ম্যাগাজিন

রানাঘাটের রানু: এক বিস্ময়, এক ক্ষণ জন্মা

Advertisement

“রানাঘাটের লতা”, মোটামুটি এই নামেই উনি পরিচিত আপামোর জনতার কাছে। মাঝে মধ্যেই যাদের রানাঘাট স্টেশনে আনাগোনা, তারা তাঁর সুরসমৃদ্ধ কণ্ঠস্বর শুনে থাকবেন। কিন্তু কেউ কোনদিনও কল্পনাও করতে পেরেছে যে রানাঘাটের ভবঘুরে রানু, যার চালচুলোর ঠিক নেই, একদিন মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্লেব্যাক সিঙ্গার রূপে এক বিরল স্বীকৃতি পাবেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর আসবে,”না”। কিন্তু কল্পনা বা প্রত্যাশা যাই বলুক না কেন, এমনটাই হয়েছে। আজ তিনি খ্যাতির চূড়ায়। নাম, যশ, প্রতিপত্তি, কি নেই আজ! এক পথের ভিখারী থেকে রাজরাজেশ্বরী! এক লহমায় ভাগ্যের পরিবর্তন। জ্যোতিষ মন্ডলীর মতে, জন্ম ছকে “গুরু শনির” শুভ যোগ যদি পঞ্চমভাবে উপস্হিত থাকে, তাহলে এই প্রকার উৎকর্ষতা দেখা যায়।

রানু মন্ডলের জন্ম ৫ই নভেম্বর ১৯৬০। প্রায় ষাট বছর বয়স তাঁর, অথচ কণ্ঠস্বর এক অল্প বয়সী মেয়ের সম! এ এক বিস্ময়। বিনা রেওয়াজে, বিনা কোন নিয়মমাফিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই তিনি আজ সকলের সেরা! সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র এক নাম: রানু মন্ডল।

তবে সেই চ্যাটার্জি বাবুকেও অশেষ ধন্যবাদ জানাই যে রানুকে সকলকের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রথমবার রেকর্ডিংয়ের সময়ও উনি রানুর সাথে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন। তবে রানুর প্রথম প্রিয় গান লাতাজির, “এক প্যারকা নাগমা হে”।

বর্তমানে বেশ কিছু গান রেকর্ডিংও করেছেন, মুম্বাইয়ের বিখ্যাত সুরকার হিমেশ রেশমিয়ার সুরে। ফিল্ম “হ্যাপি হারডি এন্ড হীর” এর জন্য গাওয়া “তেরি মেরি, তেরি মেরি” গানটা ব্যাপক পছন্দ করেছে দর্শক মহল। কিন্তু কথায় আছে, ‘যার নাম আছে, তার বদনামও আছে’, তাই রানুকেও নানা বিতর্কে জড়ানো হয়।

নানা মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তার ক্যারিয়ার টাকে নষ্ট করে দেবারও নানা ঘৃণ্য প্রয়াস করা হয়। তবে যেখানে প্রতিভাই শেষ কথা বলে, সেখানে ধীরে ধীরে এক সকল প্রচেষ্টা নিষ্ফল হয়ে থাকে! যেমন করতে ভালোবাসেন গান, তেমনি খেতে ভালবাসেন নন ভেজের যে কোনো আইটেম!

প্রিয় শিল্পী, মোঃ রফি, মুখেশ ও লতা মঙ্গেশকর। এক মা, এক বিধবা দরিদ্র মহিলা, এক অবহেলিত নারী, যার সম্বল বলে কিছু নেই। নিজের সন্তানও যাকে ভাগ্যের আশ্রয় ফেলে রীতিমত পালিয়ে গিয়েছিল, দারিদ্রতার ভয়ে, আজ সেই মেয়ে মায়ের কাছে! সময় বড় বলবান। এই সময় আপনজন থেকে দূরে করে দেয়, আবার আপনজনের সাথে মিলিয়েও দেয়।

রানুর জীবন এক দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে। তিনি যেন আরো এগিয়ে  যান, এই একমাত্র অভিলাষ! রানুদি- তুমি ভালো থেকো, সুখে থেকো আর কোনোদিন গান থামিও না, এই গান, এই সংগীতই তোমায় শান্তি দেবে, ভুলিয়ে দেবে সকল গ্লানি, সকল পার্থিব কষ্ট!!

Written By – কুণাল রায়

Related Articles

Back to top button