২২ নভেম্বর ২০১৯। ক্রিকেট ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কারণ, এইদিনই বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম ক্রিকেটের নন্দনকানন ইডেন গার্ডেন্সে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পিঙ্ক টেস্ট হওয়ার জন্য যাবতীয় আয়োজন করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। গোলাপি বলে টেস্ট খেলাকে ‘পিঙ্ক টেস্ট বলা হয়। সাধারণত, দিনের বেলায় লাল বলে টেস্ট খেলা হয়ে থাকে। কিন্তু একদিনের ম্যাচের মতো টেস্ট ম্যাচ যাতে দিনে-রাতে হয়, তার জন্যই এই ভাবনা ভেবেছিলেন মহারাজ। বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের মসনদে বসার পর নিজের এই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন তিনি। শুধু রূপই দেননি, এই পিঙ্ক টেস্ট ঘিরে ইডেনের বাইশ গজে যে ঐতিহাসিক মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছিল, তা আজীবন সকল ক্রিকেটপ্রেমীর মনে উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।
একদিকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেট জগতের নক্ষত্ররা। কে ছিলেন না সেই তালিকায়? শচীন তেন্ডুলকর, ভিভিএস লক্ষ্মণ, কপিল দেব, সুনীল গাভাসকর থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য ক্রিকেটীয় নক্ষত্ররা। ইডেনের চিরাচরিত ঘন্টা বাজিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পিঙ্ক টেস্টের সূচনা করেছিলেন তিরাশির বিশ্বকাপজয়ী ভারত অধিনায়ক কপিল দেব। খেলা শুরুর আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে যেভাবে এই পিঙ্ক টেস্টের সূচনা করা হয়েছিল, তা দেখে আপ্লুত হয়েছিল গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। সকলে সৌরভের নেতৃত্বকে কার্যত কুর্নিশ জানিয়েছিলেন। বেহালার বীরেন রায় রোডের বাঙালি ছেলেটি সেদিন দেখিয়ে দিয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর জেদ যদি মনের মধ্যে থাকে, তাহলে গ্রেগ চাপেল কেন ভগবানের চোখরাঙানিকেও হারিয়ে দেওয়া যায়।
সৌরভের এই শরীরী ভাষা যেন তাজা রক্তের মত বয়ে চলেছিল বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে অজিঙ্কা রাহানেদের মতো তরুণ ক্রিকেটারদের শরীরেও। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও অভিভূত হয়েছিল সৌরভের নেতৃত্বে এই আয়োজন দেখে। ইডেন গার্ডেন্সকে টেস্টের আগে গোলাপি আলোর চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। শুধু ইডেন গার্ডেন্স নয়, সেদিন গোটা শহর যেন গোলাপি জ্বরে কাঁপছিল। তা সে হাওড়া ব্রিজ হোক বা ময়দানের ৬৪ তলার বহুতল, টাটা সেন্টার হোক বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, সবকিছুই যেন গোলাপি ম্যানিয়ায় মেতে উঠেছিল। আগামী দিনে অবশ্য ভারতের মাটিতে পুনরায় গোলাপি টেস্টের আয়োজন করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই সৌরভ। তবুও ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের তথা ইডেন গার্ডেন্সের মাটিতে প্রথম হওয়া এই পিঙ্ক টেস্ট আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এক বছর পর যা ভাবলে আজও গায়ে কাঁটা দেয়।