নয়াদিল্লি: দলের অন্তবর্তীকালীন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধির জায়গায় দলের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচন করার দাবি জোরদার হয়েছে। গান্ধি পরিবার ঘনিষ্ঠ এবং দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতারা চিঠি লিখে রীতিমতো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। কংগ্রেসের অন্দরের এই পরিস্থিতিতে মুচকি হাসছে বিজেপি। শনিবার দলের সার্বিক পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করতে ১০ জনপথে সনিয়া গান্ধির বাড়িতে বৈঠকে বসেন সনিয়া গান্ধি, রাহুল গান্ধি, প্রিয়াঙ্কা গান্ধি থেকে শুরু করে গুলাম নবি আজাদ, হরিশ রাওয়াত, পৃথ্বীরাজ চৌহ্বানের সহ ২৩ জন নেতা। এদিনের বৈঠকে নির্দিষ্ট কোনও সমাধান বের হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এরপর আরও বৈঠক হবে এবং ধীরে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কোভিড পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির তিরে লক্ষ্য রেখে আরও বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। এছাড়াও শিমলা এবং পঞ্চমারি ধাঁচের ‘চিন্তন শিবির’ করে সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আরও আলোচনা করবে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে এআইসিসি অর্থাৎ অখিল ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন হবে। তার আগেই দলের স্থায়ী সভাপতি পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলতে চায় কংগ্রেস। এদিনের বৈঠকে সনিয়া গান্ধি এবং রাহুল গান্ধি ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধি ছাড়াও উপস্থিত নেতারাও নিজেদের মতামত রাখেন। সবার মতামত রেকর্ড করা হয়েছে। বৈঠক শেষে কংগ্রেস নেতা তথা ইউপিএ সরকারের আমলের মন্ত্রী পবন বনশল বলেন, ‘খুবই গঠনমূলক বৈঠক হয়েছে, উপস্থিত সকলেই তাঁদের মতামত দিয়েছেন এবং সেগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। খুবই ভাল হয়েছে এদিনের বৈঠক এবং কংগ্রেস তার আদর্শের জন্য লড়াইয়ে প্রস্তুত।’ সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে রাহুল গান্ধিকে কংগ্রেস স্থায়ী সভাপতি করার পক্ষে সওয়াল করেন অনেক নেতা, এবং তাতে কোনও বিরোধিতা আসেনি। পাশাপাশি রাহুল গান্ধি স্বয়ং জানিয়েছেন, ‘দল যে দায়িত্ব দেবে, তা পালন করতে প্রস্তুত।’ দলের নেতা পবন বনশল বলেন, ‘কেউই রাহুল গান্ধিকে নিয়ে আপত্তি তোলেননি। সনিয়া গান্ধিও বলেছেন, আমরা সবাই মিলে একটা পরিবারের মতো এবং দলকে মজবুত করতে আমাদের একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও জানান, ‘রাহুল গান্ধিকে নিয়ে কারও কোনও সমস্যা নেই। এটা শুধু আজকের প্রশ্ন নয়, সবাই বলেছে যে, আমরা রাহুল গান্ধির নেতৃত্ব চাই এবং যাঁরা অ্যাজেন্ডা থেকে সরাতে চাইছে, তাদের ফাঁদে আমাদের পড়া চলবে না।’
২৩ জন নেতার মধ্যে বিদ্রোহ করে যে ৬ জন কংগ্রেস নেতা চিঠি লিখেছিলেন, তাঁরাও উপস্থিত ছিলেন এদিনের বৈঠকে। সেরকমই এক নেতা পৃথ্বীরাজ চৌহান জানান, দলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সামনে যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করতে খুব দ্রুতই চিন্তন শিবির করা হবে। পাশাপাশি এদিনের বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে এবং আগামিতে আরও এই ধরণের বৈঠক করা হবে বলেও সংবাদমাধ্যমে জানান পৃথ্বীরাজ চৌহ্বান। তাঁর কথায়, পঞ্চমারি এবং শিমলার ধাঁচে ‘চিন্তন শিবির’ করা হবে। তিনি জানান, সেই চিন্তন শিবিরে দলের নেতারা সামনাসামনি বসবেন এবং দলকে আরও মজবুত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব এবং মতামত দেবেন। তিনি বলেন, “চিন্তন শিবিরে’ সবকিছু নিয়েই আলোচনা হবে। এখন থেকে নিয়মিতভাবে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকও হবে। করোনা ভাইরাসের জন্য কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সামনে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে বাংলা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে। তার আগে দলের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচন করে ভোটে লড়ার রূপরেখা তৈরি করতে হবে শতাব্দী প্রাচীন দলটিকে। ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোরদার নামার আগে দলকে মজবুত করে যুদ্ধে নাামার জন্য প্রস্তুত করে তোলাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ ২৪ আকবর রোডের।