বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার ফের অবনতি হতে শুরু করেছে। তাঁর অন্ত্রে আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। ফলে তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। তাঁর শরীরে প্লেটলেটের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সৌমিত্রবাবু শরীরে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা হয়েছে। এছাড়া তাঁকে গতকাল 4 ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ ক্রমশ চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। সৌমিত্রবাবুর কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর ইউরিন আউটপুট রেস্টোর করার জন্য চেষ্টা করছেন নেফ্রোলজিস্টদের একটি টিম। গতকাল সৌমিত্রবাবুর তৃতীয় ডায়ালিসিস সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এখনও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। সৌমিত্রবাবুর আচ্ছন্নভাব অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে কিছুটা কাটলেও বেশি দিন উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যাবে না, বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স 85 বছর। এই বয়সের ব্যক্তিদের পক্ষে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড যথেষ্ট ক্ষতিকর হতে পারে। কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্য রক্তদানের আবেদন জানিয়েছেন আর্টিস্ট ফোরামের সদস্যরা।
গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 থেকে সিওপিডির সমস্যা ও করোনা সংক্রমণের কারণে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এছাড়া সৌমিত্রবাবুর করোনা এনসেফ্যালাইটিস দেখা দেয়। ফলে তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা শুরু হয়। সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়েছে । সংক্রমণ শুরু হয়েছে তাঁর মূত্রথলিতেও। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপি করার পরেও তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। তার সাথেই বাড়ে তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান বর্ষীয়ান অভিনেতা। তাঁকে বাইপ্যাপ ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ অস্বাভাবিক হয়ে যায়। তাঁর হার্টরেট অনিয়মিত হয়ে যায়। এইসময় তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসকরা সৌমিত্রবাবুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা শুরু করেন। অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে গিয়েছিল ও তিনি সবাইকে চিনতে পারছিলেন। তবে তিনি বিছানায় উঠে বসতে পারছিলেন না। সৌমিত্রবাবু কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। ফলে তাঁকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছিল। তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি। সৌমিত্রবাবুর শরীর দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তবে তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। এমনকি তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছিল। ফলে তাঁর বাইপ্যাপ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলও ক্রমশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। তাঁর মিউজিক থেরাপি চলছিল। তাঁকে তাঁর পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত ও তাঁর অভিনীত ফিল্মের গান শোনানো হচ্ছিল।
কিন্তু সৌমিত্রবাবুর বয়সের পক্ষে স্টেরয়েড ক্ষতিকর হতে পারে। এই কারণে চিকিৎসকরা স্টেরয়েডের ডোজ কমিয়ে দেন। ফলে সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক সমস্যা জটিলতর হয়ে ওঠে। তিনি ক্রমশ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। সৌমিত্রবাবুর জন্য গঠিত মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া শুরু করেন অপরদিকে সৌমিত্রবাবুর দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায়। তাঁর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ফলে তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সংক্রমণের কারণে তাঁর প্লেটলেট কমে যায়। তাঁর শরীরে ফের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটে। ফলে তাঁকে গত সোমবার বিকাল 3 টে নাগাদ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। প্রথমে একশো শতাংশ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হলেও সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থা সামান্য স্থিতিশীল হলে তা কমিয়ে পঞ্চাশ শতাংশ করা হয়। তবে চিকিৎসকদের উদ্বেগ বাড়িয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার শুরু হয়েছে। সৌমিত্রবাবুর পরিবার এদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের কাউন্সেলিং করা হয়েছে। অসুস্থ সৌমিত্রবাবুকে জীবনদায়ী চিকিৎসায় রাখাকালীন অনৈতিক ভাবে তাঁর কিছু ছবি সাইবার দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন তাঁর পরিবার ও ঘনিষ্ঠ কিছু আত্মীয়। সৌমিত্রবাবুর কন্যা পৌলমী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন।