বলিউডের প্রকৃত এন্টারটেইনার হলেন বলিউডের আইটেম ডান্সার রাখি সাওয়ান্ত(Rakhi sawant)। রাখি বরাবর বিতর্কের শীর্ষে থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু একজন সেলিব্রিটি হিসাবে নিজের করোনা-সচেতনতার দায়িত্ব ভোলেননি রাখি। কিন্তু রাখি মানেই এন্টারটেনমেন্ট। ফলে রাখি নাটুকে ভাবেই দিলেন করোনা-সচেতনতার বার্তা। সম্প্রতি রাখিকে দেখা গেল নীল রঙের পিপিই কিট, মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে সব্জি বাজার করতে। একবার শুধু সব্জিবিক্রেতা দাম বলার জন্য মুখ থেকে মাস্ক নামিয়েছিলেন। রাখি মুহূর্তের মধ্যেই কড়া ভাবে তাঁকে বললেন মাস্ক পরে থাকতে। রীতিমত মজা করে দরদাম করে সব্জি কিনলেন রাখি। শেষ অবধি সব্জিওয়ালা তাঁকে বলতে বাধ্য হলেন, রাখি নিজের ইচ্ছা মতো দাম দিতে পারেন। তিনশো টাকার সব্জি কিনে সব্জিওয়ালার জয়-জয়কারও করলেন রাখি।
অনিচ্ছাকৃতভাবেও বিতর্কের শিকার হয়েছেন রাখি। কয়েক বছর আগে গায়ক মিকা সিং ( Mika singh)-এর জন্মদিনের পার্টিতে মিকা রাখিকে মত্ত অবস্থায় অযাচিত ভাবে চুম্বন করেন। রাখি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি পোস্ট করে প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি মিকার মুখোমুখি হয়ে তিনি মিকাকে মানহানির মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন পরে মিকা মিডিয়ার সামনে এসে রাখির কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু আজীবন রাখিকে ‘বিতর্ক শিরোমণি’ করে তোলা মিডিয়া বা মানুষ কোনোদিন জানতে চাননি, কেন রাখি এরকম! কেন রাখির ব্যক্তিত্ব এত বিতর্কিত! এর মূলে রয়েছে রাখির অস্থির শৈশব। চলতি বছরে ‘বিগ বস 14′-এ এসে রাখি বলেছিলেন, তাঁর শৈশবের কথা। রাখির প্রকৃত নাম নিরু। তাঁর বাবা তাঁর মা-কে ছেড়ে চলে যান। এরপর রাখির মা একজন পুলিশ কনস্টেবলকে বিয়ে করেন। রাখির সৎ বাবা মেয়েদের স্বাধীনতা পছন্দ করতেন না। কিন্তু অভাবের সংসারের স্বার্থে রাখির মা-কে আয়ার কাজ করতে বাধ্য করেন তিনি। উপরন্তু রাখির মামাও বাড়ির মহিলাদের দমিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। বাড়ির মেয়েরা অসূর্যম্পশ্যা ছিলেন। তাঁদের রূপচর্চা করা বারণ ছিল। পুরুষদের কথাই ছিল বাড়ির সিদ্ধান্ত। রাখি নাচ করতে ভালোবাসতেন। এই কারণে তাঁর মামা তাঁকে নৃশংসভাবে প্রহার করতেন। রাখির শরীরে এখনও রয়েছে সেই স্টিচের দাগ যা তাঁর মামার প্রহারের ফলে আঘাতের নিরাময়ের জন্য হয়েছিল। রাখির মামার বিরুদ্ধে রাখির মায়ের কিছু বলার অধিকার ছিল না।
একসময় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন রাখি। কিন্তু পরে তাঁর মা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ততদিনে রুহি সাওয়ান্ত (Ruhi sawant) নামে রাখি ‘অগ্নিচক্র’ নামে একটি ফিল্মে অভিনয় করে ফেলেছেন। হইচই ফেলে দিয়েছেন ‘পরদেশীয়াঁ’ নেচে। বাড়ি ফিরে রাখি ঘোষণা করলেন মা ও ভাই-বোনদের নিয়ে মুম্বইয়ের বুকে আলাদা বাড়ি ভাড়া করে থাকার কথা। শুরু হয় রাখি সাওয়ান্ত হয়ে ওঠার যাত্রা। সেই যাত্রা বিতর্কের কাঁটায় ভরা। সব বিতর্ক