অফবিটনিউজ

এবারের আগেও দুর্ভিক্ষ-দাঙ্গার কারণে দুবার বন্ধ হয়েছিল ঐতিহ্যশালী পৌষমেলা

Advertisement

চলতি বছরের পৌষ মেলা নিয়ে জল্পনা ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। মেলা হবে কি হবে না এই প্রশ্ন ঘুরছিল সকলের মনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতিমারী সেই আশায় একেবারে জল ঢেলে বন্ধ হল এই বছরের পৌষ মেলা।

লাল মাটির দেশ শান্তিনিকেতনের এই মেলা শুধুমাত্র বীরভূমবাসীদের নয়। এটি সব বাঙালিই অত্যন্ত প্রিয় ও কাছের। বাংলা ৭ থেকে ১০ পৌষ  অর্থাৎ ২৩ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পৌষ মেলা চলে। সাংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল এই মেলার সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে বাঙালিদের আবেগ। তেমনই কেনা-বেচার মাধ্যমে রয়েছে বহু মানুষের কিছুটা আর্থিক উন্নতির অবকাশ।

শুধু বাউল নয়, পৌষ মেলা  হল পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক মেলবন্ধন। ভিন রাজ্যের শিল্পীরাও সারাবছর মুখিয়ে থাকেন এখানে তাঁদের শিল্প প্রদর্শন ও কিছু অর্থ উপার্জনের আশায়। ১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ অর্থাৎ ১৮৪৩  সালের ২১ ডিসেম্বর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কুড়ি জন সহব্রতী সহ রামচন্দ্র বিদ্যাবাগিশের থেকে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন। তার পর থেকে মূলত বিশেষ এই দিনটিকে পৌষ উৎসব হিসেবে পালন করা হয় শান্তিনিকেতনে।

এরপর ধীরে ধীরে তৈরী হয় শান্তিনিকেতনে ট্রাস্ট এবং ১৮৬৩ সালে রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকে ভূবনডাঙার  প্রান্তরে প্রায় কুড়ি বিঘা জমি নেওয়ার পর মহর্ষি শান্তিনিকেতন গৃহ এবং তার কাছাকাছি ব্রাহ্ম মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। যা বর্তমানে উপাসনাগৃহ বা কাঁচ মন্দির নামেও পরিচিত। এই ব্রাহ্ম মন্দির ১৮৯১ সালের ৭ পৌষ উদ্বোধন করা হয়। এরপর ১৮৯৪ সাল থেকে মহর্ষির ইচ্ছায় মন্দির সংলগ্ন মাঠে পৌষ মেলা শুরু হয়। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

১৮৯৪ সাল থেকেই প্রতি বছর পালন হয়ে আসছে পৌষ মেলা। মাঝে ১৯৪৩ এবং ১৯৪৬ সালে মন্বন্তর ও সাম্প্রদায়িক হানাহানির জন্যে পৌষ মেলা স্থগিত রাখা হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের উপাচার্য এবং আধিকারিকদের একাংশ ঘেরাও থাকার কারণে ছাতিম তলায় পৌষের উপাসনা অনুষ্ঠিত বিঘ্নিত হয়েছিল। এছাড়া পৌষ মেলা এত বছরে কখনও বন্ধ হয়নি। ১৯০১ সালের ৭ পৌষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে ‘ব্রহ্ম বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বড় ছেলে সহ মোট 5 জন ছাত্র ও  সমসংখ্যক শিক্ষক নিয়ে এই বিদ্যালয় শুরু হয়। পরে ১৯২১ সালের ৭ পৌষই প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বভারতী। ১৯৫১ সাল থেকে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়।

বলাই বাহুল্য আগের সেই সাবেকি মেলা এখন হয়েছে অনেকটাই কর্পোরেট। গ্রামীন মেলার জায়গায় জুড়েছে অনেকটাই ব্যবসা। তবে বলা চলে পৌষ মেলা শুধুমাত্র একটি মেলা নয় এটা এক মিলল ক্ষেত্র। ২০২০ সালে পৌষ মেলার ১২৬ বছর পূর্ণ করছে।তবে এই বছর মেলা হচ্ছে না।শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার্থে হচ্ছে পৌষ উৎসব। ৬ পৌষ রাতে ও ৭ পৌষ ভোরে বৈতালিকও হয়েছে একেবারে কেটেছেঁটে।

Related Articles

Back to top button