শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ‘ডালনা’ এক প্রকার নিরামিষের ব্যঞ্জন। ধোঁকার ডালনা, ছানার ডালনা, ফুলকপির ডালনা অতি জনপ্রিয় পদ। ‘সাঁতলানো’ শব্দটি থেকে ‘ডালনা’ শব্দটি এসেছে। ‘ডালনা’ শব্দের উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ ‘সন্তোলন’ থেকে থেকে। ‘সন্তোলন’ কথাটির বাংলা অর্থ ‘সাঁতলানো’। ঋতেন্দ্র নাথ ঠাকুরের মতে, ‘ঢালিভার যোগ্য তরল ব্যঞ্জন হওয়ার জন্য এর নাম ডালনা’। তবে ঠাকুমা দিদিমা দের মতে, এই পদটি ডালের মতো অথচ ডাল নয়, তাই এর নাম ডালনা।
আজ আমাদের রান্নার বিষয় ‘ছানার ডালনা’। ছানা অতি উপাদেয় একটি খাবার। বয়স্ক থেকে শুরু করে শিশুরা সকলেই এটি খেতে পারেন। যাদের দুধ সহ্য হয় না, তারা ছানা খেতেই পারেন। ভারতীয় মহাদেশে ছানা তৈরি করা শিখিয়েছে পর্তুগিজরা। প্রাচীন আমলে কোন এক সময় দুধের ছানা ছিল পরিত্যাজ্য। এটিকে ফেলে দেওয়া হতো। বৈদিক যুগে দুধ থেকে তৈরি খাবার ছিল পৌরাণিক ধারার অংশ। পর্তুগীজদের পর বাঙালিরাই ছানা থেকে একের পর এক দুগ্ধজাতীয় খাবার বানাতে শিখেছিল। বাংলায় ছানা তৈরি হয়েছিল প্রায় ৩০০ বছর আগে। তবে শুধু ছানা নয়, ছানার জল ও যথেষ্ট পুষ্টিকর। এই ছানার জলকে অনেক সময় ভাতের মাড়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়। শরীর গঠনের জন্য ছানার জল সমভাবে উপযোগী। তাই এটিকে নর্দমায় ফেলে না দিয়ে, এক চুমুক খেয়ে ফেলুন। তাতে ভালো বৈ খারাপ হবে না।
উপকরণঃ ছানা, ময়দা, নুন, আদা, আলু টুকরো করে কাটা, টমেটো বাটা, ধনে গুঁড়ো, জিরা গুঁড়ো, লঙ্কাগুঁড়ো, ধনেপাতা কুচি, গরম মশলা গুঁড়ো
প্রণালীঃ একটি পাত্রে ছানা, ময়দা সমস্ত গুঁড়ো মশলা, আদা বাটা দিয়ে ভালো করে চটকে কোপ্তার আকারে গড়ে নিতে হবে।কড়াইতে তেল গরম করে কোপ্তা গুলো ভাল করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখতে হবে। আলুর টুকরো গুলি কড়াইতে দিয়ে ভালো করে লাল লাল করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখতে হবে। এরপর কড়াইয়ে গরম তেলে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা ফোড়ন দিতে হবে। আদা বাটা, টমেটো বাটা দিয়ে ভাল করে কষে নিতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে গুঁড়ো মশলা যথা ধনে, জিরে, লংকা ভালো করে মিশিয়ে কষতে হবে। তারপরে স্বাদমতো নুন, সামান্য চিনি দিয়ে টুকরো করে ভেজে রাখা আলু এবং কোপ্তা গুলি দিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ঢাকা দিতে হবে। একটু ফুটে উঠলে গরম মশলা, ধনেপাতা কুচি দিয়ে গরম গরম ভাতের সঙ্গে বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন ‘ছানার ডালনা’।