ইয়ো ইয়ো হানি সিং এই দেশে ব়্যাপ সঙ্গীতের রাস্তা খোলার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছেন। একটা সময় ছিল যখন প্রতিটি ছবিতে একই ধরনের গান থাকত। ৯০ দশকের সময়ে সেটা অক্ষয় কুমারের ছবি হোক, সালমান খানের, শাহরুখ খানের বা অজয় দেবগনের, গান থাকতো ওই একই ধাঁচের। তাই সেই সময়ে ভারতের মানুষ পরিবর্তন চাইছিল। সে গানের দুনিয়ায় হোক আর সিনেমার গল্পের দুনিয়ায়, পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিলই। তাই সেই সময় হানি সিং যখন নিজের নতুন ধরনের সংগীত নিয়ে হাজির হলেন, ভারতের মানুষ তাকে গ্রহণ করে নিলেন সাদরে। এর আগে ভারতের র্যাপ সংগীতের জগতে বাবা সেহেগাল থাকলেও, ইয়ো ইয়ো হানি সিং বলতে গেলে ভারতের সবথেকে বড় ব়্যাপ স্টার। সেই সময়ে, ইয়ো ইয়ো যে গানই করুক না কেন, তা চার্টবাস্টার হয়ে যাচ্ছিল, তিনি পাচ্ছিলেন ব্যাপক সাফল্য। আর এই সাফল্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ছিলেন সুপারস্টার শাহরুখ খানও। শাহরুখ এবং হানি সিং প্রথমবার চেন্নাই এক্সপ্রেসে একসাথে কাজ করেছেন। আর যে গানটি তারা দুজনে একসাথে করেছিলেন, সেটা ছিল লুঙ্গি ডান্স। এই গানের সাফল্য নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে, আপনি কি জানেন, প্রথমে কিন্তু এই গান সিলেক্টেড ছিল না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইয়ো ইয়ো হানি সিং জানিয়েছেন, এই গানটি প্রথমে পছন্দ করেননি শাহরুখ। তার পরেও এই গানটি সিনেমায় গ্রহণ করা হয় এবং হয়ে যায় সুপারহিট। চলুন এই বিখ্যাত গানের ব্যাপারেই আজ আমরা আপনাকে জানাবো বিস্তারে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাত্কারে, ইয়ো ইয়ো হানি সিং ‘লুঙ্গি ডান্স’ তৈরির গল্প বলেছিলেন। রাজ শামানীর সাথে কথোপকথনের সময় তিনি বলেন- “‘ইংলিশ বিট’ শোনার পর শাহরুখ খান আমাকে এই ধরনের একটি গান করতে বলেছিলেন। আমি তাকে বললাম, ‘না, তুমি আমাকে তোমার ফিল্মের ভাইব বলো।’ তিন ঘণ্টা ধরে তিনি তাঁর ছবির গল্প শোনালেন। আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি তার সিনেমার জন্য নতুন কিছু করব। আর ফিরে আসবে তখনই যখন সেই গান সুপারহিট হবে। তার পর আমি ‘লুঙ্গি ডান্স’ তৈরি করলাম। তবে, তারা প্রথম দেখায় এটা পছন্দ করেননি। তবে, আমি এই গান নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম। আমি বললাম, ‘তুমি চাইলে ঠিক আছে। না চাইলে সিঙ্গেল হিসেবে রিলিজ করব।'”
অবশেষে শাহরুখ নিজের ছবিতে সেই গানই রাখলেন। এই ছবির গল্প চেন্নাইতে সেট করা হয়েছিল, যেখানে রজনীকান্তকে সবচেয়ে বড় সুপারস্টার বলে মনে করা হয়। এই গানের সাহায্যে রজনীকে ট্রিবিউট দিতে চেয়েছিলেন শাহরুখ। যখন ছবি মুক্তির পর গানটি ব্লকবাস্টার হয়ে যায়, শাহরুখ নিজে এসে হানি সিংকে অভিবাদন জানান। ‘লুঙ্গি ডান্স’ ভারতের মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, তাই শাহরুখ নিজেও একটি সাক্ষাৎকারে এই গানের ভূয়সী প্রশংসাও করেন।
প্রসঙ্গত, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ ছবিটির পরিচালনা করেছেন রোহিত শেঠি। এই ছবিটি শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ আয় করা ছবি হয়ে ওঠে একটা সময়ে। ৩৩ কোটির ওপেনিং পাওয়া এই ছবির লাইফটাইম কালেকশন ছিল ২২৭ কোটি। তবে এর পরেই শাহরুখের ক্যারিয়ারের গ্রাফ নিচের দিকে নামতে শুরু করে। একের পর এক ছবি ফ্লপ হওয়ায় একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় শাহরুখের। তবে আবারো তিনি ফেরেন। ফেরেন একেবারে কিং খানের মতো। ছবির নাম পাঠান। তবে এবারে কোনো রোম্যান্টিক হিরো নয়, একেবারে ডেডলি অ্যাকশন হিরোর ভূমিকায় আমরা এই ছবিতে দেখি শাহরুখ খানকে। এই ছবিটি শাহরুখের জীবনে, থুড়ি হয়তো গোটা দেশেই এখন সবথেকে বেশি আয় করা সিনেমা হয়ে উঠেছে।