাজ না হলেও, এ বছর সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে বছরভরের কর্মসূচি গ্রহণ করা হতে পারে। এছাড়াও রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ভোটের হাওয়াকে নিজের দিকে টানতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবছর বাংলায় কোন একটা চমকপ্রদক ঘোষণা নিয়ে হাজির হতে পারেন। সামনেই নেতাজির জন্ম শতবার্ষিকী। সেই দিনটিকে উদ্দেশ্য করে বিজেপির ঢালাও কর্মসূচি থাকতে পারে।
কিন্তু তার আগেই কেন্দ্রের এই কর্মসূচির পাল্টা একটি মোক্ষম দাওয়াই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি সংক্রান্ত সব থেকে বড় আবেগের জায়গা ছুঁয়ে ঘা দিলেন কেন্দ্রের সবথেকে দুর্বলতম জায়গাতে।
এবার যদি মোদি সরকারকে নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য সমাধান করতে হয় তাহলে নিজের সরকারের সাথে আপোষ করতে হবে। আর তারপরেও যদি এই রহস্য রেখে দেন তাহলে বাঙালির আবেগ কে নিজের দিকে টানা যাবে না। এখন এটাই দেখার, প্রধানমন্ত্রী কতটা সুকৌশলে বাংলার মানুষের মনে নেতাজির আবেগকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে এগিয়ে থাকতে পারেন।