পেরিয়ে রাখি হয়ে উঠলেন ‘ড্রামা কুইন’। বিগ বসের ঘরে প্রতিযোগী রাহুল বৈদ্য (Rahul vaidya)-কে রাখি বলেছেন তাঁর নির্যাতিত শৈশবের কথা। এমনকি বিগ বসের অপর প্রতিযোগী রাহুল মহাজন (Rahul Mahajan) কিছুদিন আগে বিগ বসের ঘরে রাখির শৈশবের কথা বলেছেন। ‘বিগ বস 14’-এর সঞ্চালক সলমন খান (Salman Khan) বলেছেন, রাখি জীবনে অনেক কঠিন রাস্তা পেরিয়ে এসেছেন। রাখি বলেছেন, তাঁর মামা এবং বাবা এখন জীবিত নেই। এমনকি রাখি বলেছেন, তিনি বলিউডের আইটেম ডান্সার হওয়ার কারণে তাঁকে অনেকেই চরিত্রহীন বলেন। কিন্তু রাখি মনে করেন না, তিনি কোনো ভুল কাজ করছেন।
রাখির জীবনে বহু পুরুষ এসেছেন, আবার চলেও গেছেন। অভিষেক শ্রীবাস্তব (Avishek sribastab), দীপক কালাল (Dipak kalal), ইলেশ পেরুজানওয়ালা (Eelesh peruzanwala) প্রত্যেকেই রাখিকে ভেবেছিলেন নিজের সম্পত্তি। খুব অল্প বয়স থেকে কাজ করা রাখি বরাবর চেয়েছেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করতে। কিন্তু বারবার ভেঙে গেছে তাঁর স্বপ্ন।
গত বছর রাখি কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে জানিয়েছিলেন তাঁর বিয়ে হয়েছে এনআরআই রীতেশ পান্ডে (Ritesh pandey)-এর সাথে। রীতেশ ইউকে-এর বাসিন্দা। হিন্দু ও খ্রিস্টান দুই রীতি মেনে বিয়ে হয়েছিল রাখির। এরপর রাখি করওয়া চৌথের ছবি শেয়ার করলেও এখনও অবধি রীতেশের কোনো ছবি শেয়ার করেননি। ফলে তাঁর বিয়ে নিয়ে তিনি বারবার প্রশ্ন উঠেছে। বিগ বসের ঘরে প্রতিযোগী আলি গোনি(Ali gony)- ও রাখিকে রীতেশ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। কিন্তু রাখি আলির প্রশ্ন এড়িয়ে যান। রাখি জানিয়েছেন, রীতেশ খুব লাজুক, তিনি ক্যামেরার সামনে আসতে চান না।
তবে বিগ বসের ঘরেই একসময় তিতিবিরক্ত হয়ে রাখি নিজেও বলেছেন, তাঁর পক্ষে তাঁর বিয়ে নিয়ে বারবার উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তিনি চান রীতেশ অন্তত একবার ক্যামেরার সামনে আসুন। সুদূর ইউকে থেকে একটি ইন্টারভিউতে রীতেশ জানিয়েছেন, এই বছর করোনা অতিমারীর কারণে তাঁর সঙ্গে রাখির দেখা হয়নি। কিন্তু রাখির কথামতো বিগ বসের ঘরে এসে তাঁদের সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিতে রাজি ছিলেন রীতেশ। তবে শেষ অবধি তা হয়ে ওঠেনি।
একইসঙ্গে রীতেশ বিগ বসের প্রতিযোগী নিকি তম্বোলী(Niki Tamboli)- র সমালোচনা করেছেন। বিগ বসের ঘরে থাকাকালীন নিকি বলেন রাখি নিজের মান-ইজ্জত খুইয়ে বিগ বসের ঘরে এসেছেন। রীতেশ নিকির এই কথার বিরোধিতা করে বলেন, রাখি নিকির থেকে অনেক সিনিয়র। নিকির উচিত, রাখিকে সম্মান দেওয়া। একজন নারী হয়ে নিকির উচিত নয় আরেকজন নারীকে অপমান করা। রীতেশ বলেন, তিনি চাইলে নিকির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করতে পারেন। কিন্তু ‘বিগ বস’ একটি গেম শো এবং তিনি এই গেম শো-টিকে সম্মান করেন। এই কারণে রীতেশ এখনও পর্যন্ত নিকির বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। রীতেশ জানিয়েছেন, রাখির মতো নারীকে তাঁর স্ত্রী হিসাবে পেয়ে তিনি যথেষ্ট খুশি। রীতেশ চেয়েছিলেন রাখি ‘বিগ বস 14’ জিতুন। কিন্তু রাখি জানতেন, তিনি ‘বিগ বস 14′ জিতবেন না। ফলে চৌদ্দ লাখ টাকা নিয়ে গ্র্যান্ড ফিনালের দিন বিগ বসের ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন রাখি। টাকাটা রাখির খুব প্রয়োজন ছিল। কারণ রাখির মা জয়া (Jaya bheda sawant) ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেই মুহূর্তে রাখির মায়ের কেমোথেরাপি শুরু হয়েছিল। রাখির পাশে দাঁড়িয়েছেন সলমন খান, সোহেল খান, কাশ্মীরা শাহ (kashmira shah), সম্ভাবনা শেঠ (sambhabna seth)-রা। রীতেশ জানিয়েছেন, তিনি ও রাখি খুব তাড়াতাড়ি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
অপরদিকে রাখি তাঁর শৈশব থেকে বর্তমানের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। শৈশবের সেই ছোট্ট মেয়েটি হয়তো কোনোদিন জানত না, তার জীবনটা এত চড়াই-উতরাই-তে পরিপূর্ণ হবে! আজও আমাদের সমাজ একটি মেয়েকে দোষের ভাগী করে। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখে না, মেয়েটির দোষ করার কারণ। কিন্তু তবু রাখির মতো মেয়েরা এগিয়ে যায় নিজের পথে। শোনা যাচ্ছে, বলিউডে তৈরী হবে রাখির বায়োপিক। যদি তা তৈরী হয়, তা হয়তো অনেকেই দেখবেন এবং দেখার পর হবে আরও সমালোচনা। হোক গে, লোকে বলবে, রাখি চরিত্রহীন, দেহোপজীবিনী, বলুক গে, মন রক্তাক্ত করে নিজের ভাগ্যরেখা নিজেই লিখে নেবেন ‘ড্রামা কুইন’ রাখি সাওয়ান্ত এবং ঘরের কোণে লুকিয়ে ‘পরদেশীয়াঁ’ নাচতে নাচতে আরেকটি মেয়ে মনে মনে ভাববে, “কুছ তো লোগ কহেঙ্গে, লোগোঁ কা কাম হ্যায় ক্যাহেনা”।
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রাখি জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের অপারেশন হয়ে গিয়েছে। এমনকি রাখির মায়ের শরীর থেকে বার করা বড় টিউমারটির ছবি শেয়ার করেছেন রাখি। রাখির মায়ের অপারেশন করেছেন ডঃ সঞ্জয় শর্মা (sanjay sharma)। রাখি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁর সাথে ছবি শেয়ার করেছেন। সলমন খানের মাধ্যমে ডঃ সঞ্জয় শর্মার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রাখির। এদিন রাখিকে ডাক্তার এসে যখন বলেন, রাখির মায়ের অপারেশন সফল হয়েছে, রাখি নিজেকে সামলাতে পারেননি। ‘ড্রামা কুইন’ রাখি সাওয়ান্তের ইমেজ ভেঙে বেরিয়ে আসেন জয়া সাওয়ান্ত-এর মেয়ে নিরু। নিজেকে সামলাতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাখি। কাঁদতে কাঁদতে বারবার সলমনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন রাখি। তিনি বলেন, পরমেশ্বর যীশুর পাঠানো দেবদূত সলমন। তিনি ছাড়া এই অপারেশন সম্ভব হত না। চিকিৎসক, হসপিটাল ও রাখির মায়ের অপারেশনের যাবতীয় খরচ বহন করেছেন সলমন। পরে পাপারাৎজিদের মুখোমুখি হয়ে একটি বিবৃতিতে রাখি সলমন ও সোহেলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন জয়া। তবে হসপিটাল থেকে তিনি এখনও ছাড়া পাননি। সম্প্রতি একটি ভিডিওয় দেখা গেছে, জয়াকে ধীরে ধীরে হাঁটাচ্ছেন ডাক্তার। অনায়াসেই বলা যায়, মা-মেয়ে রাখি ও জয়া অগ্নিপথ পার করে প্রমাণ করে দিলেন নারীশক্তি সর্বত্র জয়ী